Thank you for trying Sticky AMP!!

দাবানল ছড়াতে পারে গাজার স্ফুলিঙ্গ

গাজার পূর্বাঞ্চলে ইসরায়েলের সীমান্তে ইসরায়েলি বাহিনীর ছোড়া কাঁদানে গ্যাস থেকে বাঁচতে পালাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: এএফপি

গাজায় রক্তপাতের আভাস আগেই পাওয়া গিয়েছিল। ফিলিস্তিনিরা বিক্ষোভ মিছিল করার আগেই ইসরায়েলি সেনারা গোলাগুলি শুরু করেছিল। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, শুক্রবার ভোরে খান ইউনুস সীমান্তে নিজের জমিতে ধনেপাতা তুলছিলেন ওমর সামুর নামের ৩১ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনি কৃষক। এ অবস্থায় তাঁকে গোলা ছুড়ে মেরে ফেলা হয়। গোলার শার্পনেলের আঘাতে আরেকজন কৃষক আহত হন। পরে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী স্বীকার করে বলেছে, সীমান্তে ‘সন্দেহজনক লোকজনকে’ লক্ষ্য করে তারা গোলা ছুড়েছে। 

ভয়ানক কিছু একটা যে ঘটতে যাচ্ছে, সামুরের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সে রকমই আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। শনিবার ফিলিস্তিনিরা শোক দিবস পালন করার মধ্যেই দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার আশঙ্কা দেখা দেয়। এই কয়েক দিনে কমপক্ষে ১৬ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলের সেনারা। এখন আঞ্চলিক বিশ্লেষকদের কাছে এই সহিংসতার বাইরে একটি প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। সেটি হলো ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের এই সংঘাত কি লেবানন, সিরিয়া ও ইরানকে জড়িয়ে আরও ব্যাপক আকার নিতে যাচ্ছে?
একটি বিশ্বাসযোগ্য শান্তিপ্রক্রিয়ার অনুপস্থিতি সর্বশেষ এই সংঘাতের একটি বড় কারণ। ২০০০ সালে দ্বিতীয় ইন্তিফাদা শুরুর সময় এবং ২০১৪ সালে আবারও এমনটা হয়েছিল। গাজা দীর্ঘদিন ইসরায়েল ও মিসর অবরোধ করে রেখেছে। পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি প্রতিপক্ষ ফাতাহর সঙ্গেও হামাসের বিবাদ রয়েছে। এ অবস্থায় হামাস গাজার ওপর থেকে অবরোধ সরানোর জন্য বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের নিয়ে আবার গণবিক্ষোভ শুরু করেছে। অন্যদিকে, দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানে অনিচ্ছুক দক্ষিণপন্থী ইসরায়েলি নেতারা হামাসকে দমন করতে সামঞ্জস্যহীন বলপ্রয়োগের মতো অদূরদর্শী কাজ করে যাচ্ছেন।
সময় ও প্রসঙ্গ বিবেচনায়, অন্যবারের তুলনায় এবারের উত্তেজনার মধ্যে ভিন্নতা আছে। আগামী ১৫ মে ঐতিহাসিক ‘নাকবা ডে’-এর (বিপর্যয় দিবস) ৭০ তম বার্ষিকী পালন করা হবে। এ উপলক্ষে দিবসটির আগের ছয় সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ করার কর্মসূচি দিয়েছে হামাস। শুক্রবার ছিল ওই বিক্ষোভ কর্মসূচির প্রথম দিন।
ইসরায়েল ফিলিস্তিন দখল করে ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ‘স্বাধীনতা দিবস’ ঘোষণা করে। এর পরের দিন অর্থাৎ ১৫ মে দিনটিকে ‘বিপর্যয় দিবস’ হিসেবে পালন করে ফিলিস্তিনিরা। ফিলিস্তিনিদের আপত্তি উপেক্ষা করে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে জেরুজালেমকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার অংশ হিসেবে এই মে মাসেই যুক্তরাষ্ট্র তাদের দূতাবাস তেলআবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তর করবে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে বড় ধরনের সংঘাতের প্রাথমিক লক্ষণ ইতিমধ্যেই দেখা দিতে শুরু করেছে।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন আহত ফিলিস্তিনিরা। ছবি: এএফপি

ঐতিহাসিক নজিরগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয়, স্থানীয় পর্যায়ের সংঘাতের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া আঞ্চলিক পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ে। এখানে সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ হলো লেবানন। সেখানকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তি হিজবুল্লাহ একদিকে ইসরায়েলের আজন্মের শত্রু, অন্যদিকে ইসরায়েলের চিরশত্রু ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র। গাজা সীমান্তে তোলা দেয়ালের মতো করে লেবানন সীমান্তেও ইসরায়েল দেয়াল তুলছে। এই বিষয় এবং লেবানন উপকূলে ইসরায়েলের গ্যাস ও তেল অনুসন্ধান নিয়ে আগে থেকেই ইসরায়েলের সঙ্গে লেবাননের দ্বন্দ্ব লেগে আছে।
ইসরায়েলের জেনারেলদের কাছে সবচেয়ে বড় হুমকি হলো হিজবুল্লাহর হাতে থাকা স্বল্প, মাঝারি ও দূরপাল্লার ১ লাখ ৩০ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেটের মজুত এবং ৫০ হাজার দক্ষ যোদ্ধা। গাজার সহিংসতা যদি চলতে এবং বাড়তে থাকে, তাহলে হিজবুল্লাহ সেখানে হস্তক্ষেপ করে বসতে পারে। ইরানের নেতারা বারবার বলে আসছেন, ইসরায়েল ২০০৬ সালে হিজবুল্লাহর ওপর হামলা চালানোর পর ইরান যতটা চুপ ছিল, এবার আর তা থাকবে না; এবার তারা হিজবুল্লাহকে সরাসরি সামরিক সহায়তা দেবে।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, সিরিয়া ও লেবাননে ইরানের স্থায়ীভাবে উপস্থিতি ধরে রাখার চেষ্টাকে তিনি ইসরায়েলের বেঁধে দেওয়া সীমারেখার লঙ্ঘন হিসেবে দেখছেন। সম্প্রতি একটি ইরানি ড্রোনকে গুলি করে ভূপাতিত করে এবং সিরিয়ায় ইরানের ব্যবহার্য একটি ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালিয়ে ইসরায়েল তার ইরানবিরোধী অবস্থানের জানান দিয়েছে।
এ সমস্যা ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রকে সৎ মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নিতে বলা সময়ের অপচয়ের নামান্তর। কারণ, এ বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেকে পক্ষপাতী হিসেবে ইতিমধ্যেই প্রদর্শন করে ফেলেছেন। আপনারা মে মাসের দিনপঞ্জিতে আরও একটি আগুন লাগানো তারিখ চিহ্নিত করে রাখতে পারেন। তারিখটি হলো ১২ মে। ওই তারিখে মধ্যপ্রাচ্যের শান্তির তাসের ঘর ভেঙে দিয়ে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের করা পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে যাচ্ছেন ট্রাম্প।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে অনূদিত
সিমোন তিসদাল দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার সহকারী সম্পাদক