Thank you for trying Sticky AMP!!

সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা

গত ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হলো দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগপন্থী হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিষ্টান সবাই অংশগ্রহণ করেছে। তাহলে শুধু হিন্দুদের ওপর নির্মমভাবে হামলা হলো কেন? হিন্দু হওয়া কি এ দেশে অপরাধ? নাকি আমরা এ দেশের বোঝা?
গত মঙ্গলবার প্রায় সব পত্রিকার প্রথম পাতায় ছবিসহ কত করুণ দৃশ্য আমাদের দেখতে হয়েছে। সারা দেশেই প্রায় সংখ্যালঘুদের ওপর কমবেশি অত্যাচার হয়েছে এবং হচ্ছে। বাহ্যিকভাবে ও মানসিকভাবেও। তবে যেসব জায়গায় ব্যাপকভাবে হামলা হয়েছে, এগুলোই শুধু পত্রিকায় এসেছে, এর বাইরে যে কিছু হয়নি, তা কিন্তু নয়। দিনাজপুরে দেড় শতাধিক সংখ্যালঘু পরিবারের ৪০০ ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, হামলা ও লুটপাট করেছে দুর্বৃত্তরা।
সবচেয়ে দুঃখের বিষয়, আমার এক আত্মীয় আমাকে ফোন করে বলে, দিনাজপুর, নওগাঁ, জয়পুরহাট এলাকার অনেক পরিবার তাদের যুবতী মেয়েদের ভারতে পাঠিয়ে দেওয়ার চিন্তাভাবনা পর্যন্ত করছে। যশোর, সাতক্ষীরা, ঠাকুরগাঁওয়ে একই ঘটনা ঘটেছে। অনেক হিন্দু পরিবারের ওপর হামলা হয়েছে। তারা বাড়ি ছেড়ে মন্দিরসহ নানা নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত সারা দেশে বিভিন্ন অজুহাতে সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি, উপাসনালয় ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ভাঙচুরের ঘটনা কিছুদিন পর পরই ঘটছে। কিন্তু সরকার যদি প্রথম থেকে এসব ঘটনার সঠিক তদন্ত করে দোষীদের বিচারের ব্যবস্থা করতে পারত, তাহলে এতটা সাহস তারা পেত না। পুলিশ প্রশাসনও তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে।
দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর এক রাতে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের ফলদা গ্রামের ১২০ বছরের পুরোনো কালীমন্দির গুঁড়িয়ে দেয় সন্ত্রাসীরা। তাদের এ হামলার কারণ অনেক। তারা চায়, এভাবে অত্যাচার করলে হিন্দুরা এ দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যাবে এবং তাদের জমি-জায়গা সস্তা দামে পাওয়া যাবে।
পাশাপাশি আওয়ামী লীগের ভোটও কমবে। হয়তো বা তাদের এ চাওয়া একদিন সত্যি সত্যিই পূর্ণ হবে। যদি সংখ্যালঘুদের ওপর এভাবে একের পর এক অত্যাচার কারণে-অকারণে হতেই থাকে, তাহলে কোন আশায় তারা পড়ে থাকবে? জামায়াত-শিবির বলতে পারবে, আমাদের দেশের ১০০ শতাংশ লোক মুসলমান।
বড় দুঃখভরা মন নিয়ে কথাগুলো লিখতে হচ্ছে। পত্রিকার পাতায় অবুঝ শিশুদের অশ্রুমণ্ডিত চাহনি, হতাশাগ্রস্ত মা-বাবার মুখগুলো যারা দেখেছে, পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন বা পাষাণ মানুষটিরও বুক কেঁপে উঠবে, করুণা হবে এই অসহায় মানুষগুলোর অসহায়ত্ব দেখে। আমি আর লিখতে পারছি না। আর লিখেই বা কী হবে?
দীনেশ চন্দ্র মাহাতো, ঢাকা।