Thank you for trying Sticky AMP!!

মুসলিম ব্রাদারহুড ও সুয়েজ খাল বিবাদ

আমার মনে পড়ে এসব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো আমি মিসরের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আহমেদ নাজিফের কাছেও তুলেছিলাম; যখন তিনি ২০০৮ সালে আল আহরাম-এর সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় এসেছিলেন। যদিও তিনি এখন কারাগারে। সেই সভায় তিনি সুয়েজ খাল এলাকায় বিনিয়োগের ব্যাপারে খুবই আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। নৌপরিবহন খাতকে বিকশিত করার বিষয়ে আলোচনায় তাঁকে যথেষ্ট আশাবাদী মনে হলেও সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপের আলোচনা তিনি সেদিন করেননি।

২০১১ সালের ২৫ জানুয়ারির বিপ্লবের পর মিসরীয়রা মুক্তি, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ইনসাফের পাশাপাশি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের ব্যাপারে খুবই আশাবাদী হয়ে উঠেছিল। এটা হলো সে সময়, যখন দীর্ঘ অবহেলিত সুয়েজ খালের কৌশলগত গুরুত্বের দিকে নজর ফিরল। সুয়েজ খালের দিকে মনোযোগ ফেরার কারণ, সেই এসসাম শরাফ বিপ্লব-পরবর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রীর পদ নিতে পেরেছিলেন।

শরাফ দীর্ঘদিন ওই পদে থাকতে পারেননি আর মিসরীয়দের মনোযোগ অচিরেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে ঘুরে গেল। সেই নির্বাচনে মোহাম্মদ মুরসি বিজয়ী হলেন এবং তিনিও সুয়েজ খালের কৌশলগত গুরুত্বকে আরও বিকশিত করার ওপর জোর দিলেন।

গত সপ্তাহে আমি শরাফ সাহেবের একটা আলোচনা শুনতে গিয়েছিলাম। সেখানে তিনি সুয়েজ খালের উন্নয়ন বিষয়ে সম্ভাব্য দৃষ্টিভঙ্গি কী হতে পারে, তা নিয়ে একদল বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা শোনাচ্ছিলেন। তাঁরা কাজ করছিলেন মুসলিম ব্রাদারহুড সরকারের সঙ্গে। কিন্তু গত মাসে তাঁরা কাজটা থামিয়ে দেন। প্রকল্পটা হঠাৎ থেমে যাওয়ায় অনেক বিতর্ক হলো। অনেকে বললেন, এটা সরাসরি সরকার এবং সুয়েজ খালের উন্নয়নবিষয়ক আইনের প্রতি আঘাত।

শরাফ তাঁদের প্রচেষ্টা বন্ধ করেছিলেন তাঁর দলের সঙ্গে সরকারের বোঝাপড়ায় সমস্যা হওয়ার জন্য। সরকার চাইছিল না যে কাজটা ব্রাদারহুডের বাইরের কারও দ্বারা সম্পন্ন হোক। এই কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন মোহামেদ নাদাল্লাহ। গত নভেম্বর মাসে সাংবিধানিক ঘোষণার মাধ্যমে সরকার তাদের ক্ষমতা সংহত করার পদক্ষেপ নিলে নাদাল্লাহ এই প্রকল্পে প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ও সহযোগীদের সঙ্গে নিজেও পদত্যাগ করেন।

বিরোধী দলের নেতা আইনের অধ্যাপক এসসাম ইসসা সুয়েজ খাল বিষয়ে ব্রাদারহুডের আইনের খসড়া পাস করানোর আগে শক্তভাবে হুঁশিয়ারি জানিয়েছিলেন। তাঁর যুক্তি হলো, আধুনিক ইতিহাসে মিসরের বিরুদ্ধে সব কটি যুদ্ধই চালানো হয়েছিল সুয়েজ খালের দখল নিয়ে। মিসর সিঙ্গাপুর ও চীনের থেকে এখানেই আলাদা যে এর শত্রু সীমান্তের ওপারের ইসরায়েল। সুয়েজ খালের ওপর তাদের নজর মারাত্মক। সে কারণেই সুয়েজ খাল নিয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মিসরের নিরাপত্তা বাহিনীগুলো এবং সেনাবাহিনীর অনুমোদন নিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।

সেদিনের সেই বক্তব্যে শরাফ বলছিলেন, সুয়েজ খাল এবং একে ঘিরে থাকা এলাকার পণ্য মজুতের সুব্যবস্থা, পরিবহন, মোড়কজাতকরণ (প্যাকেজিং) এবং আন্তর্জাতিক বাজারে পাঠানোর সুবন্দোবস্ত থাকায় এর কৌশলগত গুরুত্ব ব্যাপক। বিশ্ববাণিজ্যের ১০ শতাংশ পণ্য এই সুয়েজ খাল দিয়ে পরিবাহিত হয়; যার মূল্য প্রায় ১.৭ ট্রিলিয়ন ডলার।

শরাফ আরও বলেন, ‘সুয়েজ খাল উন্নয়ন প্রকল্প অনেক পুরোনো প্রকল্প। এর লক্ষ্য হলো মিসরের সর্বস্তরে যাতে সত্যিকার অর্জনের সুফল আসে এবং বন্দরটির মূল্য কয়েক গুণ বাড়ানো যায় তার ব্যবস্থা করা। এর মাধ্যমে মিসরের সঙ্গে বাইরের দুনিয়ার সম্পর্কও পুনর্গঠিত হবে। আমরা ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে একটি যোগ্য দল তৈরি করতে পেরেছিলাম এবং আমরা একমত হয়েছিলাম যে আইনের ভিত্তিতে আমরা শুল্কমুক্ত অঞ্চলে কৃষি, নগর, শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক অনেকগুলো প্রকল্প বাস্তবায়ন করব।’

দলটির লক্ষ্য ছিল সুয়েজ খাল ঘিরে বিরাট আকারের শুল্কমুক্ত অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে পণ্য মোড়কজাত করা হবে। এই প্রকল্প লাখো মানুষের চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করবে এবং সুয়েজ খালের বার্ষিক আয় পাঁচ বছরের মধ্যে পাঁচ বিলিয়ন ডলার থেকে ১০০ বিলিয়নে উন্নীত করবে। এর পাশাপাশি পোর্ট সৈয়দের অন্যান্য সুফল তো বাড়বেই।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী সুয়েজ খালের যে বর্ধিত সৌভাগ্যের কথা বলেছেন, এর আগে সেই একই কথা বলেছিলেন মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। মিসরের জনগণের প্রতি পাঠানো এক বার্তায় তিনি জানিয়েছিলেন, সুয়েজ খাল হতে পারে মিসরের শতাব্দীর সেরা প্রকল্প, যার দ্বারা উপকৃত হবে সারা দুনিয়া। তিনি লিখেছিলেন, ‘আপনাদের সামনে যে চ্যালেঞ্জ, তার জন্য হয়তো সুয়েজ খালকে নতুন করে নির্মাণ করতে হবে। আপনাদের সামনে সত্যিকার এক অর্থনৈতিক বিপ্লব হাজির হয়েছে এবং মিসরের সব শক্তিকেই এই বিপ্লব সফল করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

সুয়েজ খাল দিয়ে জাহাজ চলাচল বাবদ মিসর বছরে প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলার আয় করে। ২০১১ সালের অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নিরাপত্তার অভাব সত্ত্বেও সংকটে পড়া মিসরের অর্থনীতিকে দাঁড় করিয়ে রেখেছে এই অর্থ।

গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৫৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত আয় হওয়া ৭৩ বিলিয়ন ডলার দিয়ে সুয়েজ খালই হয়ে আছে মিসরের তৃতীয় বৃহত্তম আয়ের উৎস এবং নগদ অর্থের প্রধান জোগানদাতা। এই খাল থেকে মিসর আরও অনেক বেশি অর্থ এখনো উপার্জন করতে পারে।

দ্বিতীয় লক্ষ্য হলো, খালের পূর্ব ও পশ্চিম তীরের ১৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকার উন্নয়ন করা। সেখানে ছোট ছোট শিল্প প্রকল্পের উপযোগী অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। এসব প্রকল্পের মধ্যে থাকতে হবে সেসব কোম্পানি, যারা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য পণ্য মোড়কজাত ও মজুত করবে এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছে তার জোগান দেবে। এ জন্য পণ্য বহনকারী জাহাজগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থাও করতে হবে।

এই লক্ষ্য অর্জনে কিছু কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে, যার মধ্যে রয়েছে অবকাঠামো নির্মাণকারী শ্রমিকদের জন্য মানসম্পন্ন আয়ের নিশ্চয়তা দেওয়া।

প্রথম আলোর জন্য লিখিত, ইংরেজি থেকে অনূদিত

কামাল গাবাল্লা: মিসরের আল আহরাম পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক।