Thank you for trying Sticky AMP!!

আরব বসন্ত কি ফিরে আসছে?

রয়টার্স ফাইল ছবি।

লেবাননে সরকারের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন বিক্ষোভে মনে হচ্ছে দেশটির প্রবাদতুল্য সাম্প্রদায়িকতা হঠাৎ করেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

একই ধরনের বিক্ষোভ ইরাক, মিসর, সুদান, আলজেরিয়া, মরক্কো ও তিউনিসিয়ায়ও হয়েছে। নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ইরানও ব্যাপক বিক্ষোভের মুখোমুখি হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে প্রতিবাদ–বিক্ষোভের এই ঢেউ দেখায় যে ২০১০–১১ সালে যেসব কারণে আরব বসন্তের সূত্রপাত হয়েছিল, সেসব কারণ এখনো রয়ে গেছে। এই বিক্ষোভ আমাদের ২০১১ সালের কায়রোর তাহরির স্কয়ারের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। এই সব বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে একটি সাধারণ ধারণা পাওয়া যায় যে: অর্থনৈতিক মন্দা, সামাজিক ও রাজনৈতিক বিপর্যয়, সহিংসতা, দমন-পীড়ন এবং অযোগ্য সরকারগুলোর দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবার অনেক কিছু করার রয়েছে। তাহলে আরব বিশ্ব এবং এর আশপাশের এলাকায় আবার বিপ্লব ফিরে এসেছে? অথবা আরও সঠিকভাবে বলতে গেলে বিপ্লব কি কোথাও থেকে শুরু হয়ে গেছে?

আরব বসন্ত শুরু হয়েছিল তিউনিসিয়ায়। ২০১০ সালের ১৭ ডিসেম্বর নিজের গায়ে আগুন দিয়ে বিপ্লবের মশাল জ্বেলে দেন তিউনিসিয়ার এক নাগরিক মোহাম্মদ বুয়াজিজি। ঘুষ, দুর্নীতি, বেকারত্ব, রাজনৈতিক নিপীড়ন ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে তা ছিল এক জ্বলন্ত বিদ্রোহ। এই বিদ্রোহের আগুন আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এসব দেশ হচ্ছে তিউনিসিয়া, মিসর, লিবিয়া, ইয়েমেন, বাহরাইন ও সিরিয়া।

২০১২ সালে আল–জাজিরার রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারাকে তাঁর দ্য ইনভিজিবল আরব: দ্য প্রমিস অ্যান্ড পেরিল অব দ্য আরব রেভলু্যশনস শীর্ষক বইটি প্রকাশের পরে আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তিনি মনে করেন কিনা যে আরব বিশ্ব আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে? তার উত্তর ছিল হ্যাঁ বাচক।

আরব বসন্তের পর থেকে আরব বিশ্বে এবং এর বাইরে অনেক কিছু ঘটেছে। দুটি পাল্টা বিপ্লবী শক্তি আরব বিপ্লবগুলোকে লাইনচ্যুত করার চেষ্টা করেছে: একদিকে আঞ্চলিক স্বৈরাচারী সরকারগুলো (যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের সহায়তায়) এবং অন্যদিকে ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড লেভান্ত (আইএসআইএল বা আইএসআইএস)। এই দুটি প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি আরব বিদ্রোহের চেতনা দমিয়ে রেখে সর্বনাশ করেছে।

বিগত কয়েক বছরে তারা সফল হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। তারা বিদ্রোহগুলোকে সাম্প্রদায়িকতার পর্দায় মুড়িয়ে দেয়। তারা অবাধ্য দেশগুলোর লক্ষ্য ও আকাঙ্ক্ষার বিষয়ে সন্দেহ উত্থাপন করে এবং তাদের প্রতিবাদকে বিদেশি চক্রান্ত হিসেবে উপস্থাপন করে। তারা সহিংস দমন–পীড়নকে ন্যায্যতা দিতে ‘অভিবাসন’ ও ‘সন্ত্রাসবাদ’–এর মতো ভীতিজনক শব্দ দিয়ে বিশ্বকে ব্ল্যাকমেল করেছে। তবে নৈতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ঘটনাবলি এ–জাতীয় সব অপচেষ্টাকে নস্যাৎ করে দিয়েছে। এই অঞ্চলের জনগণ ফের রাস্তায় নেমে এসে তাঁদের দাবি জানাচ্ছেন। কায়রোর তাহরির স্কয়ারে যেমনটি ঘটেছিল, ‘রুটি, স্বাধীনতা, সামাজিক ন্যায়বিচার’ ইত্যাদি স্লোগান ফিরছে মানুষের মুখে মুখে।

প্রতিবাদের এই নতুন ঢেউ ওঠার পর থেকে বৈশ্বিক বা স্থানীয় প্রবণতার প্রেক্ষাপটে ব্যাখ্যা দেওয়ার নানা প্রচেষ্টা করা হয়েছে। একই ধরনের বিক্ষোভ চিলি, ইকুয়েডর, আর্জেন্টিনা এবং লাতিন আমেরিকাসহ আরও অনেক জায়গায় হয়েছে।

নিউইয়র্ক টাইমস–এর এক নিবন্ধে ডিক্লান ওয়ালশ এবং ম্যাক্স ফিশার ইঙ্গিত দিয়েছেন যে চিলি থেকে লেবানন পর্যন্ত অশান্তির মূলে আছে অযোগ্য সরকারগুলোর অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা। তাঁরা বলেছেন: অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা ও বিপর্যয় সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভের অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। তবে বিক্ষোভ বা প্রতিবাদের কারণ হিসেবে এই সহজ ব্যাখ্যা বিক্ষোভকারীদের ভুলভাবে উপস্থাপন করতে পারে।
এ ব্যাপারে কোনো ব্যাখ্যা দেওয়ার আগে যেসব দেশে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হচ্ছে, সেসব দেশের আঞ্চলিক ইতিহাসকে বিবেচনায় নেওয়া দরকার।

১৯৬৩ সালে রাজনৈতিক দার্শনিক হান্না অ্যারেনডট আমেরিকান ও ফরাসি বিপ্লবের তুলনা করে একটি বই প্রকাশ করেছিলেন। এতে তিনি বলেছিলেন যে প্রতিবাদ বিক্ষোভ বা গণজাগরণ ‘জনসাধারণের সুখ’–এর কারণ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি যে আমরা আজ
আরব বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভকারীদের হাসিমুখ দেখছি, তা তাদের দুঃখকষ্ট ভোগ করে টিকে থাকার সুখের প্রতিক্রিয়া।

তবে যে যা–ই বলুক না কেন আরব বসন্ত যে ফিরে আসছে, এ কথা সত্যি। প্রায় এক দশক আগে আন্দোলনের মূল চালিকা শক্তি ছিল শাসকগোষ্ঠীর ওপর পুঞ্জীভূত ক্ষোভ। সেই একই ক্ষোভ এবারও আরব অঞ্চলকে অস্থির করে তুলেছে। তবে আরব বিশ্বকে মনে রাখতে হবে এই আন্দোলন দমনে সহিংস উপায়গুলো খুব একটা কাজে আসবে না। জনগণের বিক্ষোভ প্রশমিত করতে হবে শান্তিপূর্ণ উপায়ে। সে উপায়গুলোই তাদের এখন খুঁজে বের করতে হবে।

আল–জাজিরা থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত
হামিদ দাবাশি: যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক