Thank you for trying Sticky AMP!!

আফগান তালেবানের শক্তি

২০০১ সালে আল–কায়েদার কারণে তালেবান ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিল। ছবি: রয়টার্স

আফগান তালেবান বিশ্বকে অবাক করে দিয়েছিল, যখন তারা দৃঢ়তার সঙ্গে জানিয়েছিল যে আফগানিস্তানে আল–কায়েদা নামের কোনো সংগঠনের অস্তিত্ব নেই। যুদ্ধের কৌশল হিসেবে কোনো কিছু অস্বীকার করার ইতিহাস আফগান তালেবানের রয়েছে ঠিকই কিন্তু আফগানিস্তানে আল–কায়েদার উপস্থিতি অস্বীকার করে তাদের এই বিবৃতি তাদের ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার ইঙ্গিত দেয়। দুই জঙ্গিগোষ্ঠীর সহযোগিতা ও বন্ধুত্বের যে দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, বর্তমান বাস্তবতায় তা বজায় রাখা আরও কঠিন বলে মনে করছে তালেবান।

১৯৯০–এর দশকের শেষ দিকে প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় আসার পর থেকে তালেবান শত্রু ও মিত্রদের ক্ষেত্রে সমানভাবে ‘অস্বীকার করার কৌশল’ ব্যবহার করে আসছে। সেই সময়টি ছিল এমন এক সময়, যখন আফগানিস্তান পাকিস্তানি সন্ত্রাসীসহ আন্তর্জাতিক জিহাদিদের আশ্রয়স্থল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এটি ওপেন সিক্রেট ছিল যে লস্কর-ই-জাঙ্গভির সন্ত্রাসীরা তখন আফগানিস্তানে তাদের প্রশিক্ষণশিবির চালাচ্ছিল। তবে বেশ আশ্চর্যের বিষয়, পাকিস্তান যখনই এই সন্ত্রাসীদের হস্তান্তর দাবি করেছে, তখন তালেবান আফগানিস্তানের মাটিতে তাদের উপস্থিতির কথা অস্বীকার করেছে। তবে এখনো আফগান তালেবান পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠনগুলো, বিশেষ করে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতার কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করে না।

জাতিসংঘের অ্যানালিটিক্যাল সাপোর্ট অ্যান্ড স্যাঙ্কশনস মনিটরিং টিমের একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে পাকিস্তানি জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো, মূলত টিটিপি আফগান তালেবানের অনুমতি এবং সমর্থন নিয়ে আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে কাজ করছে। অনেক ক্ষেত্রেই আফগান তালেবান পাকিস্তানের আশঙ্কা সত্ত্বেও টিটিপি এবং এর সহযোগী সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নারাজ। একই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে আফগান তালেবান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার সময় আল–কায়েদার সঙ্গে নিয়মিতভাবে পরামর্শ করেছিল এবং আল–কায়েদা এই চুক্তিকে সম্মতি জানায়।

 তালেবানের ভয়েস অব জিহাদ ওয়েবসাইটে পশতু ভাষায় পোস্ট করা একটি বিবৃতিতে আফগান তালেবান দাবি করেছে যে আফগানিস্তানের ভেতরে আল–কায়েদার উপস্থিতি নেই। তালেবানের এই বিবৃতিতে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে মার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ডের শীর্ষ জেনারেল কেনেথ এফ ম্যাকেঞ্জি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন যে তালেবান যদি সেখানে আল–কায়েদার বাহিনীকে সমর্থন দেওয়া বন্ধ না করে, তবে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনাদের পুরোপুরি প্রত্যাহারের সুপারিশ তিনি করবেন না।

তালেবান এমন ধারণাও দিয়েছে যে আল–কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার প্রক্রিয়া চলছে, তবে এর কোনো প্রমাণ নেই। এমনিতে তালেবানের আল–কায়দার সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়ার কোনো রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা নেই। তালেবান তাদের রাজস্ব এবং তহবিলের স্বাধীন উৎস তৈরি করেছে বলে তাদের আর্থিক সহায়তারও প্রয়োজন নেই। তবে আল–কায়েদার ৫০০ থেকে ৬০০ সদস্য এখনো আফগানিস্তানে রয়েছে বলে জানা গেছে এবং তারা তালেবানের জন্য কৌশলগত বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, তালেবান মনে করছে যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি ভালো চুক্তি করতে পেরেছে। এমন পরিস্থিতিতে আল–কায়েদার সঙ্গে তালেবানের সম্পর্ক অব্যাহত থাকলে তা শান্তিপ্রক্রিয়াকে নস্যাৎ করতে পারে বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন।

 ২০০১ সালে আল–কায়েদার কারণে তালেবান ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিল এবং গোষ্ঠীটিকে দীর্ঘ যুদ্ধ করতে হয়েছে। এ কারণে আল–কায়দার কাছে তালেবানের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা তাদের রাজনৈতিক ও আদর্শিক আচরণের বিরুদ্ধ বিবেচিত হতে পারে। আল–কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলে তালেবানের পদমর্যাদা ও পদ-পদবির ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ সংকট দেখা দিতে পারে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আল–কায়েদা ও তালেবান আন্দোলনের শিকড় এতটাই গভীরে প্রোথিত যে এই দুটিকে আলাদা করা কার্যত অসম্ভব। এটি কেবল যৌথ প্রশিক্ষণ নয়, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করা এবং দুই পক্ষের মধ্যে আন্তবিবাহের মাধ্যমে দৃঢ় পারিবারিক বন্ধন তৈরি হয়েছে।

এমন একটা পরিস্থিতিতে তালেবানের জন্য সবচেয়ে ভালো বিকল্প হচ্ছে আল–কায়েদার সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি অস্বীকার করার কৌশল নেওয়া। তবে আফগান মাটিতে টিটিপি এবং অন্যান্য পাকিস্তানি জঙ্গিগোষ্ঠীর উপস্থিতির ব্যাপারে একই দৃষ্টিভঙ্গির পেছনে আরও কিছু কারণ থাকতে পারে। টিটিপি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আফগান তালেবানের কৌশলগত হাতিয়ার—এই প্রচলিত তত্ত্ব ছাড়াও আফগান তালেবান পাকিস্তানি তালেবানকে তাদের যুদ্ধে জড়িয়ে নিয়েছে। এ–জাতীয় রূপান্তর পাকিস্তানের জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে দেখা দিতে পারে, যা দেশটিকে ধর্মীয় উগ্রবাদ এবং সহিংস সাম্প্রদায়িকতার গভীরে ঠেলে দিতে পারে। এটি আল–কায়েদা এবং টিটিপির বিজয় হিসেবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।

দ্য ডন পত্রিকা থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত

মুহাম্মদ আমির রানা পাকিস্তানি নিরাপত্তা বিশ্লেষক