Thank you for trying Sticky AMP!!

চড়া মেজাজে বাইডেন-পুতিন, শীতল যুদ্ধ ফিরছে

জো বাইডেন ও ভ্লাদিমির পুতিন

মনে হচ্ছে, আমরা সোভিয়েত নেতা লিওনিদ ব্রেজনেভের দিনগুলোতে ফিরে যাচ্ছি। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল রাশিয়া ওয়ান এবং ফার্স্ট চ্যানেলের ইদানীংকার খবর এবং অন্যান্য অনুষ্ঠান দেখলে অন্তত এমনটাই মনে হবে। এসব অনুষ্ঠান দেখে যে কারও ১৯৭০–এর দশকে ফিরে যাওয়ার অনুভূতি হতে পারে। এসব চ্যানেলে লাগাতারভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কড়া কড়া কথা সম্প্রচার করা হচ্ছে।

সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার ৩০ বছর পূরণ হলো গত ২৬ ডিসেম্বর। এই এতগুলো বছর পর মনে হচ্ছে রাশিয়ার মানুষ সোভিয়েত আমলের সেই সামাজিক স্থিরতাসম্পন্ন স্বর্ণালি দিনগুলোর বিষয়ে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েছেন। যেন তাঁরা সেই দিনগুলোর অভাব অনুভব করছেন। মস্কোর পররাষ্ট্রনীতিতেও অতীতে ফিরে যাওয়ার মনোভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। শীতল যুদ্ধের সময়ের মতোই রাশিয়া ও আমেরিকার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের পারদ অস্বাভাবিকভাবে ওঠানামা করছে।

গত ৩০ ডিসেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে টেলিফোনে আলাপ হয়েছে। সে সময় তাঁরা ইউক্রেন নিয়ে লম্বা সময় কথা বলেছেন। এ সময় উভয়ই উভয়কে ইউক্রেন নিয়ে সতর্ক করেছেন, যদিও সার্বিকভাবে তাঁদের দুজনের বক্তব্যের সুর ‘গঠনমূলক’ ছিল। ইউক্রেনের সীমান্তে রাশিয়া এক লাখের বেশি সেনা জড়ো করার পর গুজব ছড়িয়ে পড়ে, রাশিয়া ইউক্রেন দখল করতে অভিযান চালাতে যাচ্ছে। সেই পটভূমিতে বাইডেন পুতিনের সঙ্গে আলোচনা করেন। সেখানে বাইডেন পুতিনকে সতর্ক করে বলেন, ইউক্রেনে কোনো ধরনের হামলা হলে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা সে মোতাবেক জবাব দেবে।

রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের পূর্ব সীমান্তে যে উত্তেজনা চলছে, বাইডেন-পুতিনের কথোপকথনকে তা প্রশমিত করার সর্বশেষ চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। রাশিয়া অবশ্য ইউক্রেনে হামলার পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করেছে। তারা বলেছে, সেনারা সেখানে অনুশীলনের জন্য রয়েছে। পুতিন বলেছেন, নিজের মাটিতে অবাধে তাঁর সৈন্যদের চলাফেরার অধিকার আছে।

এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার সঙ্গে আপসের সুরে কথা বলছে। বাইডেন প্রশাসনের পূর্ণ মনোযোগ আকর্ষণকে ক্রেমলিনের বড় ধরনের সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। এটি স্পষ্ট যে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা নেওয়া এবং ওই অঞ্চলে সেনা মোতায়েনই বাইডেনের মনোযোগ আকর্ষণের মূল কারণ।

বাইডেন ও পুতিনের আলাপে রুক্ষতার শুরু গত ৭ ডিসেম্বর। ওই দিন এই দুই নেতা ভিডিও লিংকে কথা বলেন। সে আলোচনায় ইউক্রেন ইস্যুসহ বেশ কিছু বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে কথা হয়। ছয় মাস আগে জেনেভায় এক সম্মেলনে তাঁদের মধ্যে মুখোমুখি আলাপ হয়। সে আলাপের অগ্রগতি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া উভয় দেশ আবার উভয় দেশে তাদের রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করেছে। এর পর থেকে দুই দেশ পরস্পরের কাছে আসতে থাকে। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা পরস্পরের সঙ্গে আলোচনা চালাতে থাকে। গত নভেম্বরে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর পরিচালক ও রাশিয়া নিযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বার্নস মস্কো সফর করে প্রেসিডেন্ট পুতিন, রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী নিকোলাই পাত্রুশেভ এবং রাশিয়ার ফরেন ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসের প্রধান সেরগেই নারিশকিনের সঙ্গে দেখা করেন এবং তাঁদের সঙ্গে তিনি মূলত ইউক্রেন নিয়ে আলোচনা করেন।

এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার সঙ্গে আপসের সুরে কথা বলছে। বাইডেন প্রশাসনের পূর্ণ মনোযোগ আকর্ষণকে ক্রেমলিনের বড় ধরনের সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। এটি স্পষ্ট যে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা নেওয়া এবং ওই অঞ্চলে সেনা মোতায়েনই বাইডেনের মনোযোগ আকর্ষণের মূল কারণ। গত ছয় বছরে ইউক্রেন নিয়ে আলোচনায় অচলাবস্থার জন্য মস্কোর হতাশা বেড়েছে। ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যস্থতায় যে মিনস্ক চুক্তি হয়েছিল, তা ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়া ও পশ্চিমাদের উত্তেজনা প্রশমন করতে ব্যর্থ হয়েছে।

কিয়েভ ও মস্কো অগ্রগতির অভাবের জন্য পরস্পরকে দুষে আসছে। প্যারিস ও বার্লিনের মধ্যস্থতা ব্যর্থ হওয়ায় রাশিয়া এখন যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে ইউক্রেন সমস্যার সমাধান করতে চাচ্ছে। রাশিয়া চায় যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোকে ইউক্রেনের নিকটবর্তী অঞ্চলে সেনা মোতায়েন থেকে বিরত রাখুক। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সে কথা রাখতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার চাপা দ্বন্দ্ব ক্রমশ প্রকাশ্য হতেই থাকবে।

আল–জাজিরা থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত

  • দিমিতার বেচেভ ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ডের অক্সফোর্ড স্কুল অব গ্লোবাল অ্যান্ড এরিয়া স্টাডিজের প্রভাষক