Thank you for trying Sticky AMP!!

ঘূর্ণিঝড় আম্পান: মানবিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এখন বেশি জরুরি

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ডাকবাংলা এলাকা, কয়রা উপজেলা, খুলনা, ২০ মে। ছবি: সাদ্দাম হোসেন

ঘূর্ণিঝড় এক ধরনের বহু বিপদপটীয়সী দুর্যোগ। বঙ্গোপসাগরে ১৯৯৯ সালের পর প্রথম সুপার সাইক্লোন আম্পান। ইউএস জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টারের তথ্য থেকে জানতে পেরেছি, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের মধ্যে তিন মিনিটের সাস্টেইনড সর্বোচ্চ বাতাসের গড় গতিবেগ ২৭০ কিলোমিটার/ঘণ্টা হয়েছিল। ঘূর্ণিঝড় আম্পান প্রায় ১৮ ঘণ্টার মধ্যে ক্যাটাগরি-১ থেকে ক্যাটাগরি-৫ মাত্রায় শক্তি বৃদ্ধি করতে সমর্থ হয়েছিল।

আশার কথা হচ্ছে, এ ঘূর্ণিঝড় যত স্থলভাগের কাছাকাছি আসছে, তত বাতাসের গতি কমেছে। ভারতের আবহাওয়া দপ্তর তাদের আজ দুপুরের বুলেটিনে উল্লেখ করেছে, ঘূর্ণিঝড় আম্পান ১৫৫ থেকে ১৬৫ কিলোমিটার/ঘণ্টা দমকা বাতাসসহ ১৮৫ কিলোমিটার গতিতে আজ বিকেল ৪টার দিকে পশ্চিমবঙ্গের দিঘা এবং বাংলাদেশের হাতিয়া দ্বীপসংলগ্ন সুন্দরবন দিয়ে স্থলভাগ অতিক্রম করবে।

এ মুহূর্তে আমাদের প্রয়োজন যথাযথ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও সচেতনতা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল। অতি জনবসতিপূর্ণ এলাকায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষার মাধ্যমে দক্ষ ব্যবস্থাপনায় ঘূর্ণিঝড়ের মতো সমন্বিত দুর্যোগ মোকাবিলা করা হবে আমাদের জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা।

সামাজিক দূরত্ব রক্ষার প্রয়োজনে আশ্রয়কেন্দ্র বাড়ানো, স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রীর আগাম যথাযথ সরবরাহ, পারস্পরিক মানবিকতাবোধ, সচেতনতা এ কঠিন সময়ে সংক্রমণ রোধে ও দুর্যোগ মোকাবিলায় খুবই অপরিহার্য।

যেকোনো ঘূর্ণিঝড়ে যে বিষয়গুলো অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

১. দমকা ঝোড়ো বাতাসে গাছ ভেঙে পড়া, উপড়ে যাওয়া (বিশেষ করে নারকেল ও তালগাছ), বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া
২. জোরালো ঝোড়ো বাতাসে ঘরের চালের টিন ও অন্যান্য বস্তু উড়ে আসে, যার জন্য সতর্কতা জরুরি
৩. জেলেদের জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা—সব ধরনের মাছ ধরা নিষেধ
৪. যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া (সড়ক ও রেল যোগাযোগ)
৫. বাঁধ, পোল্ডার ভেঙে যাওয়া
৬. শস্য, ফল-ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হওয়া
৭. নৌকা, ছোট জাহাজ নোঙর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া
৮. নিচু ও বন্যাপ্রবণ উপকূলীয় এলাকার মানুষজনকে দ্রুত সরিয়ে নেওয়া
৯. গবাদি পশুপাখির ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া

যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া জরুরি

সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। সতর্কতা মেনে চলা ও মানবিক হওয়া দুর্যোগ মোকাবিলার একটি অন্যতম ধাপ।

কোভিড-১৯-এর কারণে বেশি আশ্রয়কেন্দ্র প্রয়োজন হবে। এ জন্য স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার পাশাপাশি ব্যক্তিমালিকানার বাড়িগুলো মানবিক আশ্রয়কেন্দ্র করতে এগিয়ে আসতে হবে।

যেকোনো দুর্যোগে স্বেচ্ছাসেবক গ্রুপ সবচেয়ে দরকারি ভূমিকা রাখে।

কোভিড-১৯ মহামারির থেকে সুরক্ষার প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন মাস্ক, স্যানিটাইজার, জরুরি ওষুধের প্রয়োজনীয় সরবরাহ নিশ্চিত করা।

বয়স্ক, শিশু ও অসুস্থ মানুষের জন্য অগ্রাধিকার ব্যবস্থা।

মহিলা ও শিশুদের নিরাপত্তামূলক জরুরি পদক্ষেপ রাখা।

বিদ্যুতের বিকল্প ব্যবস্থা, ব্যক্তিপর্যায়ে মোবাইল চার্জ দিয়ে রাখা।

কমিউনিটি রেডিও চালু রাখা।

তীব্র ঝোড়ো বাতাসে কোনোভাবেই বাইরে বের হওয়া যাবে না। এ জন্য যতটুকু সম্ভব আগে থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া।

যাঁরা যেতে অনিচ্ছুক, তাঁদের কাউন্সেলিং করে বোঝানো।

গবাদি পশুপাখি এ সময় যেন অবহেলার শিকার না হয়, যেটা প্রায় দুর্যোগে হয়ে থাকে। এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখা।

খাবার, নিরাপদ পানির ব্যবস্থা থাকা

অনেক ক্ষেত্রে মোবাইল টয়লেট দরকার হবে। এখন অনেক দুর্যোগে এ ব্যবস্থা করা হয়।

মোবাইল কোম্পানিগুলো ২/৩ দিনের জন্য উপদ্রুত এলাকায় ফ্রি মোবাইল কল ও ইন্টারনেট ডেটা দিতে পারে। এ মানবিক উদ্যোগে সঙ্গে থাকা দরকার।

করোনা মহামারির এ কঠিন সময়ে সামাজিক দূরত্ব, স্বাস্থ্যবিধি মেনে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান অনেক কঠিন হবে।

বিভিন্ন পূর্বাভাসে জলোচ্ছ্বাস নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ ফুট বেশি জোয়ারের উল্লেখ করা হয়েছে (ঝোড়ো বাতাস ও অমাবস্যার প্রভাবে ৩-৪ মিটার বা আরও বেশি)। জলোচ্ছ্বাসের বিষয়টি বিশেষ প্রাধান্য দেওয়া ও সতর্ক পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আগের ঘূর্ণিঝড় বিশেষ করে বুলবুল (২০১৯-এর নভেম্বর), ফণী (২০১৯-এর এপ্রিল-মে), আইলা (২০০৯-এর মে), সিডরের (২০০৭-এর নভেম্বর) অভিজ্ঞতা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশের উপকূল আবহাওয়া রাডারের কার্যকর সীমার মধ্যে এলে সার্বক্ষণিক তথ্য জানা যাবে ও বিশ্লেষণ সম্ভব। এ রাডারগুলো সার্বক্ষণিক চালু রাখা জরুরি।

কোভিড-১৯, ঝোড়ো বাতাস, ভারী বৃষ্টি ও জলোচ্ছ্বাস, অমাবস্যা—এ বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিয়ে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রমও অন্তর্ভুক্ত রাখতে হবে। ভবিষ্যতে বৈজ্ঞানিক ও সামাজিক গবেষণা করার উদ্যোগ নিতে হবে।

ড. মোহন কুমার দাশ: সিনিয়র গবেষক, পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউট, বুয়েট।
ই-মেইল: mohan.smrc@gmail.com