Thank you for trying Sticky AMP!!

প্রতীকী ছবি।

আত্মসাতের শাস্তি তাহলে হয়রানিমুক্ত জীবন

পালিয়ে থাকা প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার দেশে ফিরতে চান। এ জন্য তিনি নিরাপত্তাও চেয়েছেন। দেশে ফিরে তিনি আত্মসাৎ করা অর্থ ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন বলেও চিঠি দিয়েছেন। বহুল আলোচিত পি কে হালদার আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের (আইএলএফএসএল) সিংহভাগ ঋণের সুবিধাভোগী। এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক অনুসন্ধান করে পি কে হালদারকে দায়ী করেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাঁকে একাধিকবার তলব করলেও তিনি হাজির হননি। রাতের অন্ধকারে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান তিনি। আর গ্রাহকেরা অর্থ না পেয়ে এখনো দরজায় দরজায় ঘুরছেন। এত কিছুর পরও তিনি এখন হয়রানিমুক্ত জীবন চাইছেন। অর্থাৎ অর্থ আত্মসাতের মতো বড় ধরনের অপরাধ করেও কোনো শাস্তি হবে না। বিশ্বের অন্য কোনো দেশে এ রকম কোনো উদাহরণ আছে কি না, জানা নেই।

Also Read: ৩৫০০ কোটি টাকা নিয়ে চম্পট

চীন ও ভিয়েতনামে শাস্তি মৃত্যুদণ্ড

ঋণখেলাপি, ব্যাংক থেকে অর্থ আত্মসাৎকারী এবং তাঁদের সহায়তা দেওয়া ব্যাংকারদের কোন দেশ কী শাস্তি দেয়, সেটা আগে বলি। উন্নত দেশগুলোসহ অনেক দেশেই এ নিয়ে আইন কড়া। অর্থ ফেরত দেওয়ার সামর্থ্য না থাকলে নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করা যায়। সম্পদ বিক্রি করে পাওনা পরিশোধের ব্যবস্থা থাকে। একবার দেউলিয়া হলে আরাম-আয়েশের জীবন আর কাটানো সম্ভব হয় না।

তবে কঠোরতার দিক দিয়ে সবচেয়ে শক্ত অবস্থানে সম্ভবত চীন ও ভিয়েতনাম। ব্যাংক থেকে প্রায় ১১ কোটি ডলার আত্মসাতের জন্য ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে হেংফেং ব্যাংক কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যান জিয়াং শিউয়ানকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন চীনের আদালত।

চীনে ২০১২ সালে বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার অভিযোগে ইউ ইয়াং নামের ৩০ বছরের এক যুবককে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়। বলে রাখা ভালো, দেশটিতে নিয়ম হচ্ছে, মৃত্যুদণ্ড পেলে প্রথম দুই বছর জেলে থাকতে হয়। এই সময়ে ভালো আচরণ করলে শাস্তি কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এর আগে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংক অব ইনার মঙ্গোলিয়ার সাবেক চেয়ারম্যান ইয়াং চেঙ্গলিনকে ৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে একই শাস্তি দেওয়া হয়। ২০১০ সালে চায়না ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ওয়াং ই এবং ২০০৫ সালে ব্যাংক অব চায়না-হংকংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান লিউ জিনবাওকে অর্থ আত্মসাতের জন্য মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। আবার চীনেই ২০১২ সালে বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার অভিযোগে ইউ ইয়াং নামের ৩০ বছরের এক যুবককে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়। বলে রাখা ভালো, দেশটিতে নিয়ম হচ্ছে, মৃত্যুদণ্ড পেলে প্রথম দুই বছর জেলে থাকতে হয়। এই সময়ে ভালো আচরণ করলে শাস্তি কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

ঋণখেলাপি, ব্যাংক থেকে অর্থ আত্মসাৎকারী এবং তাঁদের সহায়তা দেওয়ার অপরাধে ভিয়েতনামে মৃত্যদণ্ড পর্যন্ত দেওয়া হয়

ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের বিরুদ্ধে ভিয়েতনামও চীনের মতোই কঠোর। চীনের প্রতিবেশী দেশটি আর্থিক খাতে বড় ধরনের সংস্কার শুরু করলে ২০১৪ সালেই তিনজন ব্যাংকারকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। এর মধ্যে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ভিয়েতনাম এগ্রি ব্যাংকের একজন সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল ২ কোটি ৫০ লাখ ডলার আত্মসাতের। মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আরেকজন ব্যাংকার ছিলেন রাষ্ট্রমালিকানাধীন ভিয়েতনাম ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের। তাঁর কারণে ব্যাংকের ক্ষতি ৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

ভিয়েতনামের অন্যতম বৃহৎ ওশেন ব্যাংকের বড় কর্মকর্তা নিগুয়েন জুয়ান সনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে। ক্ষমতার অপব্যবহার, অর্থ আত্মসাৎ ও ব্যাংক অব্যবস্থাপনার অভিযোগ আনা হয় তাঁর বিরুদ্ধে। একই ধরনের অভিযোগে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান, দেশটির অন্যতম শীর্ষ ধনী হা ভান থামকে যাবজ্জীবন জেল এবং ব্যাংকের ৫১ জন কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেওয়া হয়। ভিয়েতনামে মৃত্যুদণ্ড মানেই ফায়ারিং স্কোয়াড বা লেথাল ইনজেকশন।
ভারত ততটা কঠোর নয়। ২০১৬ সালে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের ছবি প্রকাশ করার অনুমতি দেয়। ২০১৮ সালেও ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোকে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের ছবি প্রকাশ করতে চিঠি দেয়। নাম ও ছবি প্রকাশ করে এভাবে সামাজিকভাবে লজ্জা দেওয়ার কর্মসূচির নাম হচ্ছে ‘নেম অ্যান্ড শেম’

মৃত্যুদণ্ডের কথা শুনে যাঁরা আঁতকে উঠছেন, তাঁদের খানিকটা স্বস্তি দিতে অন্য রকম কিছু তথ্য দেওয়া যায়। বিশেষ করে একটা প্রশ্ন উঠতেই পারে, ব্যাংকারদের না হয় জেল হলো, ঋণখেলাপিদের কী শাস্তি? ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে চীনের সুপ্রিম পিপলস কোর্টের এক রায়ে ৯৫ লাখ ৯০ হাজার ঋণখেলাপিকে কালোতালিকাভুক্ত এবং তাঁদের ব্যাংকে রাখা ২ হাজার ৭৭০ কোটি ডলারের আমানত জব্দ করা হয়। এ ছাড়া আদালতের আদেশে ঋণখেলাপিদের কাছে ৯৩ লাখ ৬০ হাজার প্লেনের টিকিট বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি ৩৬ লাখ ৭০ হাজার উচ্চগতির ট্রেনের টিকিটও বিক্রি বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়া চীনে ঋণখেলাপিদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না এবং কোনো করপোরেট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি বা নির্বাহীও হওয়া যায় না।

ভারতে এভাবে গণমাধ্যমে ঋণ খেলাপিদের ছবি ছাপিয়ে দেয়

ভারত ততটা কঠোর নয়। ২০১৬ সালে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের ছবি প্রকাশ করার অনুমতি দেয়। ২০১৮ সালেও ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয় রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোকে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের ছবি প্রকাশ করতে চিঠি দেয়। নাম ও ছবি প্রকাশ করে এভাবে সামাজিকভাবে লজ্জা দেওয়ার কর্মসূচির নাম হচ্ছে ‘নেম অ্যান্ড শেম’। ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ জন্য ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের চিহ্নিত করতে একটি নীতিমালাও তৈরি করে দিয়েছে।

গত এক দশকের প্রথম কেলেঙ্কারি ছিল শেয়ারবাজার নিয়ে, ২০১০ ও ২০১১ সালে। সরকার তদন্ত কমিটি করলেও দায়ী ব্যক্তিদের বড় ধরনের কোনো শাস্তি হয়নি। পরের বছরের কেলেঙ্কারি ছিল ডেসটিনি নিয়ে। এরপরই ঘটে হল-মার্ক কেলেঙ্কারি।

উদার বাংলাদেশ

গত এক দশকে বাংলাদেশকে উচ্চ প্রবৃদ্ধির জন্য যেমন মনে রাখতে হবে, তেমনি মনে রাখতে হবে বড় বড় আর্থিক কেলেঙ্কারির জন্য। শুরু হয়েছিল সোনালী ব্যাংকের হল-মার্ক কেলেঙ্কারি দিয়ে, সর্বশেষ কেলেঙ্কারি হচ্ছে পি কে হালদারের সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ। অপরাধ করেও হয়রানিমুক্ত জীবন চাওয়ার পেছনে অর্থ আত্মসাৎকারী ও ঋণখেলাপিদের জন্য উদারনীতির একধরনের ভূমিকা আছে।

গত এক দশকের প্রথম কেলেঙ্কারি ছিল শেয়ারবাজার নিয়ে, ২০১০ ও ২০১১ সালে। সরকার তদন্ত কমিটি করলেও দায়ী ব্যক্তিদের বড় ধরনের কোনো শাস্তি হয়নি। পরের বছরের কেলেঙ্কারি ছিল ডেসটিনি নিয়ে। এরপরই ঘটে হল-মার্ক কেলেঙ্কারি। হল-মার্ক কেলেঙ্কারির তথ্য প্রকাশ পায় ২০১২ সালে। গ্রুপটি সোনালী ব্যাংক থেকে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা জালিয়াতি করে তুলে নেয়।

সরকার যে অর্থ আত্মসাৎকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে, এর সপক্ষে সরকারের সবচেয়ে বড় প্রচারণা হচ্ছে, হল-মার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তানভীর মাহমুদ এবং ডেসটিনির প্রধান ব্যক্তিরা এখনো জেলে। তাহলে পেছনের গল্পটিও বলা যায়। কারণ, জেল থেকে মুক্ত করার জন্য হল-মার্ক গ্রুপের সঙ্গে সরকারের একাধিকবার সমঝোতার চেষ্টা হয়েছে। যেমন জেলে যাওয়ার এক বছরের মধ্যেই জামিনসহ নতুন করে ঋণ দিয়ে কারখানা চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ২০১৩ সালের ২৭ মার্চ এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন সে সময়ের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অর্থমন্ত্রী সরাসরিই বলেছিলেন, ‘তাঁদের জামিনে জেল থেকে বের করে আনার চিন্তা রয়েছে।’ পরে অবশ্য নানা আইনি জটিলতায় সেই উদ্যোগ সফল হয়নি।

আ হ ম মুস্তফা কামাল অর্থমন্ত্রী হওয়ার পরে ২০১৯ সালে ঋণখেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া শুরু হয়। এর মাধ্যমে এককালীন ২ শতাংশ নগদ জমা এবং ১০ বছরে বাকি টাকা পরিশোধ করলেই খেলাপি ঋণ নিয়মিত করা যাচ্ছে। বলা হয়েছিল, কেবল অনিচ্ছাকৃত খেলাপিরা এই সুযোগ পাবেন। অথচ অর্থ আত্মসাৎকারী হল-মার্ককে এই সুযোগ দিতে অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বিশেষ বৈঠকও করেন। যদিও হল-মার্কের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের ১১টি মামলা চলছে।

বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির জনক হয়েও বহাল তবিয়তে আছেন ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই ওরফে বাচ্চু।

গত এক দশকে ছোট-বড় অনেক আর্থিক কেলেঙ্কারি ঘটলেও কে শাস্তি পাবেন আর কে পাবেন না, তা এখনো পরিষ্কার নয়। হল-মার্কের প্রধানেরা জেলে, কিন্তু বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির জনক হয়েও বহাল তবিয়তে আছেন ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই ওরফে বাচ্চু। আবার ঋণ কেলেঙ্কারির জন্য ক্রিসেন্ট গ্রুপের এক ভাই দিব্যি সিনেমা বানাচ্ছেন আর অ্যাননটেক্সের প্রধান বসে থাকেন ব্যাংকের এমডির রুমে। ফারমার্স ব্যাংক কেলেঙ্কারির জন্য ভাইস চেয়ারম্যান জেলে, চেয়ারম্যান দিব্যি আছেন।

বহুল আলোচিত সিকদার গ্রুপের কেলেঙ্কারি

বহুল আলোচিত সিকদার গ্রুপের দুই পরিচালক আরেক ব্যাংকের এমডিকে গুলি করে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এটিকে অবশ্য মিত্র পক্ষের গুলি বা ‘ফ্রেন্ডলি ফায়ার’-এর ঘটনা বলা যায়। দুই পক্ষই প্রভাবশালী এবং সরকারের পক্ষের লোক বলেই পরিচিত। সমঝোতার চেষ্টাও হয়েছিল। কিন্তু চেষ্টা সফল না হওয়ায় হত্যাচেষ্টার মামলা হয় ঘটনার ১৩ দিন পর।

কেন ফিরছেন পি কে হালদার

সুতরাং এখানে অনেক কিছুই নির্ভর করে সম্পর্কের ওপর। প্রভাবশালীদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো থাকলে এক রকম ফল, সম্পর্ক ভালো না থাকলে আরেক রকম। সমঝোতার আশ্বাস পেলে এক রকম, না পেলে ভিন্ন ফল। এর মধ্যেই দেশে ফেরার আগ্রহ দেখিয়ে ব্যাংক পাড়ায় চাঞ্চল্য তৈরি করেছেন প্রশান্ত কুমার হালদার। তাঁকে দেশ ছাড়তে হয়েছিল অনেকটাই অপ্রস্তুত অবস্থায়। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি প্রায় দেউলিয়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডকে অবসায়ন করা হবে বলে ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

পি কে হালদার

এরপরই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সম্পৃক্ত হিসেবে পি কে হালদারের নাম আলোচনায় আসে। আরও জানা যায়, প্রায় দেউলিয়া ইন্টারন্যাশনাল লিজিংসহ আরও বেশ কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাতের পেছনেও আছেন পি কে হালদার। আমানত হিসেবে রাখা টাকা না পেয়ে গ্রাহকেরা ভিড় জমাতে শুরু করেন। তদন্তে শুধু ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকেই আড়াই হাজার কোটি আত্মসাতের তথ্য উদ্‌ঘাটন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। তলব করে দুদক। কিন্তু পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে দেশ থেকে গোপনে পালিয়ে যান পি কে হালদার।

Also Read: অর্থ আত্মসাতের পক্ষে সাফাই

সময় পেলে হয়তো সবকিছু গুছিয়ে নিতে পারতেন। অথবা এই পরিণতি হবে আঁচ করতে পারলে হোটেলসহ কয়েকটি খাতে হয়তো বড় বিনিয়োগই করতেন না। আর সদিচ্ছা থাকলে কালোটাকা সাদা করার সুযোগই তিনি নিতে পারতেন। একটা কথা তো সবাই জানি, ‘চুরি বিদ্যা মহাবিদ্যা যদি না পড়ো ধরা।’ এখন তো দেখা যাচ্ছে, ধরা পড়লেও হয়রানিমুক্ত জীবন চাওয়া যায়, এমনকি শাস্তিও মাফ।

দুই অর্থনীতিবিদ মির্জা এম হাসান ও সেলিম রায়হান ‘নেভিগেটিং দ্য ডিলস ওয়ার্ল্ড: দ্য পলিটিকস অব ইকোনমিক গ্রোথ ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি গবেষণায় বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ আইনের শাসনের ভিত্তিতে চলে না। বাংলাদেশ চলে ডিলস বা নানা ধরনের লেনদেনের ওপর ভিত্তি করে।’

বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ রাষ্ট্রপতি থাকার সময় ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টে (বিআইবিএম) একটি স্মারক বক্তৃতা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে ঋণখেলাপিরা মহা বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। যে যত বেশি ঋণখেলাপি, সে তত বেশি প্রভাবশালী। ঋণখেলাপিরা প্রায় সব রাজনৈতিক দলেই ছড়িয়ে আছে। তাই তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে। ব্যাংক থেকে যারা মোটা অঙ্কের ঋণ গ্রহণ করেছে, এমনকি হাজার কোটি টাকার ওপরও ঋণ গ্রহণ করছে, তাদের রাজনৈতিক দলগুলো প্রশ্রয় দিচ্ছে। যেমন ছাত্র, মাস্তান ও সন্ত্রাসীরা ছাড়া আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো চলে না, তেমনি বড় বড় ঋণখেলাপি ছাড়াও রাজনৈতিক দল চলে না।’

দুই অর্থনীতিবিদ মির্জা এম হাসান ও সেলিম রায়হান ‘নেভিগেটিং দ্য ডিলস ওয়ার্ল্ড: দ্য পলিটিকস অব ইকোনমিক গ্রোথ ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি গবেষণায় বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ আইনের শাসনের ভিত্তিতে চলে না। বাংলাদেশ চলে ডিলস বা নানা ধরনের লেনদেনের ওপর ভিত্তি করে।’ এ থেকে বলা যায়, সম্ভবত লেনদেনের সমস্যা হয়েছিল, এখন আবার ঠিকঠাক হওয়ায় দেশে ফেরার কথা ভাবছেন। যেমন লেনদেনে মিললে হয়তো দেশে ফিরবেন সিকদারপুত্ররা। আর এভাবে ফেরা যায় বলেই অর্থ আত্মসাৎ বন্ধ হয় না, খেলাপি ঋণ বাড়তে থাকে, অর্থ পাচার হয় এবং কোনো শাস্তি হয় না। জীবন হয় আনন্দের ও হয়রানিমুক্ত। ফলে আরও যাঁরা অর্থ আত্মসাৎ করছেন, করতে চান, ঋণ নিয়ে ফেরত দেবেন না বলে ভাবছেন, তাঁদের জন্য একটাই সংকেত—চালিয়ে যান।

শওকত হোসেন প্রথম আলোর বিশেষ বার্তা সম্পাদক

shawkat.massum@prothomalo.com