Thank you for trying Sticky AMP!!

ইমরানের সেনাঘনিষ্ঠতা ভারতের জন্য সুবিধার?

ইমরান খান । ফাইল ছবি

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান মনে হয় তাঁর পদের ভারে অন্য ব্যক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছেন। তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বের ১০০ তম দিন পূর্ণ হওয়ার দিনে আমি তাঁর সঙ্গে ইসলামাবাদে তাঁর কার্যালয়ে দেখা করি। আমি তাঁকে যেমনটা জানি, সেদিন তাঁকে তার চেয়ে অনেক বেশি গুরুগম্ভীর, সতর্ক ও আনুষ্ঠানিক মনে হয়েছে। আমি তাঁর কার্যালয় থেকে এই ধারণা নিয়ে বের হয়ে এসেছি যে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শিগগিরই কোনো আলোচনা শুরু হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যদিও ইমরান খান ভারত-পাকিস্তান আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন।

ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে কার্তারপুরে শিখ তীর্থযাত্রীদের জন্য ভিসামুক্ত করিডরের উদ্বোধনের খবর কভার করার জন্য আমন্ত্রিত ২২ ভারতীয় সাংবাদিকের মধ্যে আমি ছিলাম একজন। এটা হচ্ছে সেই জায়গা, যেখানে শিখদের ধর্মগুরু গুরু নানক তাঁর জীবনের শেষ কয়টি বছর কাটিয়েছিলেন।

এই করিডরের উদ্বোধন অনুষ্ঠানটি আরও অনেক বেশি আনন্দদায়কভাবে উদ্যাপন করা যেতে পারত। ভারত ভাগের সময় ব্রিটিশরা ভারত থেকে পাকিস্তানকে বের করে আনতে তাদের ঘরবাড়ি এবং উপাসনালয় থেকে মানুষকে উচ্ছেদ করার জন্য একটি নকশা এঁকেছিল। এটি ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে নিষ্ঠুরতম উচ্ছেদ। এই দেশভাগের মানে ছিল ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের শিখ সম্প্রদায়ের লোকজন কেবল দূরবীক্ষণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সীমান্তে অবস্থিত তাঁদের গুরুর শেষ আবাস দেখতে পাবেন। এখন পাকিস্তানে ভারতীয় তীর্থযাত্রীদের কোনো ভিসা ছাড়াই প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে একটি আনন্দদায়ক ঘটনা। কিন্তু এই আনন্দদায়ক ঘটনা সেভাবে উদযাপিত হয়নি।

দুর্ভাগ্যবশত, সীমান্তের দুই পাশে দুই দেশের বিতর্কিত বিবৃতি পরিস্থিতিকে ক্রমেই খারাপের দিকে নিয়ে গেছে। কার্তারপুর করিডর উদ্বোধনের সময় ইমরান খান কাশ্মীরকে ভারতের জন্য একটি কাঁটা হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যার জন্য বারবার উভয় কাশ্মীরে এবং ভারতের অন্য কোথাও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য পাকিস্তানের পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে।

ভারতের পক্ষ থেকে নরেন্দ্র মোদির সরকার এবং বিরোধী কংগ্রেস পার্টি (যারা পাঞ্জাব শাসন করছে) মিশ্র বার্তা দিয়েছে। পাকিস্তানে এই ভিসামুক্ত করিডর উদ্বোধনকে ভারতীয় মন্ত্রীরা বার্লিন দেয়ালের পতনের সঙ্গে তুলনা করলেও দিল্লিতে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাকিস্তানের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা শুরু করার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন। আবার কার্তারপুর করিডর এমন এক সপ্তাহে উদ্বোধন করা হয়েছে, যে সপ্তাহে ভারত ২৬ / ১১ মুম্বাই হামলার দশম বার্ষিকী উদ্যাপন করেছে। ওই হামলায় ছয় মার্কিন নাগরিকসহ ১৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র মুম্বাই হামলার হোতাদের ধরার জন্য ৫০ লাখ ডলার পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা করেছে। যুক্তরাষ্ট্র এর আগে মুম্বাই হামলার জন্য দায়ী জঙ্গিগোষ্ঠীটির প্রধান হাফিজ মোহাম্মদ সাঈদকে ধরার জন্য এক কোটি মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। অথচ সেই জঙ্গিগোষ্ঠী পাকিস্তানে তাদের কার্যক্রম ঠিকই চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে হাফিজ সাইদ প্রার্থীও হয়েছেন।

তাহলে কেন আমি এখনো খানকে সে রকম একজন নেতা হিসেবে অভিহিত করব, যাঁর সঙ্গে ভারত আলোচনা করতে পারে? তবে এটা সত্য যে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা ভারতের জন্য একটি সুবিধা। দীর্ঘ সময়ের জন্য ভারতীয় আমলারা পাকিস্তানের এমন সব আমলার সঙ্গে সংলাপে ব্যস্ত ছিলেন, যাঁদের স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো ক্ষমতা নেই। ১৯৯৭ সালে সন্ত্রাসবাদ, জম্মু ও কাশ্মীর, পানি ভাগাভাগি ও মাদক চোরাচালান নিয়ে উভয় দেশের মধ্যে ‘যৌথ সংলাপ’ হয়েছিল। কিন্তু এসব সংলাপ ব্যর্থ হয়েছে। ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্কের বিষয়ে আর কোনো রকম আমলাতান্ত্রিক তামাশা চালানো যাবে না।

আমাদের সঙ্গে আলোচনায় ইমরান খান বলেছেন, ‘তিনি পাকিস্তানি রাজনীতিকদের মধ্যে সেই একজন হতে পারবেন না, যিনি কিনা বলবেন যে আমি এটা করতে চাই, কিন্তু আমার সেনাবাহিনী আমাকে ছেড়ে দেবে না।’ ভারত যদি পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে না পারে (এবং আমি মনে করি যে ওই চ্যানেলটিও খোলা থাকা উচিত) তাহলে কেন তারা ইমরান খানের সঙ্গে আলোচনায় বসবে না, যিনি কিনা প্রকৃত অর্থে পাকিস্তানের ক্ষমতার অধিকারী সেনাবাহিনীর ঘনিষ্ঠ?

ইমরান খান আরও বলেছেন, ‘এটা এখন সবার জানা যে পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং কাশ্মীর সমস্যার সমাধানে প্রায় একটি চুক্তিতে উপনীত হয়েছিলেন। তখন যেসব শর্তের কারণে চুক্তি ভেস্তে গিয়েছিল, সেসব শর্ত নিয়ে আমরা ফের আলোচনায় বসতে পারি।’

আমার মনে হয় এখন ইমরান খান যে বলছেন, কাশ্মীরের সমস্যা সমাধানযোগ্য, এ ব্যাপারে মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষ করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতার বিষয়টিতে মনোযোগ দেওয়া খুবই দরকার।

সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট, অনুবাদ: রোকেয়া রহমান

বারখা দত্ত: ভারতীয় সাংবাদিক