Thank you for trying Sticky AMP!!

পুতিনের মতো নেতারা যেভাবে গদি আঁকড়ে থাকেন

ভ্লাদিমির পুতিন

দিন কয়েক আগে রাশিয়ার কারাবন্দী ভিন্নমতাবলম্বী অ্যালেক্সি নাভালনির জ্বর-কাশি শুরু হওয়ার কারণে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ২০১৯ সালে ‘একটি অননুমোদিত বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়ার’ জন্য সরকার তাঁকে আটক করেছিল। ২০২০ সালে তাঁকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার পর দৃশ্যত তাঁকে হত্যা করার জন্য তাঁর দেহে বিষপ্রয়োগ করা হয়েছিল এবং এর পেছনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের হাত ছিল বলে ধারণা করা হয়। মরণাপন্ন অবস্থায় নাভালনিকে চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে বেঁচে ফেরার পর গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার একটি আদালত রায় দেন, নাভালনি প্যারোলের শর্ত ভেঙে জার্মানিতে গিয়েছিলেন, তাই তাঁকে তিন বছর জেল খাটতে হবে। এরপর নাভালনিকে আবার আটক করে জেলে পোরা হয় এবং এতে ক্ষুব্ধ হয়ে পুতিনবিরোধী মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল। বিক্ষোভকারীরা পুতিনের গত ২০ বছরের শাসনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। এখন নাভালনি আবার অসুস্থ হয়ে পড়ার পর আবার পুতিনবিরোধী স্বরগুলো উচ্চকিত হতে শুরু করেছে।

কর্তৃত্ববাদী নেতারা অনেক সময় এমন নিবর্তনমূলক তৎপরতা শুরু করেন, যা একসময় তাঁর জন্য বুমেরাং হয়ে আসে এবং তার জের ধরেই তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত হতে হয়। তবে এ কথাও সত্য, আটক-নির্যাতন এবং মামলা বেশির ভাগ সময়ই কর্তৃত্ববাদী নেতাদের দীর্ঘদিন গদিতে থাকতে সহায়তা করে।

একটু পেছনে ফিরলেই আমরা দেখতে পাব ভারতের মহাত্মা গান্ধী, মিয়ানমারের অং সান সু চি এবং যুক্তরাষ্ট্রের মার্টিন লুথার কিংয়ের মতো বহু গণতন্ত্রপন্থী নেতা রাজনৈতিক কারণে কারাবরণ করেছেন। তাঁদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, তাঁদের গ্রেপ্তার হওয়া তাঁদের আন্দোলনকে ধ্বংস করেনি, বরং সংহত করেছে।

রাজনৈতিক বন্দীরা অনেক সময় আন্তর্জাতিক সেলিব্রিটিতে পরিণত হন এবং তাঁদের মুক্তির জন্য বিশ্বব্যাপী জনগণ নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করে যায়। এ বিষয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত বলা যেতে পারে। সেখানে আমরা দেখেছি ২৭ বছর কারাবাসের মধ্য দিয়ে নেলসন ম্যান্ডেলা বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের নেতা হয়ে উঠলেন এবং তাঁর কারণেই দক্ষিণ আফ্রিকার তৎকালীন সরকারকে সরিয়ে দিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে একযোগে চাপ এসেছিল। সারা বিশ্বের বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনকারীরা দক্ষিণ আফ্রিকার পণ্য বর্জন করতে শুরু করেছিলেন এবং ম্যান্ডেলাকে মুক্ত না করা পর্যন্ত তাঁদের (বিক্ষোভকারীদের) সরকারগুলো যেন দক্ষিণ আফ্রিকার কর্মকর্তাদের ওপর অবরোধ আরোপ করে রাখে, সেই দাবি তুলেছিলেন। একপর্যায়ে চাপে পড়ে ১৯৯০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার নেতারা ম্যান্ডেলাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। ম্যান্ডেলা এরপর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং দেশটি থেকে কুখ্যাত বর্ণবাদ উৎপাটন করেন।

একুশ শতকের একনায়কেরা অতীতের একনায়কদের মতো নন। এই নব্য একনায়কেরা এখন ভোট জালিয়াতি করে গদিতে থাকার বৈধতা দাবি করেন। যেসব দেশে কর্তৃত্ববাদী সরকার রয়েছে, সেসব দেশে বিরোধীদের ওপর ‘সরকারিভাবে’ উৎপীড়ন চালানো হয়।

বেলারুশের দিকে তাকালে দেখা যাবে, ১৯৯৪ সাল থেকে গদিতে থাকা প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দর লুকাশেঙ্কো গত আগস্টে নজিরবিহীন নির্বাচনী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিলেন। ভোটের আগে তিনি অধিকাংশ বিরোধী নেতাকে জেলে ঢুকিয়ে তাঁদের নির্বাচনে দাঁড়ানোর জন্য অযোগ্য ঘোষণা করেন। এরপর ভোট হলো। তাঁর একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্ভেৎলানা তিখানোভস্কায়া। চরম অনিয়মের ভোটের ফলে দেখা গেল লুকাশেঙ্কো ভূমিধস জয় পেয়েছেন। অথচ সবাই জানে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ‘ডাকাতি’ হয়েছে। তিখানোভস্কায়ার সমর্থনে মানুষ রাজপথে নামল। তারা লুকাশেঙ্কোর পদত্যাগ চাইল। লুকাশেঙ্কো সেই বিক্ষোভ কঠোরভাবে দমন করলেন এবং জেল এড়াতে তিখানোভস্কায়া দেশ ছেড়ে পালালেন। কিন্তু বিক্ষোভ থেমে থেমে চলতে লাগল। এখনো সেখানে উত্তেজনা রয়েছে।

বেলারুশের ঘটনা থেকে বোঝা যাচ্ছে, বিক্ষোভকে কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলো নির্যাতন দিয়ে কয়েক দিনের জন্য থামিয়ে রাখতে পারছে, কিন্তু একেবারে তা উবে যাচ্ছে না।

তবে লুকাশেঙ্কো এখনো বহাল তবিয়তে আছেন। কারণ, দেশটির অভিজাত শ্রেণি এবং প্রধান প্রধান প্রতিষ্ঠান এখনো তাঁর অনুগত হয়ে আছে।

সবচেয়ে সফল স্বৈরাচার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য শুধু বিরোধীদের নিপীড়নের পথ বেছে নেন না। একই সঙ্গে তাঁরা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে নিজের লোকদের সেখানে বসিয়ে তা নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন এবং যাঁরা তাঁদের ক্ষমতায় টিকে থাকতে সহায়তা করেন, সেই ক্ষমতাধর সহযোগীদের অবাধে দুর্নীতি করার সুযোগ দিয়ে দেন।

পুতিন এই নীতি অনুসরণের বিষয়ে এতটাই ওস্তাদ যে শুধু তাঁর কারণে এ ধরনের আচরণকারী নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যুক্তরাষ্ট্র একটি বিশেষ আইন পাস করেছিল।

ইতিহাস বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাশিয়ার মতো কোনো দেশের কর্তৃত্ববাদী সরকার পতনের জন্য শহুরে মধ্যবিত্ত ও শিল্পকারখানায় কর্মরত শ্রমিকশ্রেণিসহ সেই দেশের অন্তত ৩ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষকে আন্দোলনে নামতে হয়। এই পরিমাণ লোক সক্রিয়ভাবে অংশ নিলে আন্তর্জাতিক বিশ্বের পক্ষে উদাসীন থাকা অসম্ভব হয়ে ওঠে।

এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত
শেলি ইংলিস ইউনিভার্সিটি অব ডেটন হিউম্যান রাইটস সেন্টারের পরিচালক