Thank you for trying Sticky AMP!!

আফগানিস্তানে মাদকবিরোধী লড়াই থেকে পিছুটান

রয়টার্স ফাইল ছবি।

আফগান যুদ্ধের অবসান ঘটাতে তালেবান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য শান্তি আলোচনা সেপ্টেম্বরের গোড়ার দিকে ভেস্তে যায়। এতে অনেক বিশ্লেষকের মনে এই প্রশ্ন জেগেছে যে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দীর্ঘতম সামরিক সম্পৃক্ততার ফল কি তাহলে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলো? একই সঙ্গে এই প্রশ্নও তাঁদের মনে জেগেছে, এ ঘটনা কীভাবে আফগানিস্তানে মাদকের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের লড়াইয়ে প্রভাব ফেলবে?

আফগানিস্তান বিশ্বে আফিমের ৯০ শতাংশ ও ইউরোপে ৯৫ শতাংশ সরবরাহ করে। তালেবান অবৈধ মাদক ব্যবসা থেকে প্রতিবছর ৪০ কোটি ডলার আয় করে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র আফগান যুদ্ধে অবৈধ মাদক পাচারের বিরুদ্ধে ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল, কিন্তু মধ্য এশীয় দেশটি থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের কারণে সেখানে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মার্কিন ভূমিকার অবসান হতে পারে। তালেবান ও অন্য আফগান জঙ্গিরা অবৈধ মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য খুব কম প্রণোদনাই পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র যদি তার সৈন্যদের আফগানিস্তান ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার মাদক ব্যবসাকে বাড়তে দিতে না চায়, তবে মার্কিন কূটনীতিকদের অবশ্যই এই সমস্যাকে তালেবানের সঙ্গে মিলে সমাধান করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র তালেবানের সঙ্গে শান্তি আলোচনা শুরুর আগে মার্কিন নীতিনির্ধারকেরা আফগানিস্তানে অবৈধ মাদক ব্যবসা দমন করাকে বিদ্রোহীদের দুর্বল করার উপায় হিসেবে দেখেছিলেন। তালেবানের সঙ্গে একটি শান্তিচুক্তি করার তাড়াহুড়ায় ট্রাম্প প্রশাসন সেখানে অবৈধ মাদকের ব্যবসা নির্মূলে তার এই কৌশল বর্জন করেছে বলে মনে হয়। মার্কিন জেনারেলরা ২০১৭ সালের নভেম্বরে তালেবানের মাদকের আখড়া ধ্বংস করতে আফগান ও মার্কিন যুদ্ধবিমান মোতায়েনের নতুন কৌশল ঘোষণা করেছিলেন, কিন্তু ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রই এ কর্মসূচি বাতিল করে দেয়। মার্কিন কূটনীতিক ও তালেবান আলোচকদের মধ্যে একই মাসে শান্তি আলোচনা শুরু হয়। কিন্তু তার আগে থেকেই আফগানিস্তানে মাদকবিরোধী লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে ভাটা পড়ে।

সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মতো মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধও আফগানিস্তানে সীমিত ফল অর্জন করেছে। তারপরও যুক্তরাষ্ট্র ও তার আফগান অংশীদারদের মধ্য এশিয়ার এই দেশকে মাদক ব্যবসায়ীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হওয়া থেকে রক্ষা করার ব্যাপারে সুস্পষ্ট আগ্রহ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র যখন আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যাবে, তখন আফগানিস্তানের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখার ভারটি আফগান কর্তৃপক্ষের হাতে পড়বে, যাদের শান্তিচুক্তির নামে তালেবানের সঙ্গে সমঝোতা করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকবে না। আফগান ও মার্কিন কূটনীতিকেরা যদি শান্তিপ্রক্রিয়া আবার শুরু করেন এবং অবৈধ মাদক পাচারের ক্ষেত্রে বিদ্রোহীদের ভূমিকার বিষয়টি আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করেন, তবে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে মাদকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভূমিকা রাখার আরও একটি সুযোগ পেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র পর্যাপ্ত ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার টেবিলে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে তালেবান এই অবৈধ মাদকের ব্যবসা থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়ে আত্মসমর্পণ করতে ইচ্ছুক হতে পারে।

আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সম্ভাব্য সময় সম্পর্কে তালেবানের সঙ্গে আলোচনার সময় মার্কিন কূটনীতিকেরা আল–কায়েদাকে মোকাবিলা করার জন্য মধ্য এশিয়ার দেশটিতে কমান্ডোদের একটি টাস্কফোর্স মোতায়েন করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন এবং তালেবানের কাছ থেকে এই অঙ্গীকার আদায় করার চেষ্টা করেছিলেন যে তারা সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলোকে মার্কিনবিরোধী হামলার জন্য আর কখনো আফগানিস্তানকে লঞ্চ প্যাড হিসেবে ব্যবহার করতে দেবে না। এ ধরনের ব্যবস্থা মাদকবিরোধী লড়াইয়ে আফগান-আমেরিকান ভবিষ্যতের প্রচেষ্টার একটা নিশ্চয়তা দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র তালেবানকে অবৈধ মাদক ব্যবসা নির্মূলের জন্য গঠিত ডিইএ বিশেষ এজেন্ট ও আইএনএল বিশেষজ্ঞদের একটি দলকে পরামর্শক হিসেবে আফগানিস্তানে থাকার অনুমতি দেওয়ার জন্য চাপ দিতে পারে। এ ছাড়া মার্কিন আলোচকেরা অবৈধ মাদক ব্যবসার ওপর ফের নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য তালেবানকে অনুরোধ করতে পারেন।

তবে এসব শর্তের বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র কী দেবে, তা কেবল আলোচনার মাধ্যমেই নির্ধারিত হতে পারে। তবে তালেবান, সম্ভবত যারা মাদক পাচারের ওপর নির্ভরশীল, সেই তালেবান যুদ্ধবাজ নেতাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আয়ের বিকল্প উৎস দাবি করতে পারে। তালেবানের সঙ্গে শান্তি আলোচনা যুক্তরাষ্ট্রকে আফগানিস্তানে তাদের মাদকবিরোধী লড়াইয়ের লক্ষ্যমাত্রার বিষয়টি অনুধাবনের সবচেয়ে ভালো সুযোগ এনে দিয়েছিল। শান্তিপ্রক্রিয়াটির আপাতব্যর্থতার কারণে মার্কিন কূটনীতিকেরা ইরান, উত্তর কোরিয়া ও অন্যদের দিকে মনোনিবেশ করেছেন। যদি যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের মাদকবিরোধী লড়াইয়ে পুনরায় বিনিয়োগ না করে, তাহলে আফগান ও মার্কিন কর্মকর্তাদের সম্ভবত আগামী কয়েক দশক অবৈধ মাদক ব্যবসার পরিণতিগুলোকে মোকাবিলা করতে হবে।

খালিজ টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত
অস্টিন বডেট্টি এশিয়া এবং আফ্রিকার রাজনীতি ও সংস্কৃতি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ