Thank you for trying Sticky AMP!!

এই পৃথিবী বাঁচবে, নাকি ধ্বংস হয়ে যাবে?

পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর দাবিতে দিকে দিকে সভা-সমাবেশ-বিক্ষোভ হচ্ছে। ছবি: রয়টার্স

২০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার, বিশ্বের প্রায় ১৮৫টি দেশের কয়েক কোটি তরুণ-তরুণী রাজপথ দখল করে সভা-সমাবেশ ও বিক্ষোভ করেছে। তাদের দাবি, ‘পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাও। পৃথিবী থেকে মানুষের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হতে দেব না। জরুরি ব্যবস্থা নিতে হবে।’ 

এই বিক্ষোভের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ক্লাইমেট স্ট্রাইক’। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্ব আবহাওয়ায় অস্থিরতা চলছে। আবহাওয়ামণ্ডলের গড় তাপমাত্রা ক্রমাগত বাড়ছে। প্রশ্ন উঠেছে, আমাদের এই সুন্দর পৃথিবী কি শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারবে, নাকি ধ্বংস হয়ে যাবে? পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব থাকবে কি না, গুরুতর বিষয়টি সামনে এসেছে। 

জাতিসংঘ জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনের আগমুহূর্তে বিশ্বব্যাপী এই বিক্ষোভ হয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব এই সম্মেলন ডেকেছেন। গত সোমবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত আলোচনায় বিশ্বনেতারা যেমন ছিলেন, তেমনি ছিলেন ক্লাইমেট স্ট্রাইকের তরুণ নেতৃত্বের প্রতিনিধিরা। ২০১৫ সালে প্যারিস বৈঠকের চুক্তি বাস্তবায়নের কর্মকৌশল নিয়ে আলোচনা হয়। এই চুক্তির মূল কথা হলো বৈশ্বিক উষ্ণতা দেড় ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের বেশি বাড়তে দেওয়া যাবে না। তরুণ নেতৃত্ব দাবি করেছে, ‘এখনই বাস্তব পদক্ষেপ দেখতে চাই।’ 

ক্লাইমেট স্ট্রাইকের আগের দিন আমরা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিজ্ঞানবক্তৃতার আয়োজন করি। এর বিষয় ছিল ‘কৃষি উন্নয়নে প্রযুক্তি’। আমাদের মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তা এবং কৃষি উন্নয়ন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান মেটালের যৌথ উদ্যোগে এই বক্তৃতার আয়োজন করা হয়। সেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিও আসে। বিশেষভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া আমাদের দেশে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। তাপপ্রবাহ, সাগরে নিম্নচাপ, ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় কৃষির ক্ষতি হচ্ছে। জনজীবন বিপর্যস্ত। 

আলোচনায় প্রধান অতিথি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক এম এ সাত্তার মণ্ডল বললেন, আজকাল বিজ্ঞানীদের অনেকে বলছেন, এই পৃথিবী হয়তো টিকবে না, ধ্বংস হয়ে যাবে। এর একটি প্রধান কারণ হতে পারে জলবায়ুর পরিবর্তন। এটা তো ঠিক, যদি ২০৫০ সালের মধ্যে আমরা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারি, তাহলে জলবায়ু পরিবর্তনের ধারা রোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। এর অবধারিত পরিণতি পৃথিবীর মৃত্যু। প্রাণের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যাবে। 

অধ্যাপক সাত্তার মণ্ডল পৃথিবী ধ্বংসের বিষয়টি আরও একটু ব্যাখ্যা করে আমাদের বললেন, ফিউচারোলজিস্ট ধরনের বিজ্ঞানীরা বলছেন, চারটি ঘটনার যেকোনো একটির কারণে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। এর একটি আমরা বললাম। এ ছাড়া আরও তিনটি কারণে সবকিছু শেষ হয়ে যেতে পারে। 

যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের নিয়ন্ত্রণে সবকিছু চলে গেলে বিপর্যয় ঘটতে পারে। অথবা বিশ্বে অর্থনৈতিক আয়বৈষম্য যদি এমন পর্যায়ে চলে যায়, যার ফলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লেগে গেল। এই পারমাণবিক অস্ত্রের যুগে কোনো দেশই বিজয় অর্জন করতে পারবে না। মানবসমাজ ও সভ্যতার ধ্বংস অনিবার্য হয়ে উঠবে। অথবা এমনও হতে পারে যে সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা পৃথিবীর ধ্বংস ডেকে আনল। 

চার বিকল্পের কোনোটিই ফেলে দেওয়ার মতো না। তাহলে উপায় কী? সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। যা কিছু করতে হবে, এখনই। আগামীকালের জন্য ফেলে রাখা যাবে না। 

এই অবস্থায় অধ্যাপক সাত্তার মণ্ডল বললেন, অনিবার্য বিপর্যয়ের প্রান্ত থেকে আমরা ফিরে আসতে পারি সবার মধ্যে বিজ্ঞানসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে। আমাদের চিন্তাভাবনা ও কাজকর্মের সর্বক্ষেত্রে বিজ্ঞানসচেতনতা একটি বড় ভূমিকা রাখতে পারে। 

এই যে আমরা নির্বিকারভাবে গাছপালা-বন ধ্বংস করছি; নদীদূষণ, বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ ঘটিয়ে চলেছি, এর পরিণতি কী হতে পারে তা কি একবারও ভেবে দেখেছি? এখানেই বিজ্ঞানসচেতনতার প্রয়োজন। 

পৃথিবী ধ্বংসের আরও কারণ থাকতে পারে। যেমন বিশাল কোনো উল্কাপিণ্ড বিচ্ছিন্নভাবে এসে পৃথিবীকে আঘাত করল। এ রকম আগেও হয়েছে। ডাইনোসর ১৬ কোটি ৫০ লাখ বছর সেই প্রাচীন পৃথিবীতে দোর্দণ্ড প্রতাপে রাজত্ব করার পর প্রায় ৬ কোটি ৫০ লাখ বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যায়। এর কারণ, পৃথিবীতে বিশাল এক উল্কাপিণ্ডের আঘাত। আবহাওয়ামণ্ডলে দেখা দেয় বিপর্যয়। বিলুপ্ত হয়ে যায় ডাইনোসর। 

সে রকম অবস্থা যদি আবার ঘটে? আমরা কি বসে থাকব? না। বিজ্ঞানীরা এ নিয়েও চিন্তাভাবনা করছেন। কোনো উল্কাপিণ্ডের আঘাত হানার আশঙ্কা দেখা দিলে আগে থেকেই তার গতিপথ অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিয়ে আমরা পৃথিবীকে বাঁচাতে পারব। সেই সম্ভাবনা ও সক্ষমতা এখন বিজ্ঞানের আয়ত্তে। কিন্তু জলবায়ু বিপর্যয়ে যদি প্রাণের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়, তাহলে সেটা হবে জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নত আমাদের মানব প্রজাতির জন্য সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি। 

তাই আমরা বলি, সর্বস্তরে, সব মানুষের মধ্যে বিজ্ঞানসচেতনতা সৃষ্টির চেয়ে বড় দায়িত্ব আর কিছু হতে পারে না। মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তা সেই দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করে চলেছে। বিজ্ঞানসচেতনতা সৃষ্টির কাজটি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা করছেন। বিভিন্ন বিজ্ঞানভিত্তিক সংগঠনও করছে। সবার সমবেত চেষ্টায় আমরা নিশ্চয়ই সফল হব। 

পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে দেব না।

আব্দুল কাইয়ুম প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক
quayum@gmail.com