Thank you for trying Sticky AMP!!

টিভি নাটকের ইউটিউব স্বত্ব কার?

বাংলাদেশ কপিরাইট আইন অনুযায়ী কোনো সৃজনশীল কর্মের স্বত্বাধিকারী ওই কর্মের প্রণেতা। প্রশ্ন হলো, টিভি নাটকের স্বত্বাধিকারী কে? বইয়ের শতভাগ স্বত্বাধিকারী হন লেখক কিন্তু টিভি নাটকের বেলায় তা নয়। ডিরেক্টর বা পরিচালক দৃশ্যধারণ না করলে নাটক নির্মিত হয়ে পণ্য হিসেবে বাজারে আসতে পারে না। দৃশ্যধারণের জন্য প্রয়োজন অভিনয়শিল্পীর। নির্মাণকাজে ভিডিও এডিটর ও মিউজিক ডিরেক্টরও অপরিহার্য। দৃশ্যধারণের সঙ্গে অর্থলগ্নির ব্যাপারটিও জড়িত। ফলে একটি টিভি নাটকের ভাবনা বা পাণ্ডুলিপি নাট্যকারের কাছ থেকে পাওয়া গেলেও কর্মটিকে আলোর মুখ দেখাতে বেশ কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। পুরো নির্মাণ প্রক্রিয়ায় অনেক সৃজনশীল মানুষ কাজ করেন। সব মিলিয়ে বলা যায়, একটি টিভি নাটকের স্বত্বাধিকারী একক কোনো ব্যক্তি না হয়ে একাধিক ব্যক্তি হওয়াই বাঞ্ছনীয়।

কিন্তু বাস্তবে যা চলে আসছে তাতে টিভি নাটকের মেধাস্বত্বের মালিকানা বলে কিছু নেই। যে টিভি স্টেশন যে নাটক একবার প্রচার করে, সেই টিভি স্টেশন সেই নাটকের মালিক হয়ে যায়। নাটকটি ওই টিভি স্টেশনে অনেকবার পুনঃপ্রচারিত হলেও সেটির প্রযোজক, পরিচালক, লেখক আর কোনো অর্থ পান না। সম্প্রতি ইউটিউবে টিভি নাটকের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। অনলাইনভিত্তিক প্রচারমাধ্যমের সংখ্যাও অনেক বেড়েছে। এসবের ফলে এক নতুন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এখন টিভি স্টেশনগুলো কোনো নাটক প্রচার করার সঙ্গে সঙ্গেই সেটি তাদের নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার করছে। কারণ, ইউটিউবে দর্শক বেশি এবং বিনা লগ্নিতে তারা সেখান থেকে প্রচুর অর্থ পাচ্ছে। কিন্তু এই অর্থের সামান্যতম অংশও নাটকটি নির্মাণের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা পাচ্ছেন না। এভাবে টিভি নাটকের ক্ষেত্রে মেধাস্বত্ব আইন বস্তুত অকার্যকর রয়ে গেছে।

কিন্তু টিভি নাটক এমন একটি সৃজনশীল পণ্য হয়ে উঠেছে, যা থেকে আগের তুলনায় অনেক বেশি অর্থ উপার্জিত হচ্ছে। এই সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে ইন্টারনেটের প্রসারের ফলে। অদূর ভবিষ্যতে ইউটিউবের মতো ইন্টারনেটভিত্তিক প্ল্যাটফর্মগুলো টিভি মাধ্যমের জায়গা দখল করে নিতে পারে। তাই টিভি নাটকের মেধাস্বত্বের বিষয়টি এতকাল যেভাবে উপেক্ষিত হয়ে এসেছে, সেভাবে আর চলতে দেওয়া উচিত নয়। এ বিষয়টি টিভি স্টেশনগুলোর উপলব্ধি করা উচিত। অধিকাংশ টিভি স্টেশন নিজে নাটক তৈরি করে না, তারা প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে নাটক কিনে তা প্রচার করে। ফলে টিভি নাটকের ক্ষেত্রে টিভি স্টেশনগুলো অন্যদের ওপরই নির্ভরশীল। তারা নিজেরা যেমন একদল মানুষের অন্নের জোগান দিচ্ছে, তেমনি ওই একদল মানুষের কারণে তাদের অর্থের জোগানও হচ্ছে। ফলে এখানে কেউ মালিক নয়, একে অপরের ক্লায়েন্ট। আমরা চাই, কেউ কাউকে ঠকাবে না। উভয়ের স্বার্থে সুষ্ঠুভাবে ব্যবসা পরিচালনা করবে।

বাংলাদেশ কপিরাইট আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর ৬০ দিন পর পর্যন্ত তিনি তাঁর স্বত্বাধিকার সংরক্ষণ করেন। এ আইন অনুযায়ী একটি টিভি নাটক থেকে যে অর্থ উপার্জিত হবে, তার একটি অংশ রয়্যালটি হিসেবে নাট্যকারের ব্যাংকে জমা হতে থাকবে—এমন ব্যবস্থা করা উচিত। এটা সম্ভব হলে তাঁর অর্থঝুঁকি অনেকটাই কমে আসবে। শুধু অর্থই শেষ কথা নয়, সম্মানের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। এই ব্যবস্থা চালু করার এখনই সময়। এটা করা হলে টিভি নাটকের গুণগত মানও বাড়বে।

টিভি নাটকের স্বত্ব তিনটি উপায়ে নির্ধারণ করা যেতে পারে। এক. কোনো টিভি স্টেশন কোনো নাটক কিনে নেওয়ার পর তা একবারই প্রচার করতে পারবে এবং ইউটিউবেও প্রচার করতে পারবে। নাটকটি টিভিতে একবারের বেশি প্রচার করলে প্রতি প্রচারের জন্য নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা নাটকটি নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দিতে হবে এবং ইউটিউবে প্রচারের জন্য সেখান থেকে প্রাপ্ত অর্থের একটা অংশও তাঁদের দিতে হবে। প্রযোজকই টিভি নাটকের মালিক—এই ট্র্যাডিশন থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দুই. কোনো টিভি স্টেশন একটি নাটক একবারই প্রচার করতে পারবে, কিন্তু ইউটিউবে প্রচার করার স্বত্ব ওই টিভি স্টেশন পাবে না। তিন. শুধু ইউটিউবে প্রচার স্বত্ব কী হবে, তা নির্ধারণ করা হবে নাটকটি নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে। সবাই মিলে স্থির করবেন ১০০ ভাগ স্বত্বের মধ্যে কে কত ভাগ সংরক্ষণ করবেন। এভাবেই কমে আসবে বৈষম্য, টিভি নাটক ফিরে পাবে তার হারানো সুষমা।

মহিউদ্দীন আহ্‌মেদ নাট্যকার, গল্পকার ও ঔপন্যাসিক