Thank you for trying Sticky AMP!!

ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন ও ট্রাম্পের শান্তি উদ্যোগ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

১২ বছর ধরে ফিলিস্তিনি শান্তি প্রক্রিয়ার সঙ্গে আমি জড়িত আছি। কিন্তু এ নিয়ে আমি কদাচিৎ লেখালেখি করেছি। এর কারণ হলো, গণমাধ্যমে এ নিয়ে কিছু লিখলে বা বললে তা সাধারণত কাউকে না কাউকে কোনো না কোনোভাবে আহত করে। কিন্তু দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ফিলিস্তিন নিয়ে ট্রাম্পের ‘আমেরিকান প্ল্যান ফর পিস’ প্রকাশ পাওয়ার কারণে এ বিষয়ে দুকথা লেখা প্রয়োজন মনে করছি। 

ফিলিস্তিন নামের রাষ্ট্র গঠন সম্ভব এবং এই রাষ্ট্র গঠনের আকাঙ্ক্ষা করা যথেষ্ট ন্যায্য বলে যে অল্পসংখ্যক মানুষ মনে করে থাকে, আমি তাদেরই একজন। বেশির ভাগ বিশ্লেষক এই আইডিয়াকে এখন হেসে উড়িয়ে দেন। ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের অনেকেও এ আশা ছেড়ে দিয়েছেন। 

কিন্তু আমি আশা ছাড়িনি কারণ, আমার বিবেচনাবোধ বলে, যা কিছু ন্যায়সংগত তা অনিবার্যভাবেই ঘটে। আমি মনে করি, ইসরায়েলের ফিলিস্তিনকে অনন্তকাল শাসন করার অভিলাষ পোষণ করা ঠিক হবে না। দখলদারি থেকে মুক্তি এবং রাষ্ট্রব্যবস্থার মর্যাদা ফিলিস্তিনের জন্য খুবই দরকার এবং ‘দুই জাতির এক রাষ্ট্র সমাধান’ আসলে শেষ পর্যন্ত কোনো সমাধানই বয়ে আনতে পারবে না। ফলে সংঘাত থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন ভূখণ্ড গড়ে তোলাই একমাত্র উপায়। 

আমি মনে করি, ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে রূপ দিতে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে হাজার রকমের উদ্যোগ নেওয়ার আছে। কিন্তু ইসরায়েলের পক্ষে সেসব উদ্যোগ তখনই নেওয়া সম্ভব হবে, যদি ফিলিস্তিনিরা তাদের মৌলিক কর্মকৌশল থেকে সরে আসতে রাজি হয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেকেই ফিলিস্তিনিদের ‘কর্মকৌশল পরিবর্তন’—এ টার্মকে পর্যন্ত ফিলিস্তিনিদের জন্য অপমানসূচক মনে করে থাকেন। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের সম্পদের বিস্তর বৈষম্য, গাজাবাসীর ভীতিকর জীবনমান, পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিদের দৈনন্দিন জীবনে ইসরায়েলের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা এবং জেরুজালেম বেদখল হওয়া দেখে তাঁরা ফিলিস্তিনিদের প্রতি গভীরভাবে সহমর্মিতা উপলব্ধি করেন। 

 কিন্তু ফিলিস্তিনিদের এ মুহূর্তে সমবেদনার দরকার নেই। তাদের দরকার রাষ্ট্র বিনির্মাণের একটি কার্যকর কর্মকৌশল। এ আবেগের সমবেদনা তাদের সেটি দিতে পারবে না। ফিলিস্তিনিদের সবচেয়ে বড় সমর্থকেরাই রাষ্ট্র গঠনের কর্মকৌশলের বিরোধিতা করছে। তারা ফিলিস্তিনকে বিদ্যমান বাস্তব রাজনৈতিক অবস্থার নিরিখে তাদের কর্মপরিকল্পনা ঠিক করতে না বলে ঐতিহাসিক ন্যায্যতার মানদণ্ড নিয়ে এগোতে উৎসাহিত করছে। আন্তর্জাতিক কূটনীতির বাজারে তাদের এই সমর্থন-ভঙ্গিমা এবং ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থনসূচক বাগাড়ম্বরের দাম কানাকড়ির সমান। এ কল্পনার মুদ্রা দিয়ে বাস্তবের বাজার থেকে কিছুই কেনা যাবে না। 

বাস্তব অবস্থা থেকে কিছু পেতে গেলে বাস্তব পদক্ষেপই নিতে হবে। পাশাপাশি দুটি রাষ্ট্রের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য কিছু বাস্তবতা স্বীকার করে নিতে হবে। খেয়াল রাখার বিষয় হলো ইসরায়েল স্বীকৃত একটি রাষ্ট্র এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার চেষ্টা করছে। এ অবস্থায় ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করলে সেটি ইসরায়েলের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে না—ইসরায়েল এই নিশ্চয়তা চাইবেই। ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে গড়তে হলে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সহযোগিতা দরকার হবে। প্রতিবেশী হিসেবে ইসরায়েল এ সহযোগিতা দেবে কি না, সেটি ফিলিস্তিনের কৌশলগত অবস্থানের ওপর নির্ভর করছে। 

বাস্তবতা হলো, গাজা নিয়ন্ত্রণ করে হামাস, যারা এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলকে ধ্বংস করার বিষয়ে বদ্ধপরিকর। অন্যদিকে পশ্চিম তীর নিয়ন্ত্রণ করে ফাতাহ। ফাতাহ সংগঠনটির মধ্যে বহু ভাগ রয়েছে। ফাতাহ আর হামাসের মধ্যে প্রথম থেকেই সাপে-নেউলে সম্পর্ক। ১৪ বছর ধরে ফিলিস্তিনে কোনো গণতান্ত্রিক নির্বাচনও হয় না। ফলে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য এমন কোনো কর্মকৌশল প্রণয়ন সম্ভব হচ্ছে না, যা সব পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। ট্রাম্প ফিলিস্তিনের বিষয়ে যে শান্তি উদ্যোগের ঘোষণা দিয়েছেন, তা ফিলিস্তিনের সব পক্ষের নেতারা প্রত্যাখ্যান করেছেন। কিন্তু তাঁরা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাম্প প্রশাসনকে বলেননি, এই এই বিষয়ে তাঁদের আপত্তি রয়েছে। এমনকি তঁারা ট্রাম্পের সঙ্গে এ নিয়ে দেখা করারও ইচ্ছা প্রকাশ করেননি। ফিলিস্তিনিদের এ অবস্থান তাদের স্বার্থে কোনো কাজ করবে না। তাদের উচিত হবে প্রস্তাবিত চুক্তির কোথায় কোথায় ভুল বা আপত্তির বিষয় আছে তা ধরিয়ে দেওয়া। তাদের বৈঠকে বসতে চাওয়া উচিত। পুরো বিষয় নিয়ে বিশদ আলোচনা করা উচিত। সেটি যত দিন না হচ্ছে, তত দিন এ সংকট থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। 

ইংরেজি থেকে অনূদিত। স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
টনি ব্লেয়ার যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বর্তমানে ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল চেঞ্জ-এর চেয়ারম্যান