Thank you for trying Sticky AMP!!

অবকাঠামো গড়তে কর সংস্কার দরকার

>
বিয়ন লোমবোর্গ
উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার কী হওয়া উচিত, তা চিহ্নিত করার লক্ষ্যে গবেষণা করছে কোপেনহেগেন কনসেনসাস সেন্টার। অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি সামাজিক, স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত উন্নয়নের ওপরও জোর দিচ্ছে সংস্থাটি। বাংলাদেশের জন্য ভিশন ২০২১ অর্জনে এই গবেষণাভিত্তিক কিছু নিবন্ধ প্রকাশ করছে প্রথমআলো। আজ প্রকাশ করা হলো পঞ্চমটি।

বাংলাদেশের সরকারি খাত এখন গুরুতর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে পিছিয়ে রাখার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে দুর্বল অবকাঠামো অন্যতম। সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত স্বাস্থ্য ক্লিনিকগুলো জনগণকে ভালো মানের, বিশেষায়িত সেবা প্রদানে লড়ে যাচ্ছে। আর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাইরে মানসম্মত শিক্ষার সুযোগ অত্যন্ত সীমিত। এই চ্যালেঞ্জগুলো কয়েকটি নমুনামাত্র। আর এসবের পেছনে রয়েছে যথাযথভাবে কর ও রাজস্ব আদায় না হওয়া। বিশ্বের যেসব দেশে জিডিপি থেকে কর আদায়ের হার সবচেয়ে কম, বাংলাদেশ তার মধ্যে একটি।

বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব আয় দেশটির সমগ্র অর্থনীতির মাত্র ১১ শতাংশের সমান। এ দেশে রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এর বেশির ভাগই কাজে লাগানো যায় না। আগামী পাঁচ বছরে সরকার জিডিপি থেকে কর আদায়ের হার ১৪ শতাংশে উত্তীর্ণ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এই লক্ষ্য অর্জনে সবচেয়ে কার্যকর উপায় কী কী হতে পারে, যেসব সরকারি সেবার ওপর জনগণ নির্ভর করে, সেগুলোর উন্নয়নে সরকারকে সম্পদ সরবরাহ করা?

বাংলাদেশ প্রায়োরিটিজ দেশের আরও অন্যান্য উন্নয়নকাজের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রশ্নসহ এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। ব্যয়িত প্রতি টাকায় কোন সমাধানটি বাংলাদেশের জন্য সর্বোচ্চ কল্যাণ বয়ে আনবে, তা খুঁজে বের করার জন্য আমাদের অর্থনীতিবিদদের দল অনেকগুলো বিষয়ের ওপর গবেষণা চালিয়েছে। (বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের গবেষণা ও মূল্যায়ন বিভাগের সহযোগিতায় কোপেনহেগেন কনসেনসাস সেন্টার গবেষণা ও পরামর্শ-বিষয়ক প্রকল্প বাংলাদেশ প্রায়োরিটিজ গঠন করে। প্রকল্পটি কীভাবে বাংলাদেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত কল্যাণ সাধন হবে, সে ব্যাপারে গবেষণা করছে এবং পরামর্শ দিচ্ছে। বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে ভালো নীতিমালা তৈরিতে সহায়তার ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রায়োরিটিজ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ)।

করের ভিত্তি আরও মজবুত করার ক্ষেত্রে ভ্যাট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ রাজস্ব আয়টা হয় ভ্যাট ও কর থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক বজলুল হক খন্দকার এবং ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির সিনিয়র লেকচারার বিপ্লব কুমার নন্দী খুঁজে বের করেছেন, ভ্যাট এবং এর সংগ্রহের পদ্ধতিতে পরিবর্তন করা সরকারের জন্য আরও সম্পদ সংগ্রহের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় কৌশলগুলোর একটি।

অর্থনীতিবিদেরা প্রথমে যে উপায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট গণনা করা হয়, তা পরিবর্তন করার প্রভাব বিশ্লেষণ করেন। বর্তমানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সব পণ্য ও পরিষেবার জন্য শুল্কমূল্য নির্ধারণ করে এবং এই মূল্যই পরবর্তী সময়ে ভ্যাটের রাজস্ব নির্ধারণ করে। উদাহরণস্বরূপ আপনি যদি একজন বিক্রেতা হয়ে থাকেন, যিনি প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১০৫ টাকা মূল্যে বিক্রি করেন, কিন্তু ওই ১০৫ টাকার ওপর ভ্যাট গণনা করা হয় না। এর পরিবর্তে, এনবিআর সয়াবিন তেলের মূল্য যত হওয়া উচিত বলে নির্ধারণ করে, তার ওপর ভিত্তি করে এই ১৫ শতাংশ ভ্যাট গণনা করা হয়, যেটা মাত্র ৪৩ টাকা।

অর্থনীতিবিদেরা এসব শুল্কমূল্য বাতিল করে এগুলোকে প্রকৃত বাজারমূল্য দিয়ে প্রতিস্থাপন করার প্রভাব বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, এর প্রভাব বেশ ভালো হবে। কারণ, এনবিআর বহু পণ্য ও পরিষেবার মূল্য কম নির্ধারণ করে থাকে। এই পরিবর্তনের কারণে ভ্যাট থেকে রাজস্ব আয় দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পাবে। অতিরিক্ত ৭ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হবে।

এই পরিকল্পনার দ্বিতীয় অংশ, যে পদ্ধতিতে সরকারের ভ্যাট সংগ্রহ করা হয়, তা স্বয়ংক্রিয় করার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। আপনি যদি সেই সয়াবিন তেল বিক্রেতা হন, তাহলে আপনাকে আপনার আয়ের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবছর ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু এই প্রক্রিয়া ঝামেলাপূর্ণ এবং অত্যন্ত ব্যয়বহুল হতে পারে।

আমাদের এই গবেষণা-প্রক্রিয়াটিকে দক্ষতর করে তোলার প্রস্তাব দিয়েছে, যেন এর ফলে করের প্রবিধান মেনে চলা এবং কর রিটার্ন করা সহজতর হয়। কাগজ-কলমে হিসাবের পরিবর্তে, বিক্রেতারা ইন্টারনেটের মাধ্যমে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। এটি ট্যাক্স কোড মেনে চলার ব্যয় কমাবে এবং কর প্রদানকে উৎসাহিত করবে। গবেষকদের ধারণা, এর ফলে নিবন্ধিত অনলাইন ভ্যাটদাতার সংখ্যা ৩৫ হাজার থেকে ৮৫ হাজারে উন্নীত হবে—অন্ততপক্ষে আরও ৫০ হাজার কোম্পানি স্বেচ্ছায় তাদের কর পরিশোধ করবে।

উল্লিখিত পদ্ধতিকে স্বয়ংক্রিয় করলে কর থেকে রাজস্ব আয় ২ হাজার ৪২০ কোটি টাকা বৃদ্ধি পাবে এবং বিক্রেতারাও লাভবান হবেন, কারণ তাঁরা ব্যয়বহুল হিসাব নিরীক্ষকের ক্ষেত্রে এবং অন্যান্য হিসাবরক্ষণ পরিষেবার ক্ষেত্রে অর্থ বাঁচাতে পারবেন, যেগুলো বর্তমানের জটিল ট্যাক্স কোড মেনে চলার জন্য প্রয়োজন হয়।

শুল্ক নির্ধারণের বিদ্যমান প্রক্রিয়া বিলোপ এবং ভ্যাট সংগ্রহ স্বয়ংক্রিয়করণ জিডিপি থেকে কর আয়ের হারকে প্রায় ১ শতাংশে নিয়ে আসবে। এটা সরকারের পাঁচ বছরে ১৪ শতাংশের লক্ষ্যের তুলনায় কম, কিন্তু এর ফলে প্রতিবছর অতিরিক্ত ১০ হাজার ৪০ কোটি টাকার রাজস্বের সমপরিমাণ অগ্রগতি হবে। তবে এই রাজস্ব বাড়ানোর প্রচেষ্টার ফলাফল শূন্য হতে পারে, যদি না বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে টাকা ব্যয় করা হয়। কিন্তু বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ব্যয় বেশ ভালো ফল এনে দিতে পারে।

আমাদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই অতিরিক্ত তহবিল ব্যয় করা হবে বাংলাদেশের জন্য অতীব জরুরি অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে, যেমন: রাস্তা ও রেল পরিবহন, বৈদ্যুতিক গ্রিড এবং পানি সরবরাহের ব্যবস্থা। কিন্তু করের সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য অর্থ ব্যয় করতে হবে। রাজস্ব বৃদ্ধি হলে সরকার লাভবান হতে পারে, কিন্তু এটা বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেবে। তাই এই খরচকে নাগরিকদের খরচ হিসেবেই বিবেচনা করতে হবে।

ইংরেজি থেকে অনূদিত

. বিয়ন লোমবোর্গ: কোপেনহেগেন কনসেনসাস সেন্টারের প্রেসিডেন্ট টাইম ম্যাগাজিনের মূল্যায়নে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির একজন