Thank you for trying Sticky AMP!!

ক্ষমতাসীন দলেরই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হবে

>স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ নিয়ে নানা মত আছে। দুই বিশেষজ্ঞের মত এখানে তুলে ধরা হলো
বদিউল আলম মজুমদার

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দলীয় ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন কোনো ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে বলে আমি মনে করি না। বরং এর পরিণতি অশুভ হতে পারে।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ক্ষমতাসীন দলের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা পাকা করে সংসদ ও সরকারে ক্ষমতাসীনদের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করা হয়েছে। দলীয় প্রশাসক বসিয়ে জেলা পরিষদে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদে চলছে সাংসদদের আধিপত্য। এখন দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচন হলে ইউনিয়ন পরিষদেও ক্ষমতাসীন দলেরই আধিপত্য প্রতিষ্ঠার সমূহ সম্ভাবনা, যা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার জন্য ভালো হতে পারে না।
দলীয় ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রবর্তনের আগে দেশের দলীয় ব্যবস্থার প্রতি একটু নজর দেওয়া যেতে পারে। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘বাঙালি দলাদলিই করতে পারে। কিন্তু দল গড়ে তুলতে পারে না।’ রাজনৈতিক দল মানে আদর্শভিত্তিক, গণতান্ত্রিক, স্বচ্ছ ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ দল। কোনো কোটারি বা গোষ্ঠীস্বার্থে যারা কাজ করবে না। তেমন দল দেশে গড়ে ওঠেনি।
কাজেই আগে সেই দল গড়ে তুলতে হবে। সংস্কারের মাধ্যমে তেমন দল গড়ে উঠতে পারে। গণতান্ত্রিক রীতিনীতির চর্চা করতে হবে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ গড়ে তুলতে হবে। তার আগে দলীয় ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত মনোনয়ন-বাণিজ্য ছড়িয়ে পড়বে। যাঁরা মনোনয়ন পাবেন তাঁরা ভোটারদের কতটা কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি হবেন, সে বিষয়েও সন্দেহের অবকাশ আছে।
নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে ক্ষমতাসীন দল বা সরকারের অনুগত নয় এমন নির্বাচন কমিশন দুরাশা মাত্র। রাষ্ট্রীয় প্রশাসনও পক্ষপাতদুষ্ট। এই পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদেরই নির্বাচিত হয়ে আসার সম্ভাবনা প্রবল। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমনও দেখা যেতে পারে যে হুমকি-ধমকি, হামলা-মামলা করে প্রতিপক্ষকে নির্বাচনে অংশ নিতেই দেওয়া হবে না।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অনেক এলাকায়ই কিছু স্বীকৃত ভালো মানুষকে অংশ নিতে দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে ভোটাররাই এ ধরনের মানুষকে নির্বাচনে দাঁড়াতে বাধ্য করেন। তাঁরা কোনো দলীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন। দলীয়ভিত্তিক নির্বাচন হলে এ ধরনের মানুষের অংশগ্রহণ ও নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। কারণ, তাঁরা নির্বাচনে অংশ নিয়ে কোনো দলের বিরাগভাজন হতে চাইবেন না।
দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলে প্রার্থীসংখ্যা কম হয়। তাতে ভালো প্রার্থীর সংখ্যা কমে। ভালো প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনাও কমে। কারণ, ভোটারদের বিকল্প বাছাইয়ের সুযোগ সীমিত হয়। দলীয় ভিত্তিতে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন অনুষ্ঠান একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সিদ্ধান্ত। রাজনৈতিক অঙ্গনে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব থাকবে। কাজেই এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় পর্যায়ে আরও আলাপ-আলোচনা করা দরকার ছিল।
বদিউল আলম মজুমদার: সুজন-এর সম্পাদক।

আরও পড়ুন: