Thank you for trying Sticky AMP!!

প্রযুক্তির রাশ টেনে কি আত্মঘাতী হচ্ছে চীন

বড় প্রযুক্তি কোম্পানির বিরুদ্ধে আগ্রাসী অবস্থান নিয়েছে চীন

চীনের আবাসন কোম্পানি এভারগ্র্যান্ড ৩০ হাজার কোটি টাকার দেনায় ডুবে যাওয়ায় গোটা বৈশ্বিক শেয়ারবাজারে মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। এটি বিনিয়োগকারীদের যৌক্তিকভাবেই উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। যেহেতু চীনের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩০ শতাংশই আসে আবাসন খাত থেকে, সেহেতু দেশটির গভীর মন্দাবস্থার সঙ্গে আবাসন খাতের সরাসরি যোগসূত্র থাকার বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে।

তবে ২০২১-২২ অর্থবছরে চীনের অর্থনীতি শুধু যে আবাসন খাতের মন্দাবস্থার জন্য ধাক্কা খেয়েছে তা নয়, সরকার প্রযুক্তি খাতের বিরুদ্ধে আগ্রাসী অবস্থান নেওয়ায় সেই ধাক্কা আরও বড় আকারে আঘাত হানতে পারে। মূলত চীনের বহুমাত্রিক প্রযুক্তি খাত ডিজিটাল বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছে। এ খাতের অধিকতর উৎকর্ষের জন্য বেসরকারি খাতকে জোরালো করা এবং এ খাতে বিনিয়োগের প্রবাহ আরও গতিশীল করা দরকার। কিন্তু প্রযুক্তি খাতের বিরুদ্ধে সরকারের নিপীড়নমূলক অবস্থানে এ খাতও ধাক্কা খেতে শুরু করেছে।

প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের ভয় হলো আলিবাবা, টেনসেন্ট ও চু ঝিংয়ের মতো প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর হাতে যে পরিমাণ সম্পদ, তথ্য-উপাত্ত (ডেটা) এবং ক্ষমতা চলে গেছে, তা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) একচেটিয়া ক্ষমতাকে হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারে। সেই ভাবনা থেকে এ বছর সি সরকার এ খাতের ওপর আক্রমণ শুরু করেছে।

প্রযুক্তি খাতে সি সরকার যে নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে, তা দিন দিন কঠোর থেকে কঠোরতর হচ্ছে। যেমন চীনের প্রধান রাইড শেয়ারিং অ্যাপ দিদি (যাদের অ্যাকটিভ ইউজার ৩৭ কোটি ৭০ লাখ) যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) সফলভাবে নথিভুক্তি পাওয়ার পরপরই গত জুলাই মাসে চীনা সরকার অ্যাপটি মুছে দিয়েছে। এতে কোম্পানিটি শেয়ারের দর ২০ শতাংশের মতো হারিয়েছে।

প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের ভয় হলো আলিবাবা, টেনসেন্ট ও চু ঝিংয়ের মতো প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর হাতে যে পরিমাণ সম্পদ, তথ্য-উপাত্ত (ডেটা) এবং ক্ষমতা চলে গেছে, তা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) একচেটিয়া ক্ষমতাকে হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারে। সেই ভাবনা থেকে এ বছর সি সরকার এ খাতের ওপর আক্রমণ শুরু করেছে

চীনের দৈত্যাকার প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর প্রতিটিই দিদির মতো কোনো না কোনোভাবে সিপিসির কোপানলে পড়ছে। আলিবাবার মূল কোম্পানি অ্যান্ট গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্রে আইপিও ছাড়ার পরিকল্পনা করেছিল। সিপিসি সরকার সেই পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিয়ে আলিবাবার আকার আগের চেয়ে ছোট করে দিয়েছে। এমনকি সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট পত্রিকাসহ যতগুলো সংবাদমাধ্যমে আলিবাবার শেয়ার ছিল, তা সব বেচে দেওয়ার জন্য সরকার নির্দেশ দিয়েছে। গত বছর চীনের আর্থিক নজরদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সমালোচনা করেছিলেন আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা। সেই সমালোচনার খেসারত দিতে হচ্ছে এখন আলিবাবাকে।

অন্য দেশগুলোও এ ধরনের ‘বিগ টেক’–এর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। কিন্তু সেসব পদক্ষেপ হয় সীমিত আকারে এবং অর্থনীতির জন্য তা সাধারণত দুর্দশা বয়ে আনে না। উদাহরণ হিসেবে মার্কিন কংগ্রেসে ফেসবুক, গুগল ও টুইটারের সমালোচনা কিংবা গুগল, মাইক্রোসফট ও অ্যাপলের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দীর্ঘদিনের বিরোধিতার কথা বলা যায়। কিন্তু এসবের সঙ্গে চীন সরকারের সাম্প্রতিক বিরোধিতার ধরনের বিরাট ব্যবধান আছে। সরকারের হস্তক্ষেপ অনেক প্রযুক্তি কোম্পানির উদ্ভাবন, উৎপাদন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

নেতৃস্থানীয় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর চীনের অধিকতর নিয়ন্ত্রণ আরোপ এবং কোম্পানিগুলোতে সিপিসির লোকজনকে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বেসরকারি খাতকে সহযোগিতা দেওয়ার ভয়ানক মাত্রায় কমিয়ে দিয়ে চীনা সরকার সোনার ডিম পাড়া সেই হাঁসকে মেরে ফেলছে, যার কারণে চীন আজকের এ জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।

ম্যাকিনসে অ্যান্ড কোম্পানি নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, বেসরকারি খাত বিকশিত হওয়ার কারণে চীনের নগর এলাকায় ১৯৯৫ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে চার গুণের বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে বেসরকারি খাতের রপ্তানি উৎপাদন ৩৪ শতাংশ থেকে ৮৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এখন চীন সরকার বেসরকারি খাতকে, বিশেষ করে প্রযুক্তি খাতকে উৎসাহ দেওয়া কমানোয় উদ্যোক্তারা কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়েছেন। ভয়ের বিষয় হলো অন্য খাতের সিইওরাও এখন বিনিয়োগ ও সৃজনশীলতা ইস্যুতে নিজেদের গুটিয়ে নিতে শুরু করেছেন। পিপলস ব্যাংক অব চায়নার উপাত্ত বলছে, ২০১৯ সালে চীন সরকার ক্ষুদ্র ও মাঝারি বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়া ৬ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়িয়েছে। অথচ রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলোকে এর দ্বিগুণের বেশি ঋণ দিয়েছে তারা।

এ ধারা যদি চলতে থাকে, তাহলে চীনের প্রবৃদ্ধির সূচক নিম্নগামী হতে বাধ্য।

ইংরেজি থেকে অনূদিত, স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট

  • উইলিয়াম আর রোডস সিটিব্যাংকের প্রেসিডেন্ট

  • পি এম ম্যাকিনটোশ গ্রুপ অব দ্য থার্টির নির্বাহী পরিচালক