Thank you for trying Sticky AMP!!

আবরারের জন্য

আবরার ফাহাদ। ছবি: সংগৃহীত

এ কী কষ্ট, এ কী বেদনা! ওদের আচরণ মধ্যযুগের বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। আবরার হত্যা নিয়ে স্বদেশে–বিদেশে সর্বত্র ঘৃণার ঝড় বইছে। মায়ের আহাজারিতে তৈরি হয়েছে বিষাদসিন্ধু। জলজ্যান্ত একটা সতেজ যুবক, যে আগামীর জন্য তৈরি হচ্ছিল, দেশের ভালো-মন্দ নিয়ে মতামত প্রকাশ করেছিল, তাকে কেন পিটিয়ে হত্যা করা হলো?

 আজ সব মায়ের মনে একই দুঃখ, একই বেদনা। ১০ মাস পেটে ধারণ করা, বুকের দুধ খাইয়ে সন্তান লালন করা যে কী কষ্ট, একমাত্র মা-ই বুঝতে পারেন। পিঁপড়ার কামড় থেকে বাঁচাতে সন্তানকে মাটিতে রাখেননি। বুকের মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ স্থানে যাকে তিল তিল করে এত বড় করেছেন। সেই বুকের ধনকে পিটিয়ে পিটিয়ে মেরেই ফেলল ওরা। এই কষ্ট কেমন করে সইবেন মা? যে ছিল বুকের ধন, সারা রাত দুই চোখ এক করতে পারেননি। রাতের পর রাত বিনিদ্রায় কাটিয়েছেন।

যে শিশু কথা বলতে পারে না, তার কান্না দিয়ে মাকে জানায় তার খিদের কথা। তার কষ্টের একমাত্র ভাগীদার মা। ছোট ছোট আঙুল দিয়ে মায়ের হাত ধরতে ধরতে শিশুটি কখন যে মাকে ছাড়িয়ে গেছে, একমাত্র মা-ই বুঝতে পারতেন। কী আনন্দ! কত স্বপ্ন তাকে নিয়ে। গর্ব হতো মায়ের, দেখে দেখে চোখ জুড়াতেন। আবার কোনো সময় অজানা আতঙ্কে মা শিউরে উঠতেন। না-জানি কার নজর লাগে। ঘরের বাইরে বের হওয়ার সময় মা কত দোয়া পড়তেন। বলতেন, ‘তাড়াতাড়ি আসিস বাবা।’ আবরার মিষ্টি করে হেসে হয়তো মাকে জড়িয়ে ধরে বলত, ‘আমি কি সেই ছোটটি আছি?’ আবার বাইরে থেকে যখন আসত, বাড়ির বাইরে থেকে মা মা বলে চিৎকার করে ডাকত।

মনে হয় আবরার আমারই ছেলে। কী দোষ করেছিল সে? আমার ছেলের গায়ে আমি তো কখনো হাত দিইনি। কোন অধিকারে তাকে পিটিয়েছিস তোরা, কেন আমার বুক খালি করেছিস? আমার ছেলে তো দেশের কথা, দেশের মানুষের কথা বলত। তোরা যখন পিটাচ্ছিলি, ওর মা মা চিৎকার শুনিসনি? তোদের নিশ্বাস বন্ধ হচ্ছিল না? ওর করুণ চাহনি দেখে তোর ভাইয়ের কথা, তোদের মায়ের কথা একবারও মনে হয়নি?

নিষ্ঠুর তোরা, বর্বর, তোরা মানুষবেশী শয়তান। তোরা অন্ধ হয়ে গিয়েছিলি, তোদের অনুভূতিগুলোকে শয়তান পাথরচাপা দিয়েছিল।

আমি বিচার চাই না। আমার আবরার, আমার বুকের ধনকে চাই—ফিরিয়ে দে। আমি হাশরের ময়দানে আল্লাহর কাছে আমার সন্তানকেই চাইব।

কবরী: অভিনেত্রী, সাবেক সাংসদ