Thank you for trying Sticky AMP!!

পোশাকশিল্পের মালিকদের হুমকি

তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের জন্য গঠিত মজুরি বোর্ডের প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাখ্যান করে পোশাকশিল্পের মালিকদের তরফে কারখানা বন্ধ করার যে হুমকি দেওয়া হয়েছে, তা সুবিবেচনাপ্রসূত নয়। এটা একধরনের হঠকারী মানসিকতার প্রকাশ, কেননা মজুরি বোর্ডের মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া চালু থাকা অবস্থায় কোনো ধরনের হুমকি এই প্রক্রিয়াকে না মানারই শামিল।
মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএর সভাপতি বলেছেন, পোশাকশিল্পের সামর্থ্য বিবেচনা না করেই মজুরি বোর্ড পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি প্রস্তাব করেছে একতরফাভাবে, যা তাঁদের বিবেচনায় ‘বাস্তবসম্মত, গ্রহণযোগ্য ও যৌক্তিক’ নয়। বাস্তবতার কথাই যদি প্রধান বিবেচ্য হয়, তাহলে পোশাকশিল্পের মালিকদের প্রথমেই ভেবে দেখা উচিত, এই দুর্মূল্যের বাজারে তাঁদের শ্রমিকেরা টিকে রয়েছেন কীভাবে। তাঁদের নিজেদেরই প্রশ্ন করা উচিত: তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষস্থানীয় দেশ হওয়া সত্ত্বেও কেন এ দেশের পোশাকশ্রমিকদের মজুরি সর্বনিম্ন? এমনকি বাংলাদেশেরই উল্লেখযোগ্য ১০টি শিল্প খাতের মধ্যে কেন পোশাক খাতের শ্রমিকদের মজুরি সবচেয়ে কম? ট্যানারি শ্রমিকের সর্বনিম্ন মজুরি নয় হাজার ৩০০ টাকা; তেলকলের শ্রমিকের সাত হাজার ৪২০ টাকা; সড়ক পরিবহন শ্রমিকের ছয় হাজার ৩০০ টাকা, রি-রোলিং মিলের শ্রমিকের ছয় হাজার ১০০ টাকা, কোল্ড স্টোরেজ শ্রমিকের ছয় হাজার ৫০ টাকা, গ্লাস অ্যান্ড সিলিকেটস শিল্পের শ্রমিকের পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা। এমনকি ধান ভাঙানোর চাতালে আধা দক্ষ শ্রমিকের মজুরিও এখন সাত হাজার ১৪০ টাকা। সল্ট (লবণ) ক্রাশিং শিল্পে মজুরি ঘণ্টায় ২৬৫ টাকা। কিন্তু পোশাকশিল্পে মজুরি মাত্র তিন হাজার টাকা। অনেক দর-কষাকষির পর পোশাকমালিকেরা এই মজুরি বাড়িয়ে চার হাজার ৫০০ টাকা করতে রাজি হয়েছেন; আর মজুরি বোর্ড প্রস্তাব করেছে পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা।
পোশাকশিল্পের মালিকদের কাছে আমাদের প্রশ্ন: দেশের মোট রপ্তানিপণ্যের ৭৮ শতাংশই যে পোশাকশ্রমিকদের শ্রমে-ঘামে উৎপন্ন হয়, যাঁদের অবদানে তৈরি পোশাকশিল্প বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল ও প্রাণবন্ত শিল্প, সেই শ্রমিকদের কেন সবচেয়ে কম মজুরি দেওয়া হয়?
সব বিবেচনায় মজুরি বোর্ডের প্রস্তাব যুক্তিসংগত। এটা গ্রহণ করা হলে পোশাকশিল্পের মঙ্গল হবে।