Thank you for trying Sticky AMP!!

উনকে কী বার্তা দিলেন পুতিন?

কিম জং উন ও ভ্লাদিমির পুতিন

এ বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং–উনের আলোচনা হয়তো ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু অন্তত একজন বিশ্বাস করেন কোরীয় উপদ্বীপে স্থিতিশীলতা ফেরানো এখনো সম্ভব। সেই লোকটি হলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। গত বৃহস্পতিবার পুতিন ভ্লাদিভোস্তকে কিম জং–উনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সে সময় তিনি উনকে ‘একজন চমৎকার এবং গঠনমূলক আলোচক’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

পুতিন বলেছেন, ‘আমরা যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি, সেগুলোর মধ্যে আন্তর্জাতিক আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং পেশিশক্তির আইনের শাসনের জায়গায় আন্তর্জাতিক আইনের শাসনকে স্থলাভিষিক্ত করার বিষয়টি ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এটি করা সম্ভব হলে যেসব চ্যালেঞ্জিং বিষয়ের সমাধান করা যাবে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম বিষয় হবে কোরীয় উপদ্বীপ।’

বৈঠক শেষে যে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে, সেখানে একজন সাংবাদিক পুতিনকে বলেন, ‘মি. প্রেসিডেন্ট, কিম জং–উনের সঙ্গে এটিই আপনার প্রথম বৈঠক। উনের বিষয়ে বিশ্বের সবখানে তাৎপর্যপূর্ণ আগ্রহ আছে। মানুষ হিসেবে এবং রাজনীতিক হিসেবে আপনি উনকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন? তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে কি আপনি সন্তুষ্ট হয়েছেন?’

সেখানে পুতিন বলেন, ‘শুধু আমি নই, আমার সব সহকর্মী এই আলোচনার বিষয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। চেয়ারম্যান উন খুব শান্ত, দিলখোলা প্রকৃতির মানুষ। খুব সহজ–সরল ধরনের মানুষ। আমি তাঁর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, অবরোধ, জাতিসংঘ, আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক এবং অবশ্যই কোরীয় উপদ্বীপকে নিরস্ত্রীকরণ করার বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে পারি, তিনি একজন চমৎকার এবং গঠনমূলক আলোচক।’

কোরীয় উপদ্বীপকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করতে কী করা উচিত বলে মনে করেন? এমন প্রশ্নের জবাবে পুতিন বলেছেন, আগে সেখানে পেশিশক্তির শাসন বন্ধ করতে হবে। সে জায়গায় আইনের শাসন বসাতে হবে। এরপরই পুতিন বলেছেন, তিনি মনে করেন, উত্তর কোরিয়াকে হুমকি–ধমকি দিয়ে পরমাণু কার্যক্রম থেকে ফেরানোর চেষ্টা করা ঠিক হবে না। দেশটিকে আগে তার সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে হবে।

আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তি ছাড়া এমনকি কিছু আছে যা উত্তর কোরিয়াকে সেই নিশ্চয়তা দিতে পারে? এ বিষয়েও নিজের ব্যাখ্যা দিয়েছেন পুতিন। তিনি মনে করছেন, আন্তর্জাতিক আইনের মধ্যে থেকেই উত্তর কোরিয়াকে তাঁরা পরমাণু অস্ত্র বানানো থেকে নিবৃত্ত করতে চান। তবে উত্তর কোরিয়াকে এই আইনের ওপর আস্থাশীল করা সবচেয়ে জরুরি।

পুতিনের এই ভাষ্যকে যুক্তিহীন বলে উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। উত্তর কোরিয়া নিজের নিরাপত্তা চাইবেই। সেই নিরাপত্তা না পেয়ে আগেভাগে সব কার্যক্রম নিষ্ক্রিয় করে ফেললে কী পরিণতি ভোগ করতে হয়, তা আমরা ইরাকের সাদ্দাম হোসেন আর লিবিয়ার গাদ্দাফিকে দেখে জেনেছি। সাদ্দাম ও গাদ্দাফির পরিণতির কথা কিম জং–উন ভালো করে জানেন। এ কারণে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কথামতো নিরাপত্তার নিশ্চয়তা না পেয়ে পরমাণু কার্যক্রম বন্ধ করতে রাজি হননি। এতেই ট্রাম্প ও উনের বৈঠকে কোনো ফল আসেনি।

২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে যখন পরমাণু চুক্তি হয়েছিল, তখনই বিষয়টির ফয়সালা করে ফেলা সম্ভব ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হলো, যুক্তরাষ্ট্র ওই চুক্তির ধারা–উপধারা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করেনি এবং তাতে বেশ কিছু জায়গায় সংযোজন–বিয়োজন করা দরকার। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নতুন কিছু শর্ত ঢোকানো হলো এবং এ কারণে উত্তর কোরিয়া দেরি না করে চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেল।

উনের সঙ্গে এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে পুতিন প্রচ্ছন্নভাবে উত্তর কোরিয়ার পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলতে চেয়েছেন, রাশিয়া চায় কোরীয় উপদ্বীপ পরমাণুমুক্ত হোক। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র উনের ওপর জোরজবরদস্তি করলে তিনি উনের পাশে থাকবেন।

নানা কারণে রাশিয়া উত্তর কোরিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছে। প্রথম এবং প্রধান কারণ হলো ব্যবসা। উত্তর কোরিয়ার ওপর রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ প্রায় শেষ। এরপরই দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য শুরু হবে। দুই দেশের বাণিজ্যসংক্রান্ত চুক্তির খসড়াও পুতিন তৈরি করছেন। রাশিয়া এখন জাহাজে করে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি করে। এটি অনেক ব্যয়সাপেক্ষ। এ কারণে পুতিন উত্তর কোরিয়ার ভূখণ্ড ব্যবহার করে দক্ষিণ কোরিয়ায় পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করতে চান। এর জন্য এই উপদ্বীপে স্থিতিশীলতা রাশিয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার।

ফরেন পলিসি থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে অনূদিত
রেবেকা গ্র্যান্ট: ওয়াশিংটনভিত্তিক প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ