Thank you for trying Sticky AMP!!

তুরস্কে বিরোধী রাজনীতির উত্থান

সিনান উলগেন

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান যখন রাজনৈতিক ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চেষ্টা করছেন, তখন বিরোধী দলগুলো সম্প্রতি আশাবাদী হওয়ার মতো কারণ খুঁজে পেয়েছে। ইস্তাম্বুলে এ মাসে যে বড় সমাবেশ হলো, সেটি এক বিরল ব্যতিক্রম।

তুরস্কের প্রধান বিরোধী নেতা কামাল কিলিসদারোলু তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারা থেকে ২৫ দিন হাঁটার পর ৯ জুলাই সমর্থকদের আহ্বান জানিয়েছেন, তাঁরা যেন গণতান্ত্রিক স্বাধীনতাহরণের প্রক্রিয়া প্রতিহত করেন। লাখো জনতার উদ্দেশে বলেছেন, ‘আমরা ভীতির দেয়াল ভেঙে ফেলব। ন্যায়ের মিছিলের শেষ দিনটা হবে নতুন এক শুরু, নতুন পদক্ষেপ।’ এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তুরস্কের বিভাজিত বিরোধীপক্ষ কি বাগাড়ম্বরের বাইরে গিয়ে এরদোয়ানের শাসনের বিরুদ্ধে অর্থপূর্ণ ও ঐক্যবদ্ধ চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারবে।

এরদোয়ানের শাসনে যাঁরা হতাশ, তাঁদের বড় একটা অংশ কামালের দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) সমর্থক। কিন্তু তুরস্কের বিরুদ্ধ রাজনৈতিক পরিবেশে, যেখানে একজন জনপ্রিয় ও বিভেদ সৃষ্টিকারী প্রেসিডেন্ট ক্ষমতায় আছেন, সেখানে বিরোধী নেতাদের পক্ষে এই গতি ধরে রাখাটা কঠিন, যদিও তাঁরা সেটা প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন।

কামালের ইস্তাম্বুলে আসার কদিন আগেই তাঁর সঙ্গে কথা বলেছি, তখন তিনি বলেন, মিছিলের জনসমাগম দেখে তিনি অন্যদের মতোই বিস্মিত। সামনে যে বিপদ অপেক্ষা করে আছে, সেটা সম্পর্কে তিনি অবগত। মিছিলটি ছিল হুরিয়ত পত্রিকার সাবেক সম্পাদক, সাংসদ ও সিএইচপি সদস্য আনিস বারবেরোলুকে গ্রেপ্তারের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ।

কিন্তু মিছিলটি ৪৫০ কিলোমিটার পাড়ি দেওয়ার পরই কেবল গতিপথের মতো এর মূল লক্ষ্যগুলোও জানা যায়। কামাল যখন ইস্তাম্বুলে পৌঁছান, তখন মিছিলকারীরা অর্থনৈতিক সমতা, শিক্ষার সুযোগ, লৈঙ্গিক সমতা এবং জাতিগত, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ভিত্তিক বৈষম্যহীনতার স্লোগান দিচ্ছিলেন। কামাল বলেছেন, তাঁর লক্ষ্য হচ্ছে, তুর্কি রাষ্ট্রকে ঢেলে সাজানো, ক্ষমতাবান সংসদের নির্বাহী কর্তৃত্বের ওপর সুস্পষ্ট সীমা আরোপ, নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ ও মুক্ত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠা করা। এখন সিএইচপি নেতৃত্বের পরীক্ষা হলো, এই নানা উপাদান থেকে সংগতিপূর্ণ রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা।

সম্প্রতি স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ মিছিল থেকে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার অর্জন করা সম্ভব হয়নি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০১৩ সালের মে মাসে ইস্তাম্বুলের গাজি পার্ক উন্নয়ন পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বিপুল মানুষ একত্র হয়েছিল। কিন্তু শেষমেশ এর রাজনৈতিক প্রভাব অনুভূত হয়নি। এবারও একই পরিণতি হতে পারে।

তবু জরিপের ফল দেখে বোঝা যায়, মানুষ ক্রমেই কামালের দলে যোগ দিচ্ছেন। সমাবেশের দিন রিসার্চ ইস্তাম্বুল প্রকাশিত এক জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, সমাবেশের প্রতি মানুষের সমর্থন ৪৩ শতাংশ, যেটা সিএইচপির অনুমোদন হারের চেয়ে ১৭ শতাংশ বেশি।

সিএইচপির সমর্থকদের মধ্যে কুর্দিপন্থী পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টিও (এইচডিপি) আছে, যাদের ৮৩ শতাংশ সমর্থক এই প্রতিবাদের সমর্থন জানিয়েছেন। এমনকি এরদোয়ানের জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির যত সমর্থকের ওপর জরিপ চালানো হয়েছে, তার মধ্যে ১০ শতাংশ এই মিছিলের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।

এই অপ্রত্যাশিত ও অপরিকল্পিত নাগরিক প্রতিবাদের পর মনে হচ্ছে, কামাল এই বৃহত্তর ও খণ্ডিত বিরোধীপক্ষের নেতা হয়ে উঠেছেন। গত জুলাই মাসের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর সরকারের বাড়াবাড়ির কারণে অনেক তুর্কি নাগরিক বিচ্ছিন্ন বোধ করছেন, যদিও সেটা হয়তো সরকারের জন্য অনিবার্য ছিল। জরুরি অবস্থা এখনো আছে—এই অবস্থায় বহু মানুষ বিরোধীদের আইনের শাসন সংহত করার দাবির সঙ্গে একমত হচ্ছেন।

এপ্রিলের সাংবিধানিক গণভোটে এরদোয়ানের সামান্য ব্যবধানে বিজয়ের পর বিরোধীপক্ষের সংকল্প আরও দৃঢ় হয়েছে। এই গণভোটের জয়ে প্রেসিডেন্ট সংসদ ভেঙে দেওয়াসহ ডিক্রি জারি করা ও এককভাবে বিচারক নিয়োগের ক্ষমতা পেয়েছেন। কিন্তু এতে বিরোধীপক্ষের পাল্লা ভারী হয়েছে। রিসার্চ ইস্তাম্বুলের জরিপ অনুসারে গণভোটে যাঁরা ‘না’-এর পক্ষে রায় দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ৮৫ শতাংশ কামালের মিছিলের সঙ্গে একমত। উল্লেখ্য, যাঁরা ‘হ্যাঁ’ ভোট দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ৭ শতাংশ এর প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।

কামালের এই মিছিল তুরস্কের রাজনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে কি না, এখনই তা বলা একটু তাড়াতাড়ি হয়ে যায়। এতে অন্তত ২০১৯ সালে অনুষ্ঠেয় আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে আশা করা যাচ্ছে। এ মাসের শুরুতে এরদোয়ানের জনপ্রিয়তা সামান্য বাড়লেও প্রতিপক্ষ হিসেবে তিনি এখনো শক্তিশালী। কামালের এই ‘নতুন শুরুর’ বাস্তবায়ন করতে এখনো বহুদূর যেতে হবে।

অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন, স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট

সিনান উলগেন: ইস্তাম্বুল-ভিত্তিক সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড ফরেন পলিসি স্টাডিজের (ইডিএএম) নির্বাহী চেয়ারম্যান।