Thank you for trying Sticky AMP!!

বিশ্বজিৎ হত্যার বিচার

বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ড এই সরকারের আমলের ধিক্কৃত অপরাধগুলোর অন্যতম। কারণ, এমন সংঘবদ্ধ নৃশংসতার দৃষ্টান্ত নিকট অতীতে বিরল। গত বছরের ৯ ডিসেম্বর বিরোধী দলের অবরোধ কর্মসূচির দিন সকালে পুরান ঢাকায় প্রকাশ্যে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা কী নৃশংসভাবে কুপিয়ে বিশ্বজিৎকে হত্যা করেছেন, তার ভিডিও ফুটেজ ও স্থিরচিত্র দেশের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যখন জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তার কথা বলে বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন চালান, তখন সরকারপন্থী ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীদের হাতে খুন হন নিরীহ তরুণ বিশ্বজিৎ দাস, যিনি একজন দরিদ্র দরজি; যদিও রাজনীতির সঙ্গে তাঁর কোনোই সংস্রব ছিল না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেদিন বিশ্বজিতের জীবন রক্ষায় এগিয়ে যায়নি, বরং ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হত্যাযজ্ঞ প্রত্যক্ষ করেছে নীরব দর্শকের মতো।

নিহত বিশ্বজিতের পরিবার যখন সন্তান হত্যার বিচার চাইছে, তখন আসামিদের গ্রেপ্তার না করে আইনের শাসনের সঙ্গে নিষ্ঠুর পরিহাস করছে সরকার তথা আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে আড়াই মাস আগে, কিন্তু এখন পর্যন্ত অভিযোগ গঠন করা হয়নি। ৫ মে অভিযোগপত্র আমলে নেওয়ার দিন ধার্য ছিল, কিন্তু কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়াই সেদিন শুনানি হয়নি। অভিযোগপত্র আমলে নেওয়া হয়েছে ১৯ মে। তারপর অভিযোগ গঠনের দিন ধার্য করা হলো ২৬ মে। কিন্তু এদিনও শুনানি হলো না; কারণ হিসেবে বলা হলো, হরতালের কারণে আসামিদের আদালতে হাজির করা সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন মামলার আসামি বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের হরতালের দিনে আদালতে হাজির করতে সমস্যা হচ্ছে না, অথচ বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার আসামিদের বেলায় সমস্যা—এর সোজা মানে, এই আসামিরা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। তাঁদের বিচার-প্রক্রিয়া বিলম্বিত করতেই এভাবে বিভিন্ন অজুহাতে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে।

বিশ্বজিৎকে যাঁরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে, লোহার রড, লাঠি ইত্যাদি দিয়ে পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছেন, তাঁদের সচল ছবি বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত হয়েছে। সেসবের ভিত্তিতেই সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, মোট ২১ জনকে হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাহলে বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না কেন? কীভাবে তাঁরা মাসের পর মাস পালিয়ে থাকছেন? গোয়েন্দা পুলিশ তাঁদের সন্ধান পাচ্ছে না কেন? আসামি পলাতক রয়েছে বললেই কি সব দায়দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়?

দেশবাসী বিশ্বজিৎ হত্যার বিচার ও হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায়। সরকারপন্থী ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মী বলে হত্যাকারীদের পার পেতে দেওয়া চলবে না। বাকি আসামিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে বিচার-প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা হোক।