Thank you for trying Sticky AMP!!

ফারুক অখণ্ড ভারতের পক্ষে!

ফারুক আবদুল্লাহ ক্ষমতায় আছেন কি নেই, সেটা তাঁর বক্তব্য শুনেই বোঝা যায়। দৃশ্যত আজকাল তিনি খেপে আছেন বলেই মনে হয়। কারণ, তিনি যেসব কথা বলছেন, তার মধ্যে যেমন তিক্ততা আছে, তেমনি তা একদম খোলাখুলি ভারতের বিপক্ষে যাচ্ছে, যদিও রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে তিনি ভারতের অখণ্ডতা রক্ষার শপথ নিয়েছেন। সর্বশেষ তিনি হুরিয়তের সমর্থনে কথা বলেছেন, যারা কাশ্মীরকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়।
তিনি বলেছেন, ‘ন্যাশনাল কনফারেন্সের কর্মীদের বলতে চাই, আপনারা এই সংগ্রাম ছেড়ে দেবেন না। আমি আপনাদের সতর্ক করছি, আমরা এই সংগ্রামের অংশ। আমরা সব সময় এই রাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করেছি।’
ফারুককে রাজ্যসভা থেকে পদত্যাগ করার পরামর্শ দেওয়া উচিত। কারণ, তিনি একই সঙ্গে ভারত ও হুরিয়তের সঙ্গে থাকতে পারেন না। বস্তুত আমি ধাক্কা খেয়েছি, যে ব্যক্তি একসময় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তিনি কীভাবে এ কথা বলতে পারেন, যে কথা ভারতের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়।
ফারুক সংবাদ শিরোনাম হতে চান, তাই যেকোনো কথাই বলতে পারেন। তিনি কি নিশ্চিত যে হুরিয়ত যা বলছে তা কাশ্মীরের জনগণের স্বার্থের পক্ষে যায়? কাশ্মীর ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হলে কী পরিণতি হবে, সেটা কি তিনি ভেবে দেখেছেন?
যে ছেলেরা ভারতীয় সেনাদের সঙ্গে লড়াই করছে, তারা নিজেদের লক্ষ্য সম্পর্কে পরিষ্কার। সম্প্রতি আমি যখন শ্রীনগরে গিয়েছিলাম, তখন তাদের অনেকেই আমার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তাঁদের লক্ষ্য হচ্ছে, কাশ্মীরকে সার্বভৌম ইসলামি রাষ্ট্র বানানো। কিন্তু তাঁরা পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হতে চান না। বিচ্ছিন্নতাবাদী হুরিয়ত নেতা সৈয়দ আলী শাহ্ গিলানি আর তাঁদের প্রতিনিধিত্ব করেন না, কারণ তিনি কাশ্মীরকে পাকিস্তানের মধ্যে ঢোকাতে চান।
ব্রিটিশরা চলে যাওয়ার সময় কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিং স্বাধীন থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আদিবাসীসহ অন্যান্য অনিয়মিত পাকিস্তানি সেনারা কাশ্মীরে ঢুকে পড়ে। তারা যদি বারামুল্লায় লুটপাট না থামাত, তাহলে হয়তো শ্রীনগর পর্যন্ত দখল করে ফেলত।
তখন ফারুকের বাবা শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ নেহরুর উদ্যোগে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে মহারাজার জমানায় জনগণের রক্ষীসেনা গঠন করেন, তারা ভারতীয় সেনাদের আসার আগেই পাকিস্তানিদের অগ্রগতি থামিয়ে দেয়। এরপর ভারতীয় সেনারা আক্রমণকারীদের পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ঢুকিয়ে দেয়।
যাঁরা সব সময় বলে আসছেন, কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ, তাঁরা ভুল এ কারণে যে জম্মু ও কাশ্মীর ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুসারে স্বায়ত্তশাসন ভোগ করে। এই ধারা অনুসারে পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও যোগাযোগ থাকবে কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণে, আর বাকি সবকিছুই থাকবে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণে, যার ব্যত্যয় ঘটাতে হলে রাজ্যসভার সম্মতি নিতে হবে।
অন্য কথায়, সাংবিধানিক ধারা অনুসারে জম্মু ও কাশ্মীর স্বায়ত্তশাসন ভোগ করে, যা অন্য রাজ্যগুলো করে না। এর পরিণতিতে শেখ আবদুল্লাহ জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যসভায় একটি প্রস্তাব পাস করান; যেখানে বলা হয়, জম্মু ও কাশ্মীর চিরকালের জন্য ভারতে যোগ দিল, যে সিদ্ধান্ত থেকে তারা আর কখনোই ফিরে আসতে পারবে না। এটা করার আগে পাকিস্তান কেমন রাষ্ট্র গঠন করতে যাচ্ছে, সেটা বোঝার জন্য তিনি রাজনীতিক সাদিক সাহেবকে পাকিস্তানকে পাঠান।
সাদিক যখন আবদুল্লাহকে বললেন, পাকিস্তান ইসলামি রাষ্ট্র গঠন করতে যাচ্ছে, তখন তিনি সঙ্গে সঙ্গে ভারতে যোগ দিলেন। কারণ, তিনি ছিলেন মহারাজা ও ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে পরিচালিত গণ-আন্দোলন থেকে গড়ে ওঠা একজন নেতা, যিনি একটি বহুত্ববাদী রাষ্ট্র চেয়েছিলেন। দৃশ্যত ধর্মীয় স্বাধীনতা আছে, এমন একটি গণতান্ত্রিক ভারতই তাঁর কাম্য ছিল।
মনে আছে, জরুরি অবস্থার সময় তিহার কারাগার থেকে যখন মুক্তি পেলাম, তখন এক সহবন্দী বলেছিলেন, আমি যেন শ্রীনগরে গিয়ে শেখ আবদুল্লাহকে অনুরোধ করি, তিনি যেন জরুরি অবস্থার বিপক্ষে অবস্থান নেন। কারণ, দেশের মানুষ তাঁকে শ্রদ্ধা করত। আমার কথা শুনে তিনি বিবৃতি দিলেন, জরুরি অবস্থার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, অনতিবিলম্বে তা তুলে নেওয়া উচিত।
আশা করি, ফারুক বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে মাখামাখি করে ভারতের ক্ষতি করবেন না, বরং তিনি বাবার গুণাবলি আত্মস্থ করে নয়াদিল্লিকে পথ দেখাবেন। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রত্যক্ষ মদদ দেওয়ার আগে তাঁর দ্বিতীয়বার ভাবা উচিত, এসব কী করছেন! হুরিয়তের প্রতি সমর্থন দিয়ে তিনি কাশ্মীরসহ ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের বহু মানুষের মনেই প্রশ্ন সৃষ্টি করেছেন।
ফারুকের বোঝা উচিত, পুরো দেশটাই তাঁর এলাকা। তাঁর কথায় যখন মনে হবে যে ভারতের একতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তখন মানুষ বিভ্রান্ত হবে। কারণ, লোকে তাঁকে ভারতের অখণ্ডতার পক্ষের মানুষ মনে করে, বিচ্ছিন্নতার নয়।
অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন।
কুলদীপ নায়ার: ভারতের সাংবাদিক।