Thank you for trying Sticky AMP!!

পার্কিং-বাণিজ্য

এ দেশে বাস করা সত্যিই এখন খুব কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই তো সেদিন চিকিৎসক দেখাতে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে গেছি। হাসপাতালের ভূগর্ভস্থ পার্কিং এরিয়ায় জায়গা না থাকায় অন্য অনেকের মতো হাসপাতালটির দুই উইংয়ের মধ্যবর্তী চওড়া রাস্তার এক পাশে ফুটপাত ঘেঁষে পার্ক করা আরও গাড়ির পেছনে পার্ক করে গাড়িটা চালকের জিম্মায় রেখে ভেতরে ঢুকলাম। খানিকক্ষণ পরে চালক মুঠোফোনে জানাল যে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা এসে আরও কয়েকজনের গাড়িসহ আমার গাড়ির ব্লু-বুক নিয়ে নিয়েছেন। দৌড়ে নিচে নেমে পুলিশের যে সদস্য এই কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছিলেন, তাঁর কাছে নিজের পরিচয় দিয়ে ব্লু-বুকটা ফেরত দিতে অনুরোধ করলাম।
উর্দি সাধারণত মানুষকে উদ্ধত করে ফেলে, কিন্তু উনি ছিলেন বিনয়ের মূর্ত প্রতীক, বিনয়-বিগলিত কণ্ঠে জানালেন, একজনকে ছাড়লে সবাইকে ছাড়তে হবে; তবে তিনি আমাকে সামান্য জরিমানা করবেন এবং সেটা তক্ষুনি ক্যাশ দিতে হবে। কত? না, এক হাজার ২০০ টাকা। আমার কাছে তখন এত টাকা ছিল না; অনেক কষ্টে টাকা জোগাড় করে এই বিড়ম্বনার হাত থেকে মুক্তি মিলল। জানা গেল, এই রাস্তায় ও এর আশপাশে প্রায়ই এরূপ ঘটে। আমার এক প্রতিবেশীও কিছুদিন আগে একই জায়গায় অনুরূপ বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন।
কোথায় যেন পড়েছিলাম, একবার যুদ্ধফেরত এক সৈনিকের কাছ থেকে রণক্ষেত্রে প্রচুর গোলাগুলির বর্ণনা শুনে ওর মা যখন ওকে প্রশ্ন করলেন, সে কেন কোনো গাছের আড়ালে চলে গেল না, তখন সে নাকি জবাব দিয়েছিল, সেখানে অফিসারদের জন্য যথেষ্টসংখ্যক গাছ ছিল না। তেমনিভাবে রাজধানীর নামকরা হাসপাতালগুলোয় যে সীমিত পার্কিং স্পেস আছে, সেখানে চিকিৎসকদের গাড়ি আর অ্যাম্বুলেন্সেরই জায়গা হয় না; কাজেই রোগী ও তাঁদের আত্মীয়স্বজনের গাড়ি বাইরেই রাখতে হয়।
অতএব, হাসপাতালের চারপাশের রাস্তা পুলিশের পৌনঃপুনিক রেইড এবং ‘কোটা’ পূরণ ও ‘কমিশন’প্রাপ্তির জন্য উপযুক্ত ক্ষেত্রই বটে!
তা এ প্রসঙ্গে আমার বিনীত বক্তব্য হচ্ছে—
১. নগদ জরিমানার পর আমাকে যে কাগজটি ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাতে কারণ দেখানো হয়েছে ‘রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি’। অথচ ল্যাবএইডের দুই উইংয়ের মধ্যবর্তী রাস্তা যথেষ্ট চওড়া বিধায় আমরা দুই পাশের ফুটপাত ঘেঁষে সমান্তরালভাবে পার্ক করায় অন্যান্য যানবাহন চলাচলে মোটেই প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়নি; বরং পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা সঙ্গে করে যে ‘রেকার’ নিয়ে এসেছিলেন, সেটাই আমার বিবেচনায় তখন ওখানে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছিল।
২. তিনি পুলিশের চাকরি করেন, তাই তাঁর কাছে এক হাজার ২০০ টাকা ‘সামান্য’ হতে পারে; কিন্তু আমি একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা, ২০০২-এর পেনশন দিয়ে আমাকে ২০১৪-এর বাজার মোকাবিলা করতে হচ্ছে। কাজেই আমার কাছে এই টাকা অনেক। আর ওটা নগদ টাকার পরিবর্তে পরবর্তী সময়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সমীপে কেন জমা দেওয়া যাবে না, সেটা আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে কুলোয় না।
৩. আগে একাধিকবার গতি নিয়ে আমাকে অহেতুক বিবিধ বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়েছে এবং আমার বিশ্বাস, অন্য গাড়িওয়ালাদের বেলায়ও এটা প্রযোজ্য। গাড়ি রাস্তায় চলাচলের জন্য প্রতিবছর আমি ও আমরা সরকারকে মোটা অঙ্কের রোড ট্যাক্স দিই। বিদেশে রাস্তার পাশে পার্কিং মিটারের নিচু পিলার থাকে, ওখানে পয়সা ঢেলে সারাক্ষণ পার্ক করা যায়। আমাদের সরকার ওটা করতে এখনো সক্ষম হয়নি।
যানজটের কারণে আজকাল গাড়ি নিয়ে বের হওয়াই কঠিন। নেহাত জরুরি কাজে, যেমন অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে বা চিকিৎসকের চেম্বারে যেতে, গাড়ি ব্যবহার করলে যদি এ ধরনের ভোগান্তির শিকার হতে হয় তার চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে।
সরকারের কাছে আবেদন, মেহেরবানি করে ট্রাফিক পুলিশের হয়রানি বন্ধ করুন।
আতাউর রহমান, ধানমন্ডি, ঢাকা।