Thank you for trying Sticky AMP!!

ট্রাম্প যে কারণে ই-মেইল ভোট চান না

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের দীর্ঘদিনের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন এগিয়ে আসছে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই ই-মেইলের মাধ্যমে ভোট হতে পারে কি না তা নিয়ে আলোচনা বাড়ছে। অনেকে মনে করছেন, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সবার কাছে, বিশেষ করে যে জনগোষ্ঠীর মধ্যে এর সংক্রমণ মারাত্মক রূপ নিয়েছে, সেই শ্রমজীবী ও সংখ্যালঘুদের ব্যালটপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য ই-মেইল ভোট হওয়া দরকার।

কিন্তু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ অন্যরা ই-মেইল ভোট পদ্ধতির তীব্র বিরোধিতা করছেন। তাঁরা বলছেন, এ পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করা হলে ভোট জালিয়াতির ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাবে। তবে ট্রাম্প ও অন্যদের এ যুক্তি আসলে আগাগোড়াই ভিত্তিহীন এবং এ যুক্তি নতুন কিছুও নয়। ছয় শতাব্দী ধরে যারা নিজেদের স্বার্থে ভোটারের সংখ্যা সীমিত রাখতে চেয়েছে, তারা বরাবরই নির্বাচনব্যবস্থার ‘সততা’ বা ‘ইন্টেগ্রিটি’ ধরে রাখার অজুহাত দেখিয়ে এসেছে।

পঞ্চদশ শতকের গোড়ার দিকের ইংল্যান্ডের কথাই ধরুন। ওই সময় প্রতিটি ইংলিশ কাউন্টি থেকে পার্লামেন্টের প্রতিনিধি হিসেবে দুজন করে ‘নাইট অব দ্য শায়ার’কে পাঠানো হতো। ওই সময় নাইটদের মধ্য থেকে কোন দুজনকে নির্বাচন করা হবে, তা ঠিক করার জন্য কাউন্টির শেরিফ ভোট গ্রহণ করতেন। রেওয়াজ অনুযায়ী, কাউন্টির বাসিন্দাদের মধ্য থেকে সব পুরুষ ভোট দিতেন। নারীরা ভোট দিতে পারতেন না। এসব নির্বাচনের মধ্যে কিছু নির্বাচনে অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা হতো (যেমনটি যেকোনো গণতান্ত্রিক নির্বাচনে হয়ে থাকে), কিন্তু ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের সর্বোচ্চ হাজিরা নিশ্চিত করা হতো।

১৪২৯ সালে হাউস অব কমন্সের সদস্যরা রাজা ষষ্ঠ হেনরির কাছে একটি আবেদন করেন। তাতে তাঁরা কাউন্টি থেকে যে পার্লামেন্ট প্রতিনিধিরা আসেন, তাঁদের নির্বাচন করার প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ করার জন্য একটি আইন পাস করতে আবেদন জানান। সেই আবেদনপত্রে বলা হয়েছিল, নতুন এ আইন জারি না করা গেলে খুন, দাঙ্গা, হানাহানি ও বিভক্তি বেড়ে যাবে। পার্লামেন্টারিয়ানরা সম্ভাব্য সমস্যার কথা বলে নতুন আইন পাস করতে চাইলেও তাঁদের আসল উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন। তাঁরা বললেন, বছরে ৪০ শিলিং (ওই সময় এই পরিমাণ অর্থ অনেক বলেই বিবেচিত হতো) আয় হয়, এ পরিমাণ কৃষিজমি যাঁদের আছে, তাঁরাই কাউন্টি নির্বাচনে ভোট দেওয়ার যোগ্য হবেন।

এ আইন জারির মূল উদ্দেশ্য ছিল ভোটারের সংখ্যা কম রাখা। ‘ফোরটি শিলিং রুল’ নামের এ বিধি ১৪৩০ সালে ইংল্যান্ডে আইন হিসেবে পাস হয়। ১৮৩২ সালে ‘গ্রেট রিফর্ম’ নামের একটি আইন পাস হওয়ার আগে পর্যন্ত এ আইন বলবৎ ছিল। এ আইন পাসের মাধ্যমে পার্লামেন্ট স্বীকার করে নেয়, ‘ফোরটি শিলিং রুল’ মানবাধিকারবিরোধী ছিল। তারপর কিছু পার্লামেন্টারিয়ান শুধু ভোটারের সংখ্যা বাড়ানোর পক্ষেই নয়, হাউস অব কমন্সের নির্বাচনে ভোট গোপনে দেওয়ার দাবিও তুললেন। ওই সময় ভোট দিতে হতো প্রকাশ্যে। ফলে ভোটারদের ভয় দেখিয়ে কিংবা ঘুষ দিয়ে ভোট দেওয়ানো হতো। কিন্তু গোপনে ভোট দেওয়ার সেই দাবি পূরণ হতে আরও ৪০ বছর পার হয়েছে। ১৮৭২ সালে ব্যালট অ্যাক্ট পাস হওয়ার পর সেটি সম্ভব হয়।

অতি দুঃখের বিষয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে সেই পুরোনো চক্কর ফিরে আসছে। একসময় দেশটিতে আফ্রিকান-আমেরিকানদের ভোট দিতে দেওয়া হতো না। সেই ধরনের একটা ছায়া এখন দেখা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের ২৫টি অঙ্গরাজ্য ভোট গ্রহণের ক্ষেত্রে এমন সব কড়াকড়ি আরোপ করছে, যা ভোট দেওয়াকে কঠিন করে তুলছে। যেমন সম্প্রতি আইন করা হয়েছে, ভোট দিতে হলে অবশ্যই ফটো আইডি অথবা নাগরিকত্বের প্রমাণসূচক কোনো কাগজ নিয়ে আসতে হবে। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে ভোট কম পড়ার ব্যবস্থাও পাকাপোক্ত করা হয়েছে। নিম্ন আয়ের ও সংখ্যালঘু গ্রুপের মানুষদের জন্য ভোট দেওয়া যাতে কঠিন ও ঝামেলাপূর্ণ হয় এবং সেই কারণে তারা ভোট দিতে নিরুৎসাহিত হয়, সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আমেরিকার বেশির ভাগ মানুষ মনে করে, ই-মেইল ভোট এখন খুবই জরুরি। কিন্তু ট্রাম্প ও কট্টর দক্ষিণপন্থীরা তা চান না। কারণ, শ্রমিকশ্রেণি ও আফ্রিকান–আমেরিকান ভোটারদের বেশির ভাগ ডেমোক্রেটিক দলকে সমর্থন করে। কিন্তু ব্যক্তিগত কাজের ব্যস্ততার কারণে তারা ভোট দেওয়ার জন্য ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার সুযোগ করে উঠতে পারে না। সব রাজ্যে ই-মেইলের মাধ্যমে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা চালু হলে তারা ভোট দিতে পারবে। এতে ডেমোক্র্যাটদের জেতার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

কিন্তু আগামী নির্বাচনে কে জিতবে, কে হারবে—এ বিবেচনার চেয়ে সর্বোচ্চসংখ্যক ভোট গ্রহণ নিশ্চিত করাই রাজনীতিকদের কর্তব্য হওয়া উচিত।

ইংরেজি থেকে অনূদিত। স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
ডেভিড স্টেসাভেজ: নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক