Thank you for trying Sticky AMP!!

শিক্ষার ভবিষ্যৎ অনলাইনেই


অল্প কয়েক বছরেই সনাতনী শিক্ষার ধারণায় অতি দ্রুত পরিবর্তন এসেছে। শিক্ষার জন্য শ্রেণিকক্ষে শারীরিক উপস্থিতির অপরিহার্যতা কমতে শুরু করেছে। আমরা এখন অনলাইন শিক্ষার এক বৈপ্লবিক যুগে প্রবেশ করছি।
ইন্টারনেটভিত্তিক শিক্ষার বিষয়টিকে অতিরঞ্জিত না করেও বলা যায়, আমাদের প্রচলিত শ্রেণিকক্ষভিত্তিক শিক্ষার সীমাবদ্ধতার তুলনায় নতুন এই শিক্ষাপদ্ধতি অনেক বিস্তৃত।
বাবসন সার্ভে রিসার্চ গ্রুপের সাম্প্রতিক জরিপ প্রতিবেদন বলছে, আমেরিকায় উচ্চ শিক্ষার্থীদের শতকরা ৩০ ভাগের বেশি অন্তত একটি দূরশিক্ষণ কোর্স গ্রহণের সুফল লাভ করেছেন। আমাদের দেশেও এই বিষয়টির অগ্রগতি হতাশাজনক নয়।
চলমান করোনাকালে আমাদের দেশে বিপুলসংখ্যক উচ্চশিক্ষিত মানুষ দেশি-বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরশিক্ষণ কোর্সে অংশ নিয়েছেন এবং নিচ্ছেন।

অনলাইন শিক্ষাপদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা স্ব-স্ব শিক্ষণীয় বিষয়সূচি নিজেদের প্রাত্যহিক কার্যক্রমের সঙ্গে সমন্বয় করে সে অনুযায়ী অনুসূচি তৈরি করতে পারেন। অনলাইন শিক্ষার প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে শিক্ষা বহির্ভূত গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাদ না দিয়েও শিক্ষা ভালোভাবে অর্জন করা সম্ভব। এভাবে অনলাইনে অধ্যয়ন করতে গিয়ে আমাদের জীবনের জন্য অতি প্রয়োজনীয় সময় ব্যবস্থাপনায় আমরা দক্ষ হয়ে উঠছি। শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয়েই শিক্ষা বিষয়ক নিজস্ব পছন্দের বিষয় বাস্তবায়ন করতে পারছেন।
বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারের বিস্তৃতি ও সুযোগ যতই বাড়ছে ততই সৃষ্টি জগতের অসংখ্য বিষয় জানার সুযোগ বাড়ছে। এতে সেই সব বিষয়ে দক্ষতা লাভ করা যাচ্ছে ও শিক্ষাদান কার্যক্রমের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।
বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন বিষয়ে তাদের নিজস্ব অনলাইন ভার্সনের বিচিত্র প্রোগ্রাম চালু রেখেছে। মিউজিক থেকে শুরু করে কোয়ান্টাম ফিজিকস পর্যন্ত প্রত্যেকটি শাখায় একেকজন শিক্ষার্থীর অবাধ বিচরণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সশরীরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ না করেও এই অনলাইনে প্রোগ্রামের মাধ্যমে অফিশিয়াল সার্টিফিকেট, ডিপ্লোমা বা ডিগ্রি লাভ করা আজকাল খুবই সম্ভব এবং সাশ্রয়ী।

নিজের পছন্দমতো শিক্ষা অর্জনের সুযোগ অনেক গুন বাড়িয়ে দিয়েছে অনলাইন শিক্ষা। এই পদ্ধতির আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে এখানে শিক্ষার্থী তাঁর প্রয়োজনীয় শিক্ষা একান্ত নিজের মতো করে এবং আর্থিক সামর্থ্যের মধ্যে পূরণ করে নিতে পারেন।

অনলাইন শিক্ষা পদ্ধতিতে পৃথিবীর যে কোনো স্থান থেকে একজন শিক্ষক বা শিক্ষার্থী শিক্ষাদান বা গ্রহণ করতে পারেন। কারণ, এতে শিক্ষক বা শিক্ষার্থী কাউকেই একস্থান থেকে অন্যস্থানে স্থানান্তর হওয়ার বা কোনো নির্দিষ্ট রুটিন অনুসরণ করার দরকার হয় না। এতে শুধু সময়ই বাঁচে না বরং তা ব্যাপক অর্থ সাশ্রয়ীও বটে। বর্তমানে ভার্চুয়াল ক্লাসরুমের অভাব নেই। যেখানে ইন্টারনেট সংযোগ থাকে সেখানে যে কেউ প্রয়োজন মতো এর সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন। যেমন কেউ যদি বিদেশে অধ্যয়ন করেন এবং পাশাপাশি কাজও করতে চান তবে অনলাইন শিক্ষাই তাঁর কাছে পছন্দনীয় হবে। এমতাবস্থায় বিদেশে থেকেও তাকে কাজের জন্য শিক্ষা অথবা শিক্ষার জন্য কাজ ছাড়তে হবে না।
নিজের পছন্দমতো শিক্ষা অর্জনের সুযোগ অনেক গুন বাড়িয়ে দিয়েছে অনলাইন শিক্ষা। এই পদ্ধতির আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে এখানে শিক্ষার্থী তাঁর প্রয়োজনীয় শিক্ষা একান্ত নিজের মতো করে এবং আর্থিক সামর্থ্যের মধ্যে পূরণ করে নিতে পারেন।
অনলাইন ক্লাসে শ্রেণিকক্ষের আয়তন সাধারণত সনাতনী শ্রেণিকক্ষের চেয়ে ছোট হয়ে থাকে। অধিকাংশ সময় এই পদ্ধতিতে শ্রেণিকক্ষে একসময় একজন ছাত্র থাকায় শিক্ষক ও ছাত্রের মধ্যকারই পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া এবং পাঠ আদায় কার্যক্রম খুবই উঁচুমানের হয়ে থাকে। এই পর্যায়ে শিক্ষা উপকরণ হিসেবে প্রায়ই ভিডিও, ছবি এবং ই-বুক ব্যবহার হয়ে থাকে। এমনকি শিক্ষক তার বক্তব্য বিষয়ের মান উন্নয়নে অন্য ফরম্যাটে যেতে পারেন। যেমন, কোনো ফোরামে বা আলোচনার মাধ্যমে শিখন (লার্নিং) শেখানো প্রক্রিয়াকে তিনি সমন্বয় করে নিতে পারেন। এই অতিরিক্ত সুবিধার সুযোগ যে কোনো সময়ে যে কোনো স্থানে ব্যবহার করা যায়। ফলত শিখন শেখানোর সামগ্রিক কাজটি সময় ও চাহিদা উপযোগী হয়ে উঠে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, প্রচলিত শ্রেণিকক্ষভিত্তিক শিক্ষার চেয়ে অনলাইন এই শিক্ষার ব্যয় তুলনামূলকভাবে কম। এখানে দেয় (পেমেন্ট) পরিশোধের ক্ষেত্রে কিছু বিকল্প সুযোগ থাকে। যেমন তা কিস্তিতে বা ক্লাস প্রতি হতে পারে। এমনকি মোট দেয় থেকে কিছু বাট্টাও (ছাড়) দেওয়া হয়। ক্ষেত্র বিশেষে বৃত্তিও প্রদান করা হয় এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিক্ষা উপকরণ ব্যয় না থাকায় এই পদ্ধতিতে শিক্ষা ব্যয় সাধারণত বেশি হয় না।
বিজ্ঞানও প্রযুক্তির এই উৎকর্ষের যুগে অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রী আজ ভাবতে শুরু করেছে, অনলাইন শিক্ষা সনাতনী শিক্ষার সমান্তরাল বা তার চেয়ে উত্তম। এ কারণে অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিক মানে দাঁড় করানোর বিষয়ে সরকারকে ভাবতে হবে এখনই। নয়তো পিছিয়ে পড়তে হবে।


মো. আহসান আরিফ এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ-এর কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান।
ই-মেইল: mdahsanarif@aub. edu. bd