Thank you for trying Sticky AMP!!

গণতন্ত্র বিপন্ন, ট্রাম্প একা দায়ী নন

ডোনাল্ড ট্রাম্পের দায়িত্বকাল ১৯ মাসে পড়ল। এখন দেখা যাচ্ছে, মার্কিন গণতন্ত্র ভয়াবহ সংকটের মধ্যে পড়ে গেছে। তবে গণতন্ত্রের এই বিপন্নতার পেছনে ট্রাম্প একা বা বহুলাংশে দায়ী—তা মোটেও নয়। কয়েক দশক ধরে দেশটিতে একটু একটু করে গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ট্রাম্প এসে আমেরিকার প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক ধ্যানধারণা ও রীতিনীতির ওপর সরাসরি আঘাত হেনেছেন। সে কারণে অনেক আগেই হয়ে যাওয়া ক্ষতিগুলো দৃশ্যমান হয়েছে মাত্র।

আমেরিকার রাজনীতি এখন ক্রমেই দুর্বোধ্য হয়ে উঠছে। আগামী নভেম্বরে মধ্যবর্তী নির্বাচন। এই নির্বাচনে কী হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। অনেকে মনে করছেন, বাইরের দেশের কারসাজি ও এফবিআইয়ের তদন্তে ট্রাম্পের এমন সব তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে, যা তাঁকে অবধারিতভাবে অভিশংসনের মুখে ঠেলে দিতে পারে। বৈশ্বিক গণতন্ত্র রক্ষার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ঐতিহ্যগতভাবে এত দিন যে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছে, সেখান থেকে পিছু হটাকে যুক্তরাষ্ট্রের দুর্বলতা হিসেবে দেখা হচ্ছে। তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এতে গণতন্ত্রবিরোধী শক্তিগুলো, বিশেষ করে রাশিয়া ও চীনের মতো কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলো এতে বেজায় খুশি। যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্মুখী নীতির কারণে বহু গণতান্ত্রিক দেশের সরকার স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ করার সুযোগ পাচ্ছে।

বৈশ্বিক বিষয়ে ট্রাম্পের চিন্তাভাবনার ধরন খেয়াল করুন। তিনি ধারাবাহিকভাবে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের ইচ্ছার কথা বলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাধিনায়ক হিসেবে তাঁর হাতে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পারমাণবিক চুল্লির চাবি। গত বছর তিনি আড়াই কোটি মানুষের আবাসভূমি উত্তর কোরিয়াকে ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ করার হুমকি দিয়েছিলেন। ইরানকেও তিনি নিশ্চিহ্ন করার হুমকি দিয়েছেন। তাঁর এ ধরনের খামখেয়ালি ঘোষণা আমেরিকার অনেক নাগরিককে আতঙ্কে ফেলে দিয়েছে। তিনি এ পর্যন্ত যতগুলো কাজ করেছেন, তা আমেরিকান মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। খামখেয়ালিপনা করে যদি সত্যিই তিনি ‘পরমাণু বোতাম’ টিপে দেন, তা ঠেকানোর ক্ষমতা সাধারণ আমেরিকানদের থাকবে না।

অনেকে বলবেন, প্রেসিডেন্টকে এ ধরনের কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখার ব্যবস্থা আছে; আমেরিকায় এমন একটি চেইন অব কমান্ড আছে, যা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তবে নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা বলছেন, না, প্রেসিডেন্টকে ঠেকানোর কেউ নেই। এমনকি পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং জয়েন্ট চিফসের চেয়ারম্যানের পর্যন্ত প্রেসিডেন্টকে আটকানোর আইনি ক্ষমতা নেই। এর চেয়ে অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আর কী হতে পারে? এই সংকট কি ট্রাম্প তৈরি করেছেন? বহু বছর ধরে আমেরিকায় এই ভয়ানক একনায়কোচিত আইন রয়েছে। এখন কংগ্রেস মরিয়া হয়ে সেই আইন পর্যালোচনা করছে।

ট্রাম্প বারবার একক সিদ্ধান্তে ‘নির্বাহী আদেশ’ প্রয়োগ করেছেন। এতে এখন সবার বোধোদয় হয়েছে। এই নির্বাহী আদেশের ক্ষমতা মূলত প্রেসিডেন্টের একক ক্ষমতা। এই ক্ষমতা প্রয়োগ করে তিনি যতগুলো কাজ করেছেন, তার মধ্যে সবচেয়ে কুখ্যাত হলো যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমপ্রধান সাতটি দেশের নাগরিকদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা। মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল তোলা, ইস্পাতের ওপর বাড়তি শুল্ক চাপানো এবং ওবামাকেয়ার বাতিল করার সিদ্ধান্তও এই ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে হয়েছে। এই ক্ষমতা একবার প্রয়োগ করা হলে তা তুলে নেওয়ার নজির খুবই কম। অনেকগুলো আইনি বাধা আসার পরও আদালত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছেন।

আয়াতুল্লাহ খোমেনির মতো ট্রাম্পকে ফতোয়া জারি করতে দেখে অনেকেই হতবাক হয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্প যা করেছেন, তা আইনের মধ্যে থেকেই করেছেন। পার্ল হারবারের ঘটনার পর ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট জাপানের বংশোদ্ভূত আমেরিকানদের অন্তরীণ করেছিলেন নির্বাহী আদেশে। এই নির্বাহী আদেশেই আব্রাহাম লিঙ্কন আমেরিকায় দাসপ্রথার বিলুপ্তি ঘোষণা করেছিলেন। ট্রাম্প তাঁর পূর্বসূরিদের অনুসরণ করছেন মাত্র। প্রেসিডেন্টকে দেওয়া এই বিশেষ ক্ষমতাকে ইতিহাসবিদ আর্থার শ্লেসিনজার ‘ইমপেরিয়াল প্রেসিডেন্সি’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। সুদীর্ঘ সময়েও প্রেসিডেন্টের হাত থেকে এই ক্ষমতা সরিয়ে নিতে মার্কিন কংগ্রেস ব্যর্থ হয়েছে।

আমেরিকা চলে আসছে দুটি দলের নেতৃত্বে। এই দুটি দলের বাইরের কেউ প্রেসিডেন্ট হতে পারছেন না। এই দুই দলের নেতারা অভ্যন্তরীণ কমিটিতে বারবার নির্বাচিত হচ্ছেন। এতে দলের মধ্যে গণতন্ত্রের চর্চা কমে আসছে। আমেরিকার নির্বাচনপদ্ধতিও ত্রুটিযুক্ত। পপুলার ভোটে হেরেও ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের জোরে তিনি প্রেসিডেন্ট হয়েছেন।

কংগ্রেসের যাঁরা সদস্য, তাঁদের প্রায় সবাই ধনকুবের; বিরাট বিরাট করপোরেশনের মালিক। তাঁরা দলের তহবিলে কোটি ডলার দেওয়ার সামর্থ্য রাখেন। বিশেষ স্বার্থে তাঁরা দলের তহবিলে এভাবে চাঁদা দেন। এ কারণে তাঁদের দুর্নীতিবাজ হিসেবেই মানুষ মোটাদাগে দেখে থাকে। মার্কিন গণতন্ত্রের চাকাকে গতিশীল করতেই তাঁরা এই অর্থ ঢালছেন—এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। যুক্তরাষ্ট্রের আইন ও সরকারি রীতিনীতিতে বহু আগে থেকেই গণতন্ত্রের মোড়কে একনায়কতন্ত্র ছিল। ট্রাম্প সেটি সামনে এনেছেন—এই যা!

দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকা থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে অনূদিত

সিমোন টিসডাল: দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার বিদেশবিষয়ক সম্পাদক