Thank you for trying Sticky AMP!!

ইরানের পারমাণবিক অচলাবস্থার তালা কীভাবে খুলবে?

তেহরান থেকে ২৭০ কিলোমিটার দূরের একটি পরমাণবিক প্রকল্প

২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতে ইরানকে ফিরিয়ে আনা যাবে এমন কোনো লক্ষণ এখনো দেখা যাচ্ছে না। ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালে ওই চুক্তি থেকে সরে আসেন। চুক্তিতে ইরান তাদের পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি গুটিয়ে আনতে সম্মত হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে সরে আসায়, সেটা ধীরে ধীরে চাপা পড়ে যায় এবং ইরান তাদের কর্মসূচি ফের শুরু করে। সম্প্রতি ভিয়েনায় আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পৃষ্ঠপোষকতায় যুক্তরাষ্ট্র, ইরান ও সংশ্লিষ্ট অন্য দেশগুলোর মধ্যে সাত দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে অংশগ্রহণকারীরা তাদের মতপার্থক্য ঘুচিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি।

এখানে একটি বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে মনে রাখা দরকার যে পরমাণু চুক্তিটি জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) নামে পরিচিত এবং ইরানকে সব ধরনের পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে সরিয়ে আনার জন্য এটি পৃথক কোনো চুক্তি নয়। ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, জার্মানি এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অন্য স্থায়ী সদস্যদের নেতৃত্বাধীন পারমাণবিক বিস্তার রোধ (এনপিটি) চুক্তির একটি অংশ এটি। ইরান কখনো বলেনি তারা পরমাণু চুক্তি থেকে বের হয়ে এসেছে। তারা বারবার বলেছে, চুক্তির বিধানগুলো তারা মেনে চলবে। চুক্তিতে পারমাণবিক প্রযুক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের কথা বলা আছে এবং পারমাণবিক কর্মসূচিকে ইরান অস্ত্র তৈরির পর্যায়ে নিয়ে যাবে না।

২০১৫ সালের চুক্তি ইরানকে একটি ‘পেনাল্টি বক্সে’ দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। পরমাণু কর্মসূচি থেকে সরে আসার জন্য তাদের নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। চুক্তিটি এমনভাবে পরিকল্পিত, যাতে ইরান ধাপে ধাপে পারমাণবিক বিস্তার রোধকারী দেশের কাতারে পৌঁছাতে পারে।

ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যকার এই অচলাবস্থা, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বস্ত বন্ধুদের মধ্যে অনাস্থা তৈরি করছে। তারা তাদের অবস্থান বদলাচ্ছে। ইসরায়েলের নিরাপত্তা প্রতিবেদন থেকে দেখা যাচ্ছে, তাদের জাতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা জেসিপিওএর মতো একটি ক্ষয়িষ্ণু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থন দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে না বলে পরামর্শ দিয়েছেন। ইসরায়েলের কিছু নিরাপত্তা বিশ্লেষক মনে করেন, সব সীমাবদ্ধতার পরও জেসিপিওএ ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে বাধা সৃষ্টি করার একটি উপায়।

গত সপ্তাহে ভিয়েনায় সর্বশেষ আলোচনার পর সামগ্রিক ফলাফল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর একটি সার সংকলন করেছে। তাদের ভাষ্য, ‘এ আলোচনা যতটা ভালো হওয়ার দরকার ছিল, তার থেকে ভালো হয়েছে, যতটা খারাপ হওয়া উচিত ছিল, তার থেকে খারাপ হয়েছে।’ এই ছন্নছাড়া সূত্রায়ন থেকে এটা স্পষ্ট যে যুক্তরাষ্ট্র এ আলোচনা থেকে হতাশ হয়েছে। এ আলোচনায় মোটামুটি একটা অগ্রগতি সত্ত্বেও ইরানের দিক থেকে আলোচনা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

আলোচনা যে গভীর অচলাবস্থার মধ্যে পড়েছে, সেটি এড়ানোর কোনো উপায় নেই। চুক্তিতে ফিরে আসতে ইরান এই নিশ্চয়তা চায় যে ২০১৮ সালের পর তাদের ওপর যেসব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, তা আগে প্রত্যাহার করুক যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরুর আগে ইরানের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি চায় যে তারা চুক্তিতে ফিরতে পুরোপুরি সম্মত।

জেসিপিওএ চুক্তি নিয়ে বড় একটি সমালোচনা হচ্ছে, ইরানের কর্মকাণ্ডে আঞ্চলিক যে শক্তিগুলোর (ইসরায়েল ও আরব দেশগুলো) ওপর সরাসরি প্রভাব পড়ছে, এতে তাদের কোনো আনুষ্ঠানিক ভূমিকা নেই। ট্রাম্পের আমলের শেষভাগে ইসরায়েলের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়। তারও আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের এই মিত্রদেশগুলো ইরানের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে কখনো নিজেরা একত্র হয়ে কিছু বলতে পারেনি।

ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যকার এই অচলাবস্থা, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বস্ত বন্ধুদের মধ্যে অনাস্থা তৈরি করছে। তারা তাদের অবস্থান বদলাচ্ছে। ইসরায়েলের নিরাপত্তা প্রতিবেদন থেকে দেখা যাচ্ছে, তাদের জাতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা জেসিপিওএর মতো একটি ক্ষয়িষ্ণু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থন দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে না বলে পরামর্শ দিয়েছেন। ইসরায়েলের কিছু নিরাপত্তা বিশ্লেষক মনে করেন, সব সীমাবদ্ধতার পরও জেসিপিওএ ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে বাধা সৃষ্টি করার একটি উপায়। তবে এখানে কোনো সামরিক সমাধান নেই। যদিও ইসরায়েলের গোয়েন্দারা ইরানে গিয়ে মাঝেমধ্যে চোরাগোপ্তা অভিযান চালিয়ে অবকাঠামো নষ্ট এবং বিজ্ঞানীদের হত্যা করছেন। কিন্তু এ ধরনের বিতর্কিত পদক্ষেপ কোনো সমাধান আনে না।

ইসরায়েল এখন বুঝতে পারছে যে ট্রাম্পের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক মিথ্যা প্রতিশ্রুতির ওপর দাঁড়িয়ে ছিল। তারা মনে করেছিল, ট্রাম্পের কঠোর হুঁশিয়ারির মানে হচ্ছে, প্রয়োজনে ইরানের ওপর ট্রাম্প বলপ্রয়োগ করবেন। প্রকৃতপক্ষে, ইরানের হুমকির বিরুদ্ধে সম্মিলিত সংহতি, ট্রাম্পের এমন আলংকারিক বক্তব্যে ওই অঞ্চলের দেশগুলোকে সমস্যা সমাধানে উদ্দীপ্ত করেছিল। যদিও ট্রাম্প নতুন কোনো সামরিক অভিযানের ব্যাপক বিরোধী ছিলেন। এখন ইসরায়েল মনে করছে, যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো সামরিক অভিযান তাদের জন্য ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে। গত সপ্তাহে ইসরায়েলের কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে সামরিক পথ খোলা রাখার জন্য ওয়াশিংটনের ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করেছিল।

অন্যদিকে আরব দেশগুলো ইরানের সঙ্গে নতুন কূটনৈতিক স্বার্থ খুঁজছে। ইরাক এ ক্ষেত্রে সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বিশ্বাস ভঙ্গ করছে, এটা মনে করা উচিত নয়। তবে এটাও স্বীকার করে নিতে হবে যে মধ্যপ্রাচ্যের উন্নয়নের স্বার্থে ওই অঞ্চলে সংঘাত ঠেকানোর অধিকার দেশগুলোর রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ইরান সেখানে সমস্যা জিইয়ে রাখতে পারে না।

ভিয়েনার আলোচনা সফল হোক কিংবা না হোক, ইরানের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে একটি নতুন বাস্তববুদ্ধি উদয় হয়েছে। যদিও সেটা পারমাণবিক সমস্যার সমাধান দিতে পারবে না, কিন্তু ওই অঞ্চলে নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নয়নে সহযোগিতা করবে।

এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত
ইলেন লাইপসন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা কাউন্সিলের সাবেক কর্মকর্তা