Thank you for trying Sticky AMP!!

গাদ্দাফির পতনে কী লাভ হয়েছে লিবিয়ার

লিবিয়ার সাবেক নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি। ছবি: রয়টার্স

আফগানিস্তান, সিরিয়া, ইয়েমেন ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্য যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোর দুর্দশার মতো দুর্দশা নেমে এসেছে তেলসমৃদ্ধ লিবিয়ায়। এ দেশগুলোর দুর্দশার কারণ খুঁজলে দেখা যাবে, প্রতিটিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সঙ্গে বাইরের শক্তির হস্তক্ষেপ মিলিত হয়েছে এবং ভেতর-বাইরের শক্তি এক হয়ে দেশগুলোকে দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতে ফেলে দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী রবার্ট গেটস তাঁর দায়িত্ব পালনকালের স্মৃতি নিয়ে একটি বই লিখেছেন। ২০১৪ সালে প্রকাশিত ডিউটি: মেমোয়ার্স অব এ সেক্রেটারি অব ওয়ার শীর্ষক ওই বইয়ে তিনি ২০০১ সালে আফগানিস্তানে এবং ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীর অভিযানের স্মৃতি নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো দেশের সরকার উৎখাতে যত দক্ষ, পতিত সরকারের জায়গায় নতুন কোন সরকার বসানো ভালো হবে, তা নির্ধারণে তারা ততটাই অদক্ষ। এর কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ওই দেশের জাতীয় ও আঞ্চলিক জটিল বিষয়গুলো আমলে নিতে ব্যর্থ হয়। ২০১১ সালে লিবিয়ায় ন্যাটোর নেতৃত্বাধীন জোট যে অভিযান চালায়, সেখানেও সেই একই ব্যাপার দেখা গেছে।

লিবিয়ায় এখন যে সংকট চলছে, তার মূলে ‘অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত কারণ’ রয়েছে। কথিত আরব বসন্তের মধ্যে ২০১১ সালের অক্টোবরে একটি গণজাগরণের মধ্যে কর্নেল গাদ্দাফির স্বৈরাচার সরকারকে ঠেলে ফেলে দেওয়া হলো। লিবিয়ার নাগরিকদের ‘রক্ষা করার দায়িত্ববোধ’ থেকে নিরাপত্তা পরিষদ লিবিয়ায় সামরিক অভিযান অনুমোদন দেওয়ার পর মার্কিন সমর্থনপুষ্ট অ্যাংলো-ফ্রেঞ্চ সেনারা দেশটিতে অভিযান শুরু করল। মূলত তারাই গাদ্দাফির পতন ঘটাল।

কিন্তু গাদ্দাফির পতনের পর দেশটিতে কোন সরকার আসবে, তা নিয়ে না বিদ্রোহী বাহিনী, না বিদেশি শক্তিগুলো—কেউ সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা করেনি। গাদ্দাফির পতনের পর কীভাবে বিদ্রোহী গ্রুপগুলো এক ছাতার তলায় আসবে, তা নিয়ে তাদের কোনো পূর্বপরিকল্পনা ছিল না। যারা বাইরের থেকে দেশটিতে ঢুকে অভিযান চালিয়েছিল, তারাও নতুন স্থিতিশীল সরকার গঠনের বিষয়ে আগ্রহী ছিল না। আফগানিস্তান ও ইরাকে যেভাবে আমেরিকা স্থানীয় উপজাতীয় যোদ্ধাদের খাটো করে দেখে ভুল করেছিল, ঠিক একইভাবে লিবিয়াতেও পশ্চিমা বাহিনী লিবিয়ার সমাজের আদিবাসী যোদ্ধাদের মেজাজকে ছোট করে দেখেছে। এই বিদেশিরা লিবিয়ার সাধারণ মানুষকে রক্ষা করা এবং তাদের গণতান্ত্রিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে একতাবদ্ধ করার চেয়ে দেশটির তেলক্ষেত্রের নিয়ন্ত্রণ নেওয়াকে অগ্রাধিকার দিয়েছে।

গাদ্দাফির পতনের পর যখন বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপ আলাদা জায়গা দখল করে নিল এবং নিজেদের মধ্যে হানাহানি শুরু করল, তখন বিদেশিরা নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নিতে শুরু করল। যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে ইরাক ও আফগানিস্তানে সশস্ত্র গ্রুপগুলোর বাধার মুখে পড়তে শুরু করেছিল, সেভাবে ছোট ছোট বিদ্রোহী গ্রুপ বিদেশিদের ওপর হামলা চালাতে লাগল। এ হামলাকে তারা ঝামেলা মনে করে সরে পড়ল। আর এ সুযোগে আঞ্চলিক ভিন্ন ভিন্ন শক্তি ভিন্ন ভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপকে মদদ দেওয়া শুরু করল।

২০১৫ সাল থেকে প্রধানত দুটি গোষ্ঠী লিবিয়ায় নিজেদের প্রভাব প্রতিষ্ঠিত করতে পরস্পরের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। একটি হলো জাতিসংঘের অনুমোদন পাওয়া ত্রিপোলিভিত্তিক গ্রুপ গভর্নমেন্ট অব ন্যাশনাল অ্যাকর্ড (জিএনএ) এবং অন্যটি হলো তোবরুকভিত্তিক লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মি (এলএনএ) যেটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক জেনারেল খলিফা হাফতার।

তুরস্ক, কাতার ও ইতালি জিএনএ-কে মদদ দিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে এলএনএকে সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, রাশিয়া ও ফ্রান্স। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হাফতারের পক্ষে কিছু কথা বললেও যুক্তরাষ্ট্র উভয় গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে।

সর্বশেষ ঘটনায় মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি তুরস্ক ও লিবিয়ায় তুরস্কের মিত্রদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, তারা যদি সির্তে শহরের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় তাহলে রক্তক্ষয়ী লড়াই বাধবে। এই শহর মিসর সীমান্তের সঙ্গে লাগোয়া এবং মিসর–সমর্থিত এলএনএ শহরটি এখন নিয়ন্ত্রণ করছে।

জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পক্ষগুলো লিবিয়ার ভেতরকার কোন্দল অবসানে অনুপস্থিত থাকায় এটি প্রমাণিত হয়েছে, লিবিয়ায় শান্তি স্থাপন নিয়ে জাতিসংঘের আয়োজনে জেনেভায় যে আলোচনা হয়েছিল, তা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। তাদের নিষ্ক্রিয়তার কারণে লিবিয়া এখন কার্যত টুকরো টুকরো হয়ে গেছে।

এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য দ্রুত আশপাশের দেশের তৎপরতা বন্ধ করতে হবে। লিবিয়াবাসীর হাতেই তাঁদের ভাগ্য গঠনের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হবে। তবে দুর্ভাগ্যের বিষয়, লিবিয়ার তেলসম্পদ এবং দেশটির ভূরাজনৈতিক অবস্থানগত গুরুত্ব চুম্বকের মতো বিদেশিদের টেনে রেখেছে।

ইংরেজি থেকে অনূদিত। স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
আমিন সাইকাল: ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার সোশ্যাল সায়েন্সেস বিষয়ের অধ্যাপক