Thank you for trying Sticky AMP!!

গুগল, আমাজন ও ফেসবুকের রাশ টানতেই হবে

অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবন অতি দ্রুত অনলাইনভিত্তিক হয়ে ওঠার পেছনে কোভিড-১৯ মহামারি ভূমিকা রেখেছে। আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন ভৌত পরিসর (ফিজিক্যাল ডোমেইন) ও ডিজিটাল পরিসর বেশি একান্নবর্তী হয়েছে।

এ মহামারির কারণে ‘গ্রেট ডিপ্রেশন’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ১৯৩০–এর দশকের মহাধসের পর সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংকট বিশ্ব এখন মোকাবিলা করছে। কিন্তু এ মহামারির কারণেই মানুষের মধ্যে প্রযুক্তির সঙ্গে অভ্যস্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। লকডাউনের কারণে মানুষ প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়েছে। সবচেয়ে লক্ষণীয় হলো, বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি আরও বড় আকার নিচ্ছে। ‘প্রযুক্তিসমৃদ্ধ’ মার্কিন শেয়ারবাজার নাসডাকের সূচক শুধু ২০২০ সালেই ৩০ শতাংশ বেড়েছে। পুঁজিবাজারে অ্যাপল, আমাজন, ফেসবুক ও অ্যালফাবেটের (গুগলের মূল কোম্পানি) সর্বসাকল্য পুঁজির পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত আমাজনের সিইও জেফ বেজোসের ব্যক্তিগত রোজগার ৬৮ শতাংশ বেড়ে অর্থের অঙ্কে তা ৭ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে মহামারির আগে ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের সম্পদের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার কোটি ডলার; এখন তা ৮ হাজার ৭৮০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে।

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম কীভাবে পরিচালিত হবে, তা একটি আন্তর্জাতিক আইনি কাঠামোর মধ্যে আনতে হবে। সব প্রযুক্তি কোম্পানিকে বিধি মানানোর জন্য একটি আন্তর্জাতিক নজরদারি প্রতিষ্ঠান গড়তে হবে। নয়তো প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর হাতে বিশ্বের প্রতিটি সরকার জিম্মি হয়ে পড়বে

এ রকমের হাতে গোনা কয়েকটি বৈশ্বিক ডিজিটাল প্রতিষ্ঠানের হাতের সব শক্তি ও সম্পদ যেভাবে স্তূপীকৃত ও কেন্দ্রীভূত হচ্ছে তাতে এটি পরিষ্কার, কোভিড–১৯ মহামারির পর এ প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির গতি–প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ ও নির্ধারণ করবে।

বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো কায়িক শ্রম বা ভৌত পণ্য ও পরিষেবাদির মতো কেবল স্থূল সম্পদ অর্জন করেনি। তার বদলে তারা ডেটা, অ্যালগরিদম এবং বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সম্পদ অর্জন করছে এবং কর দেওয়া এবং সামাজিক সুরক্ষায় অবদান রাখার বাধ্যবাধকতা এড়াতে তারা দুর্বল ডিজিটাল প্রশাসনের সুযোগ নিচ্ছে।

আমাদের বৈশ্বিক প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে শরীরী বা স্পৃশ্য বিশ্বব্যবস্থার সঙ্গে মিল রেখে। এখন প্রবল গতিতে ডিজিটাল অর্থনীতি এগিয়ে চললেও সেই অর্থনীতির আইনি ও বিধিগত ফাঁকফোকর বন্ধ করতে সরকারগুলো ব্যর্থ হচ্ছে। এসব প্রকাণ্ড প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর ফাঁকি ঠেকাতে সরকারগুলোর যে প্রযুক্তিগত শক্তি ও সামর্থ্য থাকা দরকার ছিল, তা থেকে তারা এখনো বহু পেছনে পড়ে আছে।

ডিজিটাল অর্থনীতির সুবিধাভোগী পক্ষ ও লোকসানের শিকার হওয়া পক্ষের ক্রমবর্ধমান ব্যবধান আকাশছোঁয়া বৈষম্য ও মধ্যবিত্তের ক্ষয়িষ্ণুতার মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হচ্ছে। মহামারির মধ্যে মধ্যবিত্তের ভঙ্গুর দশা আরও বেশি দৃশ্যমান হয়েছে।

রাজনীতির উদার পরিসরও সংকীর্ণ হয়ে আসছে। দেশে দেশে সরকারগুলো কট্টর ডান অথবা বামপন্থা বেছে নিচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো কট্টরপন্থার দিকে ঝুঁকছে। গণতন্ত্রের ওপর বিশ্বাস ও গণমাধ্যমের ওপর আস্থা ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে লক্ষণীয়ভাবে কমে গেছে। নতুন সহস্রাব্দে জন্মগ্রহণ করা মার্কিন নাগরিকদের মাত্র ৩০ শতাংশ মনে করে, ভালোভাবে জীবনযাপনের জন্য গণতন্ত্র অপরিহার্য। এ প্রবণতা অদূর ভবিষ্যতে আরও প্রবল হবে এবং এতে উদার জনতুষ্টিবাদীরা লাভবান হবে।

এ মহামারি ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়িয়ে দিয়েছে এবং এটি স্পষ্ট করেছে, বড় বড় শক্তির প্রধান লড়াইয়ের ক্ষেত্র হবে ডিজিটাল পরিসর। আর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সেই পরিসরগুলোর মালিক। যেমন ফেসবুক ও গুগল এখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দ্বন্দ্ব সংগ্রামের রণক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে সাইবার সংঘাত দেখা গেছে। ২০২০ সালের মার্কিন নির্বাচনেও সেই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

উপাত্ত ও ডিজিটাল জায়ান্টদের যাতে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা যায়, সে জন্য জাতীয় নীতিনির্ধারকেরা প্রযুক্তিগত সার্বভৌমত্ব অর্জনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অ্যাপল ও গুগলের অসহযোগিতার কারণে ইউরোপের বড় বড় দেশে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার কোভিড-১৯ কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং প্রটোকল বাস্তবায়ন করা যায়নি। অর্থাৎ মহামারি মোকাবিলায় বিশ্বের ৩২০ কোটি স্মার্টফোন ব্যবহৃত হতে পারবে কি পারবে না, তা এ দুটি কোম্পানি ঠিক করছে।

এ অবস্থায় ডিজিটাল অর্থনীতির জন্য নতুন প্রশাসন মডেল দাঁড় করানো দরকার। আমরা চীনের মতো রাষ্ট্রকেন্দ্রিক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম চাই না, আবার ব্যক্তির একান্ত নিজস্ব তথ্য নিয়ন্ত্রণের অনুমতি পাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মও চাই না।

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম কীভাবে পরিচালিত হবে, তা একটি আন্তর্জাতিক আইনি কাঠামোর মধ্যে আনতে হবে। সব প্রযুক্তি কোম্পানিকে বিধি মানানোর জন্য একটি আন্তর্জাতিক নজরদারি প্রতিষ্ঠান গড়তে হবে। নয়তো প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর হাতে বিশ্বের প্রতিটি সরকার জিম্মি হয়ে পড়বে।

ইংরেজি থেকে অনূদিত, স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
অস্কার জনসন আইই ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স অব চেঞ্জের পরিচালক এবং টেইলর ওয়েন ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর মিডিয়া, টেকনোলজি অ্যান্ড ডেমোক্রেসির পরিচালক।