Thank you for trying Sticky AMP!!

প্রাণঘাতী হামলার জন্য কে দায়ী?

ইরানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর আহভাজে রেভল্যুশনারি গার্ডের সামরিক কুচকাওয়াজ চলার সময় হামলার জন্য ওই অঞ্চলে মার্কিন মদদপুষ্ট দেশগুলোকে দায়ী করেছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। গত শনিবারের ভয়াবহ ওই হামলায় ২৯ জন নিহত এবং ৭০ জন আহত হয়েছে। ১৯৮০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ইরাকি বাহিনীর বিমান হামলার মাধ্যমে ইরান–ইরাক যুদ্ধের সূচনা ঘটে। দিনটি স্মরণে ওই সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়েছিল। খামেনি হামলার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ধরার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। এদিকে প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি এ হামলার ‘কঠোর জবাব’ দেওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।

ভয়াবহ এই হামলার পর প্রশ্ন উঠছে যে কারা এ হামলা চালিয়েছে এবং এর জবাব দিতে গিয়ে ইরান কী ব্যাপক মাত্রায় দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়বে? পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ হামলার জন্য ‘বিদেশি সরকারের নিয়োগকৃত, প্রশিক্ষিত ও অর্থপুষ্ট সন্ত্রাসীদের’ দায়ী করেছেন। জারিফ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে লিখেছেন, ইরান এ হামলার জন্য আঞ্চলিক সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষক ও তাদের মার্কিন প্রভুরা দায়ী বলে ধরে নিয়েছে। জনগণের জীবন রক্ষার জন্য ইরান সরকার দ্রুত এবং দৃঢ়ভাবে এর জবাব দেবে।

ইরানের বার্তা সংস্থা ইরানিয়ান স্টুডেন্টস নিউজ এজেন্সির (আইএসএনএ) তথ্য অনুযায়ী, আল-আহভাজিয়া নামে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী এ হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে। অন্যদিকে ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্তে গ্রুপ (আইএসআইএল), যারা কিনা আইসিস নামেও পরিচিত—তারাও বলেছে যে তারা এ হামলার পেছনে ছিল। আল-আহভাজিয়া গোষ্ঠী সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য কারও জানা নেই। তবে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের মুখপাত্র রামেজান শরিফ বার্তা সংস্থা আইএসএনএকে বলেছেন, গোষ্ঠীটিকে সৌদি আরব অর্থ দেয়। আল-আহভাজিয়ার একজন মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে ইরান ইন্টারন্যাশনাল নিউজ সাইটের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শনিবারের ওই হামলা ছিল আহভাজি আরবদের ওপর দমন–পীড়নের জবাব। হামলা করা ছাড়া আমাদের কোনো উপায় ছিল না।’

অন্য একটি খবরে বলা হয়েছে, আহভাজ ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স গ্রুপ (এএনআরজি) নামে একটি গোষ্ঠীর তরুণ সদস্যরা এ হামলার জন্য দায়ী। আহওয়াজনা ওয়েবসাইটে এক পৃথক বিবৃতিতে আরব স্ট্রাগল মুভমেন্ট ফর লিবারেশন অব আহভাজের (এএসএলএমএ) প্রধান হাবিব জাবের বলেছেন, আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ হিসেবে আহভাজে রেভল্যুশনারি গার্ডদের ওপর এই হামলা চালানো হয়েছে। তবে এএসএলএমএ ও এএনআরজি আল-আহভাজিয়া গোষ্ঠীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কি না বা তারা কোনো জোটের অংশ কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

আহভাজ হচ্ছে খুজেস্তান প্রদেশের রাজধানী শহর, যেখানে রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় তেলের রিজার্ভ। ইরাকের খুব কাছে হওয়ায় এবং সংখ্যালঘু আরবদের কারণে অতীতে এখানে প্রায়ই জাতিগত সহিংসতার ঘটনা ঘটত। আইএসআইএল একইভাবে শনিবারের হামলার দায়দায়িত্ব স্বীকার করেছে, যদিও অনেকে এ ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। তবে ২০১৭ সালের জুন মাসে ইরানের পার্লামেন্টে ও আয়াতুল্লাহ খোমেনির সমাধিতে ধারাবাহিক হামলার জন্য আইএসআইএলকে দায়ী করা হয়। গত জুলাই মাসে ওই সব হামলার জন্য আইএসআইএলের বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজন সদস্যের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এ ছাড়া কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে এবং তাদের বেশ কয়েকটি ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিয়েছে। কে বা কারা হামলা চালিয়েছে, তার উল্লেখ না করে ন্যাশনাল ইরানিয়ান আমেরিকান কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠাতা ট্রিটা পারসি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বলেছেন, এ হামলার উদ্দেশ্য হচ্ছে ইরানকে ব্যাপক মাত্রায় সশস্ত্র যুদ্ধের ফাঁদে ফেলা, যার পরিণতিতে মার্কিন সামরিক বাহিনীকে এ অঞ্চলে টেনে আনবে।

তেহরানভিত্তিক সাংবাদিক মোহাম্মদ হাশেমি বলেছেন, আশির দশকে ইরান এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছিল, কিন্তু তখন হামলার জবাব দেওয়ার জন্য কোনো তাড়াহুড়ো করেনি। হাশেমি আল-জাজিরাকে বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের ক্রমবর্ধমান চাপের প্রেক্ষাপটে এই সময়ে এ ধরনের হামলার পেছনের কারণগুলো ইরান স্পষ্টভাবে বুঝতে পারছে। ইরান কখনো এ ধরনের হামলার জবাব দিতে চটজলদি কোনো পদক্ষেপ নেবে না। তিনি বলেন, তেহরান যদি এ হামলার জবাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে একটি যথোপযুক্ত সময় বেছে নেবে। হাশেমি আরও বলেন, শনিবারের হামলা কেবল ইরান রাষ্ট্রের বৈধতাকে আরও জোরদার করেছে। সাইদ জলিলি নামে তেহরানের আরেকজন সাংবাদিক বলেন, এই হামলা ইরান, তার প্রতিবেশী ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার ভবিষ্যৎ কূটনীতির জন্য শুভ কোনো লক্ষণ নয়। তিনি বলেন, শনিবারের হামলা কেবল শান্তিকামী জাতিগত সম্প্রদায়গুলোকে দুর্বল করবে, যারা বৈধ সামাজিক সংস্কারের মাধ্যমে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে।

ইংরেজি থেকে অনূদিত। আল-জাজিরা থেকে নেওয়া

টেড রিজেনসিয়া: আল-জাজিরার সাংবাদিক