Thank you for trying Sticky AMP!!

ইউরোপের নতুন শরণার্থী সমস্যা

আফগানিস্তানের মানবিক সংকট এরই মধ্যে বিশ্বের অন্য প্রান্তে সংঘাতকে গভীর করে তুলেছে। এর মধ্যে ইউরোপও রয়েছে। সেখানে বেলারুশের সঙ্গে দেশটির ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) প্রতিবেশী পোল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া ও লাটভিয়ার মধ্যে দ্বন্দ্ব বেড়ে চলেছে।

কাবুল পতনের আগে থেকেই বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দার লুকাশেঙ্কো তাঁর দেশের সীমানায় শরণার্থী ও অভিবাসী সংকট বাড়িয়ে তুলছিলেন। ইইউ দেশটির ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তার শোধ তুলতে এবং শরণার্থীদের কাছ থেকে টাকা কামাতে এ পথ বেছে নিয়েছেন তিনি। ইরাক ও তুরস্কের শহরগুলো থেকে বিমান পরিচালনা করছে বেলারুশ। নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে পশ্চিম ইউরোপে পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে কয়েক হাজার ডলার নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বেলারুশ তাদের এ ‘মানবীয় মালসামান’ পোল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া ও লাটভিয়ার সীমান্তে ফেলে দিয়ে আসছে।

এ বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত লিথুয়ানিয়া সীমান্তে চার হাজার শরণার্থী এসে পৌঁছেছে। গত বছরের তুলনায় এ সংখ্যা ৫০ গুণ বেশি। শরণার্থীর এ স্রোত দেশটির জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। এরই মধ্যে লিথুয়ানিয়া ও লাটভিয়া একধরনের জরুরি অবস্থা জারি করেছে, এখন যুক্ত হয়েছে পোল্যান্ডও। নিঃস্ব, ক্ষুধার্ত, দ্বিধাগ্রস্ত শরণার্থীদের পোল্যান্ডের সীমান্ত শহর থেকে জোর করে ধরে আবার বেলারুশ সীমান্তে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যদিও এ ধরনের ফেরত পাঠানো জেনেভা কনভেনশনের পরিপন্থী। কিন্তু ইইউভুক্ত দেশগুলো এখন হরহামেশাই এর চর্চা করছে।

পোল্যান্ড এখন শরণার্থীদের আন্তর্জাতিক সুরক্ষার অধিকার খোলাখুলিভাবে উপেক্ষা করছে। ফলে সীমান্তে শরণার্থীশিবির বাড়ছেই। দুই সপ্তাহ ধরে পোল্যান্ডের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু আফগানিস্তান থেকে আসা ৩২ জন অভিবাসী। তাদের পোল্যান্ড-বেলারুশ সীমান্তের মাঝখানে পাঠানো হয়েছে। হাড়জিরজিরে নারী, শিশু ও পুরুষের এই দলকে দুই দেশের পুলিশ, সীমান্তরক্ষী ও সৈন্যরা ঘেরাটোপের মধ্যে আটকে রেখেছে। তাদের মাটিতেই ঘুমাতে হচ্ছে। আইনজীবী, সাংবাদিক, বিরোধীপক্ষের এমপি, চিকিৎসক—কাউকেই তাদের কাছে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি খাবারও দেওয়া হচ্ছে না। ফলে বেলারুশের জনগণের দেওয়া রুটি খেয়ে আর নদীর পানি পান করে থাকতে হচ্ছে তাদের। পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা আর ওষুধ না পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে শরণার্থীরা।

পোল্যান্ডের ডি–ফ্যাক্টো নেতা এবং শান্তি ও ন্যায়বিচার দলের চেয়ারম্যান ইয়ারোস্লাভ কাচজিনস্কি এ পরিস্থিতিকে নিজের প্রোপাগান্ডার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। তঁার দলের জনসমর্থন এখন ৩০ শতাংশের নিচে নেমে গেছে। সামনের নির্বাচনে জয়ের নিশ্চয়তা এবার নেই। পোলিশ সরকার এখন একটা ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায়। এরই মধ্যে অসহায় একদল মানুষকে শায়েস্তা করার জন্য হেলিকপ্টার আর মেশিনগান সজ্জিত করে এক হাজার সেনা পাঠানো হয়েছে। বেলারুশ সীমান্তে উঁচু করে কাঁটাতারের বেড়া তুলছে তারা। সামরিক পোশাক পরে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রিপরিষদ সেখানে মহড়া দিয়ে গেছেন। শরণার্থীদের নতুন ঢল থেকে পোল্যান্ডকে রক্ষার অঙ্গীকার তঁারা করেছেন।

ইউরোপের মানবাধিকার আদালত গত ২৫ আগস্ট পোল্যান্ড সীমান্তে অবস্থানরত শরণার্থীদের খাবার, পানি, কাপড়চোপড়, চিকিৎসাসেবা, সম্ভব হলে সাময়িক আশ্রয় দেওয়ারও আদেশ দিয়েছেন। কিন্তু পোল্যান্ড সরকার দাবি করেছে, অবৈধ অভিবাসীদের জন্য কিছু করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কেননা শরণার্থীরা বেলারুশের প্রান্তে রয়েছে। যদিও এটা সত্য নয়। দায়সারাভাবে আফগান শরণার্থীরা যেখানে রয়েছে, সেখান থেকে অনেক দূরে বেলারুশ সীমান্ত পেরিয়ে খাবার ও ওষুধের ট্রাক পাঠাতে চেয়েছে পোল্যান্ড। বেলারুশ যে সে ট্রাক ঢুকতে দেবে না, সেটা আগে থেকেই অনুমেয় ছিল।

কোনো পক্ষের আচরণই যৌক্তিক নয়। কেননা সব পক্ষই বিদ্বেষপূর্ণ রাজনীতির খেলায় মেতেছে। পোলিশ সরকারের আচরণ উদারনৈতিক গণমাধ্যম, এনজিও, বিরোধী মতের লোকদের কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে পোল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং ইউরোপীয় কাউন্সিলের সভাপতি ডোনাল্ড টাস্কের স্বরও লক্ষণীয়ভাবে নমনীয় হয়ে গেছে। এ গ্রীষ্মেই রাজনীতিতে তিনি ফিরেছেন। তিনিও সীমান্তে কঠোর বিধিনিষেধের দাবি জানিয়েছেন।

নিঃস্ব, ক্ষুধার্ত, দ্বিধাগ্রস্ত শরণার্থীদের পোল্যান্ডের সীমান্ত শহর থেকে জোর করে ধরে আবার বেলারুশ সীমান্তে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যদিও এ ধরনের ফেরত পাঠানো জেনেভা কনভেনশনের পরিপন্থী। কিন্তু ইইউভুক্ত দেশগুলো এখন হরহামেশাই এর চর্চা করছে

টাস্ক ভালো করেই জানেন, উদারনৈতিক গণমাধ্যম এবং এনজিও যেমনটা বলছে, পোল্যান্ডের মানুষ ততটা উদার নন। সাম্প্রতিক এক জরিপ থেকে দেখা যাচ্ছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ পোলিশ (৫৪ শতাংশ) অভিবাসী ও শরণার্থীদের গ্রহণ করার পক্ষে নয়। মাত্র ৩৮ শতাংশ ভিনদেশির জন্য সীমানা খুলে দেওয়ার পক্ষে। পোল্যান্ড-বেলারুশের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া ঠিক কি না, এমন প্রশ্নে দেশটির ৪৭ শতাংশ মানুষ বেড়া তোলার পক্ষে মত দিয়েছেন। বিপক্ষে মত দিয়েছেন ৪৩ শতাংশ।

অভিবাসী ইস্যুকে কেন্দ্র করে ওঠা প্রোপাগান্ডা থেকে সর্বোচ্চ ফল পেতে পোল্যান্ড সরকার খুব সতর্কতার সঙ্গে এগোচ্ছে। যদি পোল্যান্ড কর্তৃপক্ষ অভিবাসীদের নিয়ে সত্যি সত্যি উদ্বিগ্ন হতো, তাহলে অনেক আগেই তারা সীমান্তে বেড়া দিত। লিথুয়ানিয়া-বেলারুশ সীমান্তের পরিস্থিতিও মাঝেমধ্যে একই রকম হয়ে যাচ্ছে। যদি পোল্যান্ড-বেলারুশ সরকার যৌথভাবে প্রোপাগান্ডায় নামত, তাহলে সেটা এর থেকে বেশি ফলপ্রসূ হতো না।

ইংরেজি থেকে অনূদিত, স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট

l স্লাভমির সিয়েরাকোভস্কি পোল্যান্ডের সাংবাদিক