Thank you for trying Sticky AMP!!

কোনো শান্তিচুক্তি শান্তি আনবে না যাদের জীবনে

রয়টার্স ফাইল ছবি।

২ সেপ্টেম্বর তালেবান পশ্চিমাঞ্চলীয় ঘোর প্রদেশে আফগানিস্তানের স্বাধীন মানবাধিকার কমিশনের ভারপ্রাপ্ত প্রাদেশিক পরিচালক আবদুল সামাদ আমিরিকে অপহরণ করে এবং দুদিন পর তাঁকে গুলি করে হত্যা করে। আফগানিস্তান এবং সারা বিশ্ব এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানায়। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল স্পষ্টভাবে এটিকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে অভিহিত করেছে। তালেবান শাসনের পতনের পর আফগানিস্তানে যে নাগরিক সমাজ এবং মানবাধিকার সম্প্রদায়ের উত্থান হয়েছিল, তাদের কাছে এ হত্যাকাণ্ড যুদ্ধাপরাধের চেয়ে অনেক বেশি ছিল। তালেবানের হাতে একজন তরুণ মানবাধিকারকর্মীর অকালমৃত্যু আফগানিস্তানের নিপীড়িত হাজারা সম্প্রদায়ের সদস্যদের নিরাপদ ও সুরক্ষিত ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। মার্কিন–তালেবান চুক্তি বা প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির শান্তি পরিকল্পনা—কোনোটিতেই আর হাজারারা তাদের শান্তি ফিরে আসার সম্ভাবনা দেখছে না।

হাজারা গোষ্ঠীর লোকজন পার্সিয়ানভাষী। শিয়া এই ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী মূলত মধ্য আফগানিস্তানের হাজারাজাত পার্বত্য অঞ্চলের স্থানীয় বাসিন্দা। ধর্ম ও জাতিগত কারণে তাদের ওপর অত্যাচারের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। তবে তারা কেবল তালেবান এবং ইসলামিক স্টেট খোরাসান প্রদেশের (আইএসকেপি) সহিংসতার শিকার হয়নি, আফগানিস্তানের প্রভাবশালী জাতিগোষ্ঠীগুলোর কাছ থেকেও বৈষম্যমূলক ও বৈরী আচরণের শিকার হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৭০–এর দশক পর্যন্ত আফগান আইনের কারণে হাজারারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বা জাতীয় কর্তৃত্বের কোনো পদে অধিষ্ঠিত হতে পারেনি। পরের দশকগুলোতে তালেবানের শাসনামলেও বৈষম্যমূলক আইনগুলো বলবৎ ছিল। সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের প্রশাসনের অধীনে হাজারারা আফগানিস্তানের সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে তাদের স্থান পুনরুদ্ধারের সুযোগ পেয়েছিল। তারা আশরাফ ঘানির নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে কিছু অর্জনও করেছিল, তবে জাতীয় নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে তাদের প্রতিনিধিত্ব ছিল সীমিত। ন্যাটো তাদের সেনা প্রত্যাহার শুরু করার পর থেকে আফগানিস্তানে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে হাজারাদের উদ্বেগ আরও গভীর হয়। তালেবানের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত হাজারাদের এ উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে এ আলোচনা বাতিল করে দিলেও হাজারাদের উদ্বেগ কমেনি। হাজারারা বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন এবং তারা জানে যে যুদ্ধ-পরবর্তী নতুন আফগানিস্তান গঠনে তালেবান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আপাতত হাজারাদের জন্য টেকসই শান্তির সম্ভাবনা এখনো অনেক দূরে। এর পেছনে রয়েছে দুটি প্রধান কারণ: হাজারাদের প্রতি তালেবানের গভীর শত্রুতাপূর্ণ মনোভাব এবং তাদের নির্দিষ্ট উদ্বেগের প্রশমন করে একটি বিশদ শান্তি পরিকল্পনা প্রস্তাব করতে আফগান সরকারের অনীহা বা অক্ষমতা।

তালেবান হাজারাদের কেবল অপহরণ এবং হত্যার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই; এর পাশাপাশি তারা নিরলসভাবে তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানাভাবে নিপীড়ন করছে। উদাহরণস্বরূপ, গত বছরের অক্টোবর মাসের শেষ দিকে তালেবান উরুজগান প্রদেশের হাজারা অধ্যুষিত খাস উরুজগান জেলায় হামলা চালিয়েছিল, যার ফলে কয়েক ডজন বেসামরিক মানুষ মারা গিয়েছিল এবং কমপক্ষে ৫০০ পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। নভেম্বরের গোড়ার দিকে এই গোষ্ঠী গজনি প্রদেশের মালিস্তান ও জাগোরি জেলায় হাজারা সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর হামলা চালায়। এ হামলায় আফগান সেনাবাহিনীর ২৫ জন কমান্ডোসহ ৬৭ জন নিহত এবং ৭০ জন আহত হয়।

এ হামলাগুলো হাজারাদের ১৯৯০–এর দশকের শেষ দিকে তালেবান তাদের ওপর যে অত্যাচার করেছিল, তা মনে করিয়ে দেয়। ১৯৯৮ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবান হাজারাদের ওপর কমপক্ষে তিনটি নথিভুক্ত গণহত্যা চালিয়েছিল। ১৯৯৮ সালের আগস্টে তালেবান মাজার-ই-শরিফ শহরে কমপক্ষে ২ হাজার বেসামরিক মানুষকে হত্যা করেছিল, তাদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিল হাজারা সম্প্রদায়ের। এর দুই বছর পর ২০০০ সালের মে মাসে তালেবান রোবাটাক পাস এলাকায় আরও কয়েক ডজন হাজারাকে হত্যা করে। ২০০১ সালের জানুয়ারিতে বামিয়ান প্রদেশের ইয়াকোলং জেলায় হাজারাদের বিরুদ্ধে আরও একটি গণহত্যা চালায় তালেবান।

এ গণহত্যার ঘটনা, যা হাজারাদের প্রতি তালেবানের গভীর শত্রুতার সাক্ষ্য হিসেবে প্রমাণিত হয়, এটা এ–ও প্রমাণ করে যে তালেবান কোনোভাবে ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারলে সংখ্যালঘু এই জনগোষ্ঠীর সঙ্গে তারা কী ধরনের আচরণ করবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তি আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর তালেবানের প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা নেই, তবু এটা নিশ্চিত যে তালেবান রাষ্ট্রটির ভবিষ্যৎ গঠনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে কিছু কিছু ভূমিকা রাখবে। তবে এটি ঠিক যে শেষ পর্যন্ত মার্কিন-তালেবানের কোনো চুক্তি আফগানিস্তানে স্থায়ী শান্তি বয়ে আনবে না। কেবল আন্ত–আফগান ও তালেবানের আলোচনা যদি কখনো বাস্তবে সংঘটিত হয়, তখনই কেবল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হতে পারে।

আল–জাজিরা থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত
বিসমিল্লাহ আলিজাদা: আফগানিস্তানের সাংবাদিক