Thank you for trying Sticky AMP!!

জাতিসংঘের হীরকজয়ন্তী : নতুন বিশ্ব গড়তে বহু পক্ষকে এক পক্ষে আসতে হবে

কোভিড-১৯ দেখিয়ে দিয়েছে আধুনিক বিশ্বের পারস্পরিক নির্ভরশীল দেশগুলো মহামারি বা দুর্যোগ মোকাবিলায় কতটা নাজুক অবস্থায় আছে। আমরা এখন আরও ভালো করে বুঝতে পারছি, কোনো দেশ আয়তনে যত বড় হোক না কেন, ধনসম্পদ ও প্রযুক্তির দিক থেকে যত এগিয়ে থাকুক না কেন, এই মহামারির মতো দুর্যোগ তার একার পক্ষে সামাল দেওয়া সম্ভব নয়।

এই মহামারির কারণে এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন হচ্ছে। সদস্যভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানেরা বরাবরের মতো নিউইয়র্কের সদর দপ্তরে সশরীর হাজির না হয়ে ‘ভার্চ্যুয়াল’ মাধ্যমে অধিবেশনে যোগ দিচ্ছেন।

এ বছরের সম্মেলনে স্বাভাবিকভাবেই কোভিড-১৯ মহামারি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং আন্তর্জাতিক আইনকানুনের মাধ্যমে কীভাবে মোকাবিলা করা যাবে, তা নিয়েই বিশদভাবে আলোচনা করা হবে।

যুদ্ধ, মহামারি, ক্ষুধা, দারিদ্র্যের মতো ইস্যুগুলোর সমাধান এককভাবে কোনো দেশের পক্ষে করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘকে সব পক্ষকে এক ছাতার নিচে এনে গোটা বিষয়টি সমন্বয় করতে হবে

অদৃষ্টের পরিহাস, জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার ৭৫তম বার্ষিকীতে মহামারিটি আঘাত হানল। আজ থেকে পৌনে এক শতাব্দী আগে ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মানবসৃষ্ট বিপর্যয়ের ধ্বংসস্তূপ থেকে জাতিসংঘের সৃষ্টি হয়েছিল। ভবিষ্যতে কোনো ধরনের দুর্যোগের মুখে পড়ে বিশ্ববাসীর জানমাল যাতে হুমকির মুখে না পড়ে, সে জন্য বিশ্বনেতারা এই সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন।

মধ্যপ্রাচ্য এবং অন্যান্য যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলগুলোতে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ ও তার বহুপক্ষীয় সহযোগিতামূলক প্রকল্পগুলো কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক আইনের নীতিগুলো আমাদের বৈশ্বিক ব্যবস্থার ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে কাজ করে। বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অধিকার চর্চার ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই নীতিগুলো অনুসরণ করলে অনেক বড় সংকটের সমাধান সম্ভব হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত। জাতিসংঘের জন্মকাল থেকেই এই সংঘাত চলে আসছে। ১৯৬৭ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ২৪২ ও ২৩৩৪ নম্বর প্রস্তাব অনুযায়ী দুই ভূখণ্ডের সীমানা নিয়ে যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল তা যদি উভয় পক্ষ মেনে চলত, তাহলে এই সমস্যা অনেক আগেই দূর করা সম্ভব হতো।

সম্প্রতি ইসরায়েলের সঙ্গে উপসাগরীয় দুই দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করার বিষয়টি আশা–জাগানিয়া। আমি মনে করি, এতে আরব বিশ্বের সঙ্গে ইসরায়েলের সুদীর্ঘ দিনের অনাস্থার অবসান হবে।

১৯৪৫ সালে অনেকেই আশা করেছিল, দুটো ভয়াবহ বিশ্বযুদ্ধের পরিণতি দেখে শেষ পর্যন্ত বিশ্বনেতারা শিক্ষা পেয়েছেন। জাতিসংঘের সনদেও বলা হয়েছিল, ‘যুদ্ধের হাত থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে’ এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের বিকাশকে সহজতর করতে প্রতিষ্ঠানটি গড়া হয়েছে। এটি গঠিত হওয়ার ৭০ বছর পরও তা শান্তি, নিরাপত্তা, মানবাধিকার এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তি নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে।

প্রয়াত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা বিশ্বের বিভিন্ন ক্ষেত্রের স্বতন্ত্র নেতাদের সমন্বয়ে ‘দ্য এল্ডারস’ নামের একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। আমি এই প্রতিষ্ঠানের ডেপুটি চেয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি বহুপক্ষীয়তার সমর্থনে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। তাতে আমরা বিশ্বনেতাদের প্রতি পাঁচটি বিষয়ের ওপর জোর দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছি।

সেগুলো হলো জাতিসংঘ সনদের মূল্যবোধগুলোকে পুনর্মূল্যায়ন করা, শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে সম্মিলিত পদক্ষেপকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য জাতিসংঘকে শক্তিশালী করা, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে জোরদার করা, প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য অর্জনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় আরও জোরদার পদক্ষেপ নেওয়া, সর্বোপরি, সব ধরনের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সম্মিলিত সহযোগিতা নিশ্চিত করা।

এসব লক্ষ্য পূরণে সম্মিলিত প্রচেষ্টা বা বহুপক্ষীয় পদক্ষেপের কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যদের এসব ইস্যুতে বিভক্তির মনোভাব থাকলে তা অর্জন করা অসম্ভব হয়ে উঠবে।

জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার ৭৫তম বার্ষিকীতে এই বহুপক্ষীয় সহযোগিতার বিষয়টিতেই সর্বাধিক জোর দেওয়া প্রয়োজন। যুদ্ধ, মহামারি, ক্ষুধা, দারিদ্র্যের মতো ইস্যুগুলোর সমাধান এককভাবে কোনো দেশের পক্ষে করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘকে সব পক্ষকে এক ছাতার নিচে এনে গোটা বিষয় সমন্বয় করতে হবে।

ইংরেজি থেকে অনূদিত, স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট

বান কি মুন জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব ও দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী