Thank you for trying Sticky AMP!!

জঙ্গিবাদের প্রতিষেধক লাঠি নয়

বোমা হামলার পর মসজিদে মৃতদেহের সারি

এই হামলার সংহার রূপ ও ধৃষ্টতা ভয়ংকর। প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিদের বিবরণে জানা গেছে, রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা যানবাহন থেকে কয়েক ডজন বন্দুকধারী শুক্রবারের নামাজের সময় ভরা মসজিদে বোমা হামলা চালায়। এরপর মানুষ পালানোর চেষ্টা করলে এরা তাদের গুলি করে। মসজিদের সামনে যেসব যানবাহন ছিল, সেখানে আগুন দেয় তারা, যাতে অন্যরা মসজিদে ঢুকতে না পারে।

এই হামলা কারা করেছে, তা এখনো অজ্ঞাত। যদিও আমরা জানি, ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে জড়িত জঙ্গিদের এই এলাকায় আনাগোনা আছে। মিসরে বেসামরিক মানুষের ওপর এটাই জঙ্গিদের সবচেয়ে মারাত্মক হামলা। এতে বোঝা যায়, বিভিন্ন সময় দেশটির সরকার এমন নাছোড়বান্দা বিদ্রোহ দমনের যেসব চেষ্টা করেছে, সেগুলো করুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে, যদিও তারা নির্মম ও নিপীড়নমূলকভাবে এসব দমনের চেষ্টা করেছে।

মিসরের বর্তমান প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি পূর্বসূরি মোহাম্মদ মুরসি ও হোসনি মোবারকের মতো সিনাই উপদ্বীপের নাম কালেভদ্রে মুখে আনেন। তাঁরা ১৯৮২ সালে ইসরায়েলের দখলদারি থেকে সিনাই উপদ্বীপের স্বাধীন হওয়াটা উদ্‌যাপন করেন। মিসরীয় নিরাপত্তা বাহিনী এখানকার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ভালোভাবে জানে না, স্থানীয় আদিবাসীদের ব্যাপারে তাদের নাক সিটকানো ভাব আছে। ফলে এখানকার অধিবাসীদের তারা শত্রুজ্ঞানে সন্দেহ করে।

২০০৪ সালে দক্ষিণ সিনাইয়ে আত্মঘাতী বোমা হামলার পর মোবারক সরকার প্রায় তিন হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করে অনেকের ওপর নির্যাতন চালায়। এমনকি সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের স্ত্রী ও সন্তানদের জিম্মি করে। সিনাইয়ে হামলার পর মানুষকে আটক, নির্যাতন ও কারান্তরীণ করার চক্রের প্রায়ই পুনরাবৃত্তি হয়েছে। উত্তর সিনাইয়ের খবর বহুদিন গণমাধ্যমে আসেনি। ২০১৪ সালের অক্টোবর থেকে তো সেখানে জরুরি অবস্থা চলছে। তা সত্ত্বেও কোনো কিছুই কাজে আসেনি।

অন্যদিকে ২০১৩ সালের জুলাই মাস থেকে সিনাই উপদ্বীপে নিরাপত্তা বাহিনীর অন্তত এক হাজার সদস্য মারা গেছেন, যার মধ্যে ২০১৭ সালেই ২০০ জন প্রাণ হারান। তাহরির ইনস্টিটিউট ফর মিডল ইস্ট পলিসি এই তথ্য দিয়েছে। তারা আরও বলেছে, ২০১৭ সালের প্রথমার্ধে উত্তর সিনাইয়ে ১৩০টির বেশি হামলা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট সিসি সাবেক জেনারেল হিসেবে নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা
পূরণ করতে পারেননি। এই হামলার পর তিনি টুইট বার্তায় বলেছেন, ‘এই হত্যাযজ্ঞ আমাদের এ কথাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, যারা এই
হামলার পেছনে আছে, তাদের সাজা দিতে হবে।’ পূর্বসূরিদের মতো সিসিও এটাকে সেরা সমাধান মানছেন।

১৯৯৩ সালে আমি রয়টার্সের কায়রো ব্যুরোতে প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দিই। তার আগের বছর সশস্ত্র জঙ্গিরা রক্তাক্ত হামলা চালিয়ে মোবারককে উৎখাতের চেষ্টা চালায়, এ লক্ষ্যে তারা মন্ত্রী, নিরাপত্তা বাহিনী, খ্রিষ্টান ও পর্যটকদের ওপর হামলা চালায়। তখন
আমরা কার্যালয়ের সাদা বোর্ডে সাপ্তাহিক হামলার রেকর্ড রাখতাম।

ব্যাপারটা হলো, সরকারের নীতির কারণে যেমন জঙ্গিদের সামাল দেওয়া সম্ভব হয়নি, তেমনি এতে এই নির্মম জঙ্গিদের উন্নতিও
হয়নি। এর বদলে আমরা দেখলাম, গণগ্রেপ্তার, দেখামাত্র গুলির নির্দেশ, নির্যাতন ও পোড়ামাটি নীতি গ্রহণ করা হলো—জঙ্গিরা যেসব আখখেতে লুকিয়ে থাকত, তা পুড়িয়ে দেওয়া হতো। এসব কারণে বহু কৃষক–পরিবারের জীবিকা ধ্বংস হলো। এতে হলো কি, সরকার যেসব জঙ্গিগোষ্ঠীকে ধরার চেষ্টা করছিল, এসব মানুষের তাদের দলে ভেড়ার পরিস্থিতি তৈরি হলো।

এরপর বিশ্লেষকেরা সরকারকে ডান্ডা মারার নীতি থেকে কিছুটা সরে আসতে অনুরোধ করেন। তাঁরা পরামর্শ দেন, মিসরের ঊর্ধ্বাঞ্চলের অবহেলিত অঞ্চলগুলোর উন্নয়ন করে শাস্তির বদলে কিছু পুরস্কার দেওয়া হোক। এই অঞ্চল থেকেই এরা লোক দলে ভেড়াত এবং এখানেই তারা হামলা করত।

আজকের পরিস্থিতিও সে রকম। মিসরের নিরাপত্তার ব্যাপারে যারা আন্তরিক, তারা বহুকাল ধরেই উত্তর সিনাইয়ের অবহেলিত
ও প্রান্তিক অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য ওকালতি করেছে। তা সত্ত্বেও দশককাল ধরে এখানকার প্রতিশ্রুত উন্নয়ন পরিকল্পনা আটকে আছে।
ফলে মানুষ মনে মনে অসন্তোষ ও ক্রোধ নিয়ে ফুঁসছে।

মোবারক ও মুরসি যা ভুলে গিয়েছিলেন, সিসির সেটা অবশ্যই মনে রাখা উচিত, তা হলো উত্তর সিনাইয়ের মানুষ তাঁর মিত্র হতে পারে। মিসরীয় সরকারের সিনাইয়ের বেদুইন আদিবাসীদের সহায়তার দরকার আছে, কারণ নিরাপত্তা বাহিনীর চেয়ে এরাই এই অঞ্চলটা বেশি চেনে। আর ইসলামিক স্টেটের আদর্শ রোখার জন্য এদের প্রভাব জরুরি।

সম্প্রতি সিসির সরকার জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে এক ব্যঙ্গনবিশ (স্যাটায়ারিস্ট)ব্লগারকে গ্রেপ্তার করেছে। সিসি তাঁর সব বিরোধিতাকারীকে সন্ত্রাসী বলতে পারেন না বা যাদের তিনি সন্ত্রাসী বলেন, তাদের বোমা মেরে উড়িয়ে দিতে পারেন না। এর বদলে সন্ত্রাসবাদের প্রতিষেধক আবিষ্কারে তাঁর অধিকতর মনোনিবেশ করা উচিত: কর্মসংস্থান, মর্যাদা ও বাঁচার মতো জীবন নিশ্চিত করা। সব জায়গাতেই, বিশেষ করে উত্তর সিনাইয়ে তিনি এসব দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।

দ্য নিউইয়র্ক টাইমস থেকে নেওয়া, অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন

মোনা এলটাহোই: মিসরীয় সাংবাদিক।