Thank you for trying Sticky AMP!!

ইন্টারনেটকে কবজায় আনতে চায় যুক্তরাষ্ট্র

চলতি সময়টাতে একমাত্র যে ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী-বামপন্থীরা এক কাতারে এসেছেন, সেটি হলো ‘টেকল্যাশ’ (কোনো কিছুর নেতিবাচক প্রভাব বোঝাতে ইংরেজিতে ব্যবহৃত শব্দ ‘ব্যাকল্যাশ’-এর অনুকরণে)। সব পক্ষের লোকজনই মনে করছেন, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোকে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করার সময় এসে গেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সেটা কীভাবে সম্ভব?

প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ও ডেমোক্রেটিক দলের সর্বোচ্চ পদধারী কর্মকর্তা ন্যান্সি পেলোসি সম্প্রতি বলেছেন, ‘আত্মনিয়ন্ত্রণের যুগ শেষ হয়ে গেছে।’ এ সপ্তাহেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ে একটি সম্মেলন করবেন। সেখানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আলোচনা হবে।

পিউ রিসার্চ সেন্টারের জরিপে দেখা গেছে, রাজনীতিকেরা তো বটেই, সাধারণ আমেরিকানরাও মনে করেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া তথ্য পোস্ট করা সহিংস অপরাধের চেয়েও বড় হুমকি। ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি) এবং ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস (ডিওজি) ফেসবুক, আমাজন, গুগল ও অ্যাপলের বিরুদ্ধে অনাস্থাসূচক তদন্ত শুরু করেছে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠান যদি অনাস্থাসূচক কোনো অপরাধ করে থাকে এবং তা প্রমাণিতও হয়, তাহলেও বিদ্যমান আইন দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া খুব কঠিন হবে। দেখা যাচ্ছে, ফেক আইডি দিয়ে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা ভিডিও ফুটেজ ও ভুয়া খবর ছড়িয়ে রাজনৈতিক অবস্থাকে প্রভাবিত করার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। এতে মূল ধারার সংবাদমাধ্যমের সংবাদ নিয়ে নানা ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে।

এখন আমেরিকার রাজনীতিক শ্রেণি একজোট হয়ে এমন একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বানাতে চায়, যার মাধ্যমে তথ্যপ্রবাহের উৎসকে পুরোপুরি নজরদারিতে আনা সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে ডিজিটাল জায়ান্টগুলো তাদের নিজেদের স্বচ্ছতা বাড়াতে বাধ্য হবে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরাও বেপরোয়া হতে পারবেন না। এতে স্থানীয় সাংবাদিকতার গ্রহণযোগ্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। এর বাইরে রেডিও, টেলিভিশন, কেব্‌ল এবং টেলিকমিউনিকেশন সংস্থাগুলোও যাতে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখে, সে দিকটিও নতুন আইনে অন্তর্ভুক্ত রাখা হবে। ইতিমধ্যেই আপত্তিকর, ক্ষতিকর ও বেআইনি পোস্ট ফিল্টার ও ব্লক করতে ডিভাইস বসানো হয়েছে।

ফেসবুক ও ইউটিউব কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে লাখ লাখ পোস্ট সরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও জনস্বার্থের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে এমন পোস্ট আসছে। জনগণ ও সরকারের জন্য ক্ষতিকর এমন ভিডিও পোস্টে বিজ্ঞাপন দেওয়া থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোকে বিরত রাখার ক্ষেত্রেও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দিক থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তবে বিষয়টি অত্যন্ত কঠিন হওয়ায় এ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের নিবিড়ভাবে কাজ করতে হবে। অবশ্য ইন্টারনেট কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণে ফেসবুক নিজেই নতুন আইন প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছে। এর প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ বলেছেন, ক্ষতিকর কনটেন্টের ওপর নজর রাখা শুধু ফেসবুকের জন্য বেশ কঠিন। তিনি ফেসবুক ব্যবহারকারী দেশগুলোর সরকার ও ইন্টারনেট কনটেন্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে ভূমিকা রাখতে বলেছেন।

আসলে বৈশ্বিক ইন্টারনেট ও এর প্রযুক্তি প্রক্রিয়া এখনো পশ্চিমাদের নিয়ন্ত্রণে। এ কারণে ইন্টারনেটের অপব্যবহারের দায় তাদের ঘাড়েই বেশি বর্তায়। মুক্ত ইন্টারনেটে এমন অনেক সমস্যা আছে, কমবেশি সব দেশের জন্যই সমান গুরুতর। উন্মুক্ত তথ্যজগতে প্রবেশের সুযোগ মানুষকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে প্রভাবিত করতে পারে। বিশেষ করে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এর প্রভাব ভয়াবহ হতে পারে।

যেহেতু বৈশ্বিক ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণের বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্রের হাতে, সেহেতু যুক্তরাষ্ট্র চাইলে এর মাধ্যমে চরবৃত্তিও চালাতে পারে। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এগিয়ে আসছে এবং এই নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে দেশি–বিদেশি বিভিন্ন পক্ষ সক্রিয় হচ্ছে, সেহেতু রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয় পক্ষই ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে একমত হয়েছে। ভুয়া খবর ছড়িয়ে কোনো দলের বিরুদ্ধে যাতে অপপ্রচার চালানো সম্ভব না হয়, সেদিকে লক্ষ রেখেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

হোয়াইট হাউসের সামাজিক যোগাযোগের বিষয়ে সম্মেলন হওয়ার পর এ বিষয়ে আরও স্পষ্ট ধারণা হয়তো পাওয়া যাবে।

ইংরেজি থেকে অনূদিত। স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
কারেন কর্নব্লাহ্: যুক্তরাষ্ট্রের কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের ডিজিটাল পলিসিবিষয়ক একজন জ্যেষ্ঠ ফেলো
অ্যালেন পি গুডম্যান: জার্মান মার্শাল ফান্ডের একজন ফেলো