Thank you for trying Sticky AMP!!

নিশা দেশাইয়ের তাগিদ

যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল ঢাকা ত্যাগের আগে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট সমাধানে সরকার ও বিরোধী দলকে অবিলম্বে আলোচনায় বসার তাগিদ দিয়েছেন। দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি মেহমানদের কাছ থেকে এ ধরনের তাগিদ জাতির জন্য গৌরবজনক না হলেও আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব তা-ই সাদরে বরণ করে নেন, যদিও নিজেদের সুবিধামতো। ক্ষমতায় থাকতে যে আহ্বান তাঁদের জন্য অসূয়া বলে বিবেচিত, বিরোধী দলে থাকতে সেটাই মধুর বলে প্রতীয়মান হয়।
নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের পরিপ্রেক্ষিতে নিশা দেশাই বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায়। প্রশ্ন হলো, সেই বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনটি যে বিরোধী দলকে বাদ দিয়ে (বিগত নির্বাচনেও যারা ৩৬ থেকে ৩৭ শতাংশ ভোট পেয়েছে) সম্ভব নয়, তা ক্ষমতাসীনদের মনে রাখতে হবে। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ এবং সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরির যে দাবি বিরোধী দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সেটি নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারেরই। নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাবে সমঝোতার যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল, প্রধান বিরোধী দলকে বাদ দিয়ে সেই প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় তা অনেকটাই মিলিয়ে যেতে বসেছে। তবে সরকারি দলের নেতারা বলেছেন, এখনো বিএনপির জন্য দরজা খোলা আছে। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগে এ ব্যাপারে দুই পক্ষ আলোচনায় বসলে সমস্যার সমাধান কঠিন নয় বলেই মনে করি।
গায়ের জোরে নির্বাচন করা কিংবা নির্বাচন ঠেকানো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ হতে পারে না। রাজনৈতিক নেতৃত্বকে মনে রাখতে হবে, তারা না চাইলে তৃতীয় কোনো পক্ষ গণতন্ত্র উদ্ধার করে দেবে না। একটি দেশে তখনই অগণতান্ত্রিক শক্তির অভ্যুদয় ঘটে, যখন রাজনৈতিক নেতৃত্ব সমঝোতা ও সহিষ্ণুতার পরিবর্তে তীব্র হিংসা ও হানাহানিতে লিপ্ত হয়। এক-এগারোর জন্য দুই দলের নেতা-নেত্রীরা অদৃশ্য শক্তিকে দায়ী করলেও অতীত থেকে তাঁরা যে কোনো শিক্ষা নেননি, বর্তমান পরিস্থিতিই এর প্রমাণ।
বিরোধী দলের অনাস্থা ও অবিশ্বাস দূর করতে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাব দিলেও নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ লক্ষ করা যায়নি। বরং বিরোধী দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো দুই দলের মধ্যকার সন্দেহ ও অবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আটক নেতাদের ছেড়ে দিয়েই সরকারকে সদিচ্ছার প্রমাণ দিতে হবে।
অন্যদিকে নিশা দেশাই গণতান্ত্রিক রীতিনীতি সম্পর্কে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা থেকে বিরোধী দলেরও শিক্ষণীয় আছে। তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে সহিংসতাকে যুক্তরাষ্ট্র কোনোভাবেই সমর্থন করে না। অতএব, রাজপথে শক্তিপরীক্ষার মহড়া না দিয়ে উভয়েরই উচিত আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করা।