Thank you for trying Sticky AMP!!

কার কত বেতন প্রকাশ করুন

পানামা পেপারসের খবর যখন প্রথম গণমাধ্যমে এল, তখন যাদের দিকে সন্দেহের তির থাকার কথা ছিল, তাদের নামই আমরা শুনতে পেলাম, যাদের সিংহভাগই বিদেশি। এক লাফে একটা সপ্তাহ পার করে ফেলুন, দেখবেন, এর সবচেয়ে গভীর যে প্রভাব পড়ার কথা ছিল, যুক্তরাজ্যে তার বেশ কিছু প্রভাব অনুভূত হচ্ছে। মানুষের চাপে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীসহ আরও অনেকেই আয়কর রিটার্ন প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছেন। রাজনৈতিক সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এটা এক বড় পরিবর্তন, যেটা অনেকটা রাতারাতিই ঘটে গেছে। তার জন্য আইন প্রণয়নের নীরস প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়নি। আর ভবিষ্যতে এই ধারা বদলে দেওয়াও প্রায় অসম্ভব ব্যাপার।
এখন সবচেয়ে যুক্তিশীল যে প্রশ্নটা আসছে তা হলো, আমরা আরও কত দূর যাব? বিবিসিতে লর্ড হেগও এ প্রশ্নটা তুলেছেন। এটা কি শুধু প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি সরকারের সব সদস্যের ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য হবে? অন্য সাংসদদের বেলায় কী হবে? তাঁরা কি শুধু আগ্রহ প্রকাশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবেন? স্থানীয় কাউন্সিলরদের কী হবে? যাঁরা সরকারি পদে নির্বাচিত হয়েছেন বা নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের কী হবে?
আর যদি সব সাংসদ বা সরকারি পদে নির্বাচিত ব্যক্তিদের কর রিটার্ন প্রকাশ করতে হয়, তাহলে ফলাফলটা কী দাঁড়াবে? হাউস অব কমনসে স্যার অ্যালান ডানকান যে পরামর্শ দিয়েছেন। কথা হচ্ছে, সেটা হলে কি ব্রিটিশ সংসদ মাঝারি গোছের মানুষের কারখানায় পরিণত হবে?

>যাঁরা নিজেদের বেতন অনেক বাড়াতে পারেন, তাঁরাই সব সময় বিজয়ী হন। তাঁরা আবার নিজেদের সমগোত্রীয় মানুষদেরও একই সুযোগ-সুবিধা দেন

এই ক্ষুদ্র বিষয়ে যাঁরা নির্বাচনে দাঁড়াবেন, তাঁদের (সিংহভাগকে) আমি বেনিফিট অব ডাউট দেব। নির্বাচিত হওয়া মানুষের জনসেবার যে অভিপ্রায় থাকে, আমরা সাধারণত সেটা খাটো করে দেখি। আমি ধারণা করি, এখন যাঁরা নির্বাচিত হবেন, তাঁরা কর রিটার্নের গুরুত্ব বুঝবেন, এটা তাঁদের সরকারি দায়িত্বের অংশ, যদিও তাঁদের কাছে তা চাওয়া হয়। আর তাঁরা যদি সেটা না বোঝেন, তাহলে তাঁরা আইন মান্যকারী ও করদাতা জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার কতটুকু যোগ্যতা রাখেন?
আর অনির্বাচিত সরকারি পদধারী ব্যক্তিদের কী হবে? বিচারক, জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা ও বিবিসির শীর্ষ ব্যক্তিদের? অথবা রাজনৈতিক সাংবাদিকদের কথাও বলা যায়, যাঁরা মনে করেন, তাঁদের কাজ হচ্ছে রাজনীতিকদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা। আমি ইতিমধ্যে জনরব শুনতে পাচ্ছি। কিন্তু এরা এখনো সংখ্যায় অনেক কম, তাহলে সিংহভাগের কী হবে? আমরা কেমন ধারার স্ক্যান্ডিনেভিয়ান? বা একটি দেশ হিসেবে আমরা কতটা স্ক্যান্ডিনেভিয়ান হতে চাই?
রাজনীতিকদের কর রিটার্নের গুমর ফাঁস হয়ে যাওয়ায় অন্যদেরটা লুকিয়ে রাখা কঠিন। শক্তির পাল্লাটা এখন খোলাসা করার দাবির দিকেই ভারী। এটাই হওয়া উচিত। তথ্যই শক্তি। কোম্পানিগুলো কেন তাদের পূর্ণাঙ্গ বেতন তালিকা প্রকাশ করবে না, একদম শীর্ষ ব্যক্তি থেকে নিচের ব্যক্তি পর্যন্ত? আর টাকাপয়সা-বিষয়ক আলোচনা নিয়ে ব্রিটিশদের অতি বিনয়ী আচরণেরও অবসান আমরা কেন ঘটাব না?
বেতন-ভাতা গোপন করার অর্থ হলো, একশ্রেণির মানুষের প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধাকে খুব মসৃণভাবে চিরস্থায়ী করা। এমনকি সরকারি খাতে বেতন-ভাতাবিষয়ক যে খোলামেলা ব্যাপার ছিল, পারফরম্যান্সসহ নানা রকম ভাতার কারণে সেটাও বিনষ্ট হয়ে গেছে। অনমনীয় গ্রেড, পে-স্কেল ও ট্রেড ইউনিয়নের প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতার কারণে সেটা সম্ভব হয়েছিল।
যাঁরা নিজেদের বেতন অনেক বাড়াতে পারেন, তাঁরাই সব সময় বিজয়ী হন। তাঁরা আবার নিজেদের সমগোত্রীয় মানুষদেরও একই সুযোগ-সুবিধা দেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের বেতনের কথাই চিন্তা করুন, কী হারে তা বেড়েছে! কথা হচ্ছে, স্বচ্ছতা থাকলে নারী-পুরুষের বেতনবৈষম্য অনেক আগেই দূর হওয়ার কথা, আর শীর্ষ ও নিম্ন পর্যায়ের মধ্যকার এমন তীব্র বেতনবৈষম্য কমে যেত। একই সঙ্গে আইনের যে ফাঁক গলে সামর্থ্যবানেরা কর ফাঁকি দিয়েও রেহাই পেয়ে যান, সেই সুযোগও বন্ধ হয়ে যেত, আর বিদ্যমান ব্যবস্থাকে নিয়ে ছেলেখেলা করার সুযোগও তাঁদের থাকত না।
লর্ড হেগ এক বিতর্কের আহ্বান জানিয়েছেন। এটা আমাদের যে স্বচ্ছতা প্রয়োজন ছিল, সে বিষয়ক বিতর্ক নয়, আবার নতুন আইনেরও ব্যাপার নয়। আমাদের মনোভাবে পরিবর্তন আনতে হবে। এখন তো প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যদের করের হিসাব জনসমক্ষে এসেছে, ফলে সেই পরিবর্তন শুরু করতে হবে।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া
অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন
মেরি দাইয়েফস্কি: লেখক ও সাংবাদিক।