Thank you for trying Sticky AMP!!

বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ব্যাখ্যা করা কঠিন কেন?

বাংলাদেশের সামাজিক সুরক্ষা খাত, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস সরবরাহ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত, অবকাঠামো নির্মাণসহ প্রধান প্রধান সেবা খাতের দিকে তাকালে আমরা দেখি বাংলাদেশ অর্থনীতি প্রায়োগিক দিক থেকে জন মেইনার্ড কেইনস–এর ‘প্রগতিশীল উদারনীতিবাদ’ তত্ত্বকে কাছাকাছি থেকেই ধারণ করে। এখানে পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে রাষ্ট্রীয় কিছু হস্তক্ষেপ রয়েছে, নিত্যপণ্যের বাজারমূল্যে রাষ্ট্র নেগোশিয়েট করে, মূল সেবাগুলো এখনো রাষ্ট্রায়ত্ত, সামান্য কিছু শিল্পও রাষ্ট্রায়ত্ত, কৃষি ও রপ্তানি শিল্প খাতে ভর্তুকিসহ সামাজিক সুরক্ষার জোরালো অবস্থান ধরে রেখেছে রাষ্ট্র।
সমস্যা হচ্ছে, সেবাদান পদ্ধতি টেকসই নয়। সরকারি সেবা ও উন্নয়নকাজের মান প্রশ্নযুক্ত, দীর্ঘ মেয়াদে টেকসই নয়, পরিবেশবান্ধবও নয়। শিক্ষায় সরকারি বিনিয়োগ আছে, তা পর্যাপ্ত নয়, মানসম্মতও নয়। টাকার অঙ্কে শিক্ষাসহ সব সেবার খাতে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ যথেষ্ট মনে হলেও অপব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা, কারিগরি অক্ষমতা, দুর্নীতি, অপখরচ ও প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘ সময় ক্ষেপণ সবকিছুর পরে বাজেট বরাদ্দের বাস্তবায়ন ভ্যালু ও মান খুবই কম। তাই সেবাগুলো ‘উপযোগ’ তৈরি করে না সেভাবে।
অন্যদিকে স্বাস্থ্যে সরকারি বাজেট বরাদ্দ এত কম এবং স্বাস্থ্যসেবা মান এই মানহীন যে রোগনির্ণয় থেকে চিকিৎসাসেবার সবকিছুতে প্রায় সব রোগীকেই বেসরকারিতে যেতে হয়। অর্থাৎ কিছু রাষ্ট্রীয় সেবা থেকেও নেই। বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাসসহ প্রাইমারি জ্বালানি সরবরাহে রাষ্ট্রের ভর্তুকি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেশি। এর সুফল পাচ্ছে দুর্নীতিবাজ আমলাতন্ত্র, রাজনৈতিক ক্ষমতাশালী প্রভাব বলয়। সামাজিক সুরক্ষা ভাতার পরিমাণ খুব কম, শিক্ষা উপবৃত্তি ছাড়া বাকিদের উৎপাদনের সম্পর্ক নেই। অলস বলে উৎপাদন ও পুনঃ আয়ের দিক থেকে নতুন আর্থিক লাইফ সাইকেল তৈরিতে মাসিক ভাতার অঙ্কের ৬০০ (প্রতিবন্ধী ভাতা) বা ৯০০ (বয়স্ক ভাতা) টাকা দারিদ্র্য বিমোচনে ও ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজে আসে না। ফলে ‘প্রগতিশীল উদারনীতিবাদ’–এর ন্যূনতম তাত্ত্বিক যেসব উপযোগিতা মানুষের জীবন মানে প্রতিফলিত হওয়ার কথা, সেগুলো আমরা আসলেই দেখি না।

বাংলাদেশের আইনি কাঠামোতে অর্থনীতির বহু বিষয়ে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ আছে, আমদানি–রপ্তানি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে লাইসেন্সিং চালু আছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ঘুষ তদবিরের পেছন দরজা দিয়ে সবকিছুরই সুব্যবস্থা করা যায়। শর্তযুক্ত আমদানি পণ্যকেও বেনামে শুল্কমুক্ত আমদানি করে দেশীয় উৎপাদনকে চরমভাবে কোণঠাসা করে তোলা হয়। পাশাপাশি বিদ্যুৎ, জ্বালানি, অবকাঠামো নির্মাণ, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি, ওষুধশিল্প, ব্যাংকিং, টেলিযোগাযোগ ও রপ্তানিমুখী শিল্পে ব্যাপকতর বেসরকারি উপস্থিতি প্রবলভাবে লক্ষণীয়। ফলে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের সংকোচন, নিয়ন্ত্রণহীন মুক্তবাজার, বিলগ্নীকরণ, ধীরে ধীরে সামাজিক সুরক্ষায় ব্যয় সংকোচন, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার বিপুল বিকাশ, বিপুল বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ, বেপরোয়া অভ্যন্তরীণ ব্যাংকঋণ নেওয়া, বৈদেশিক মুদ্রা তহবিল বা ফরেন কারেন্সি রিজার্ভের অর্থ থেকে ঋণ, কোয়ান্টিটি থিওরি কিংবা ফ্র্যাকশনাল রিজার্ভ সিস্টেমে টাকা তৈরির মতো নব্য উদারনীতিবাদ বা নিওলিবেরালিজম অর্থনীতির ধারণাও বাংলাদেশে উপস্থিত।

চলমান দশকে অন্তত তিনবার বাজারে অর্থ সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ ছিল, ২০১০ শেয়ারবাজার ধসের পর, ২০১৪–এর একদলীয় নির্বাচনী অচলাবস্থা ও আস্থাহীনতার পরে এবং করোনার সংকট মোকাবিলায় ২০২০ সালে। (এখানে ঋণ প্রদান কাঠামোর প্রাতিষ্ঠানিক ত্রুটি আছে) তথাপি কন্সট্যান্ট রিটার্ন প্রিন্সিপাল মতে, বাজারে ব্যাপক অর্থ সরবরাহ করেও সেভাবে উপযোগ (ইউটিলিটি) পাওয়া যায়নি। অস্থিরতাগুলোর পরে মুদ্রানীতির সংশোধন পরিবর্তন করে ঋণপ্রবাহ, কর্ম ও বিনিয়োগ অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারের জন্য হেলিকপ্টার মানি ছড়ানো হয়েছে, ক্ষমতা বলয়ের আশপাশের লোক, ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা যে যেভাবে পেরেছেন নেগোসিয়েশন করে কিছু ঋণ বের করে এনেছেন। কিন্তু তার সঙ্গে সত্যিকারের উদ্যোগ, ব্যবসা ও শিল্প বিনিয়োগের সরাসরি সম্পর্ক সব ক্ষেত্রে ছিল না। স্পষ্টতই প্রাইভেট কনজাম্পশন ধীরে ধীরে কমছে।

মানব পুঁজি এবং প্রায়োগিক পুঁজি মিলে আমাদের দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিকে কর্মময় করছে না, প্রযুক্তি হস্তান্তর হচ্ছে না। অর্থাৎ নব্য উদারনীতিবাদ বা নয়া ধ্রুপদি পুঁজিবাদী ধারা অর্থনীতির ন্যূনতম তাত্ত্বিক সুফলগুলোও কিন্তু আমরা সমাজ ও অর্থনীতিতে দেখি না।

ঋণদানের মাধ্যমে বাজারে যতটা অর্থ তৈরি হয়েছে বলা হচ্ছে, তার পুরোপুরি বিনিয়োগ হয়নি বলে আদৌ অর্থ ততটা তৈরি হয়নি। ফলে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ আর কর্মসংস্থান খাতে প্রবৃদ্ধির গতি অসামঞ্জস্যপূর্ণ থেকে গেছে। অর্থাৎ নয়া উদারপন্থী অর্থনৈতিক ধারার সুফল প্রাপ্তির হিসাব নিতে গেলেও আমরা বেশ ঘাপলা দেখি, কেননা প্রায় সাড়ে ১৭ কোটি মানুষের সুবিশাল বাজারের বিপরীতে যেমন উচ্চ দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ ও শিল্প প্রবৃদ্ধি আসার কথা, তেমনটা কিন্তু আমরা দেখছি না। সরকার অবকাঠামো খাতে নিজেই ব্যাপক বিনিয়োগ করে এবং পরিচালনা খরচ ব্যাপক বাড়িয়ে দেশজ প্রবৃদ্ধি জারি রেখেছে, যা বিদেশি বিনিয়োগ আসছে তার বিশাল অংশ দ্বিপক্ষীয় সরকারি কাঠামোয়, উন্মুক্ত বাণিজ্য প্রবাহে তেমন নয়।
মানব পুঁজি এবং প্রায়োগিক পুঁজি মিলে আমাদের দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিকে কর্মময় করছে না, প্রযুক্তি হস্তান্তর হচ্ছে না। অর্থাৎ নব্য উদারনীতিবাদ বা নয়া ধ্রুপদি পুঁজিবাদী ধারা অর্থনীতির ন্যূনতম তাত্ত্বিক সুফলগুলোও কিন্তু আমরা সমাজ ও অর্থনীতিতে দেখি না। কেমন অদ্ভুত অর্থনীতি আমাদের!
নিও-লিবারেল অর্থনীতির সমালোচকদের মতে, যেসব কুফল আসার কথা সেগুলো কিন্তু ঠিক ঠিক অর্থনীতিতে দৃশ্যমান। মুদ্রার প্রবাহ বৃদ্ধি তথা মুদ্রাস্ফীতি ঘটানোর প্রধান ভুক্তভোগী প্রান্তিক নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত। খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত উভয় ধারার মূল্যস্ফীতিতে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে, আয় সংকুচিত হয়ে প্রান্তিক, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস উঠেছে। ব্যাংকিং ব্যবস্থার মালিক, পরিচালক, ব্যবস্থাপক, বণিকশ্রেণি ও উচ্চবিত্ত মুদ্রানীতির পরিবর্তনের (অর্থ সরবরাহ বাড়ানোর) সুফল লুফে নিয়েছে। বাংলাদেশে চরম আর্থিক বৈষম্য তৈরি হয়েছে। সম্পদ বৃদ্ধিতে বাংলাদেশ বিশ্বে শীর্ষে অবস্থান করছে বিগত অর্ধদশক ধরে। সর্বনিম্ন আর্থিক প্রান্তিক শ্রেণির আয় সংকোচন সমীক্ষা ও গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত। ভূমিহীন গৃহহীন মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। শুধু লাভ–ক্ষতির আতশি কাচে সবকিছু দেখতে গিয়ে মানবিক চিন্তা ক্রমেই ক্ষইতে শুরু করেছে। সামাজিক অপরাধের ব্যাপকতা বেড়েছে, অপরাধের প্রকৃতিগুলো ক্রমেই ভয়ংকর হয়ে উঠেছে।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপুঁজি ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে বিপর্যয়ে পড়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ওপর ব্যাংকিং খাতের আস্থাহীনতার কমতি কি নয়া ধ্রুপদি পুঁজিবাদী অর্থনীতিরই অনিবার্য পরিণতি (!), যা নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিৎজ তাঁর গ্লোবালাইজেশন অ্যান্ড ইটস ডিসকনটেন্টস ২০০২ বইতে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন! স্টিগলিৎজ যেমনটা বলেছেন ‘নয়া’ উদারবাদী নীতির ফলে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির বিস্তৃতি ঘটবে, এ থেকে শক্তিশালী দেশগুলো লাভবান হয় শুধু। বহুপক্ষীয় সংস্থার ঋণের বিপরীতে বাংলাদেশে আমরা চীন ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় ঋণের উল্লম্ফনই দেখি শুধু! যেগুলো স্থানীয়দের জন্য কর্মহীন।
সাধারণত পুঁজিবাদী অর্থনীতি সংকটে পড়লে, উৎপাদন ও সরবরাহ (সাপ্লাই) সংকট, চাহিদা (ডিমান্ড) সংকট নিরসনে অর্থ সরবরাহ, বাণিজ্য ও ব্যাংকিং নীতিতে কমবেশি পরিবর্তনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ জোরদার করা হয়। মুদ্রানীতি সংশোধন করে উৎপাদন সরবরাহের সমস্যাগুলোকে মোকাবিলা করা হয়। ডিমান্ড সাইডের সমস্যা সমাধানে রাষ্ট্রীয় ভাতা ও ভর্তুকি বাড়িয়ে প্রান্তিক নাগরিকের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়।
করোনা মহামারির নিয়ে আসা মন্দা মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকার প্রথমে উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার সংকট নিরসনে বেশ কিছু ঋণ প্রণোদনা ঘোষণা করে। সহজ সুদের ঋণ প্রকল্পগুলোর মধ্যে ছিল সহজ শর্তের বৃহৎ শিল্পঋণ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, কৃষিঋণ, প্রি-শিপমেন্ট ঋণ, রপ্তানিমুখী শিল্পের শ্রমিকদের বেতন–ভাতা ঋণ। রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল ঋণের আকারও বৃদ্ধি করা হয়েছে। ব্যাংকঋণের নিয়মিত কিস্তিগুলো কিছু সময়ের জন্য স্থগিত করেছিল। সব মিলে মহামারিজনিত মন্দাকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের করোনাকালীন অর্থ ব্যবস্থাপনার কৌশল প্রশংসনীয় ছিল।

অর্থনৈতিক মন্দাকালে ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগের ফলপ্রসূ সুফল পাওয়া যায়নি। যায়নি কারণ প্রাতিষ্ঠানিক প্রস্তুতি অস্বচ্ছ, দুর্নীতিপ্রবণ, সেকেলে ও পশ্চাৎপদ। নাগরিকের আয় ও ক্রয়ক্ষমতার ডিজিটাল হালনাগাদ তথ্যশালা সরকারের নেই। কারা ঠিক কীভাবে করোনা বেকারত্ব বা জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত সরকার সেটা জানেই না ডেটাবেইসের অভাবে।

এক অঙ্কের সুদ বাস্তবায়নের চাপও আমরা দেখেছি। তথাপি আমরা পত্রিকার সংবাদে দেখছি নানা সব বিশৃঙ্খলা ও অপব্যবস্থাপনার কথা। ‘সব ব্যাংক ঋণ দিতে চায় না’ (প্রথম আলো, ১৮/১১/২০২০), ‘সংকট থেকে তারল্যের বান ব্যাংক খাতে’ (বণিক বার্তা, ১৬/১১/২০), ‘কাগজে-কলমে ব্যাংকের মুনাফা বাড়ছে’ (ডেইলি স্টার,১/১০/ ২০২০), ‘বড়রা পাচ্ছে, ছোটরা ঘুরছে’ (প্রথম আলো,৭/৯/২০), ‘প্রণোদনার অর্থ বিতরণে হ-য-ব-র-ল’ (মানবজমিন, ১৬/১১/২০), ‘সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের টাকা পায়নি ৭২% প্রতিষ্ঠান: সানেম গবেষণা’ ইত্যাদি।
প্রথমে দ্বিধান্বিত থাকলেও, সরকার ডিমান্ড সাইডের সংকট সমাধানের কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। যেমন ত্রাণ ও নগদ অর্থ সাহায্য। ত্রাণসামগ্রী অপ্রতুল ছিল, তা–ও ব্যাপকভাবে চুরি হয়েছে। অন্যদিকে মোবাইল ব্যাংকিং নগদ অর্থ সাহায্য দেওয়ার ক্ষেত্রেও সুবিধাভোগীদের তালিকা তৈরির প্রক্রিয়াও দলীয় নেতা-কর্মী সর্বস্ব ছিল। ফল হচ্ছে, ‘৫০ লাখ পরিবারের মধ্যে ৩৪ লাখ এখনো টাকা পায়নি’ (৮/৭ /২০, প্রথম আলো)। পরিবারপ্রতি আড়াই হাজার টাকা নগদ সহায়তা নেওয়ার যোগ্য নন, এমন অনেকেই তালিকায় ছিল। বহু নামের বিপরীতে একই মোবাইল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রেখে দুর্নীতির চেষ্টা হয়েছে। ছিল সরকারি কর্মচারী, পেনশনভোগী এবং পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রের মালিকও। একদিকে ভাতার অর্থ অপ্রতুল ছিল, অন্যদিকে দুর্নীতিতে পড়ে পুরো প্রক্রিয়াটাই আটকে গেছে। মোটকথা, অর্থনৈতিক মন্দাকালে ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগের ফলপ্রসূ সুফল পাওয়া যায়নি। যায়নি কারণ প্রাতিষ্ঠানিক প্রস্তুতি অস্বচ্ছ, দুর্নীতিপ্রবণ, সেকেলে ও পশ্চাৎপদ। নাগরিকের আয় ও ক্রয়ক্ষমতার ডিজিটাল হালনাগাদ তথ্যশালা সরকারের নেই। কারা ঠিক কীভাবে করোনা বেকারত্ব বা জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত সরকার সেটা জানেই না ডেটাবেইসের অভাবে। উদ্যোগ অপ্রতুল হলেও তার লক্ষ্য কিন্তু ভালোই ছিল, কিন্তু সেগুলোর বাস্তবায়ন সক্ষমতা কম। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এটাই বাংলাদেশের প্রশাসনিক সক্ষমতার প্রধান চিত্র।
মোটকথা, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পুঁজিবাদের আধুনিক দুটি ধারায় উপযোগপ্রাপ্তির দিক থেকে সহজে ব্যাখ্যা করা কঠিন। হতে পারে বিষয়টা এই যে বাংলাদেশের সামাজিক–রাজনৈতিক–অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা ও দক্ষতা এত কম, দুর্নীতি অপব্যবস্থাপনা স্বেচ্ছাচারিতা এত বেশি, প্রশাসনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহির অনুপস্থিতি এত প্রকট, জ্ঞানভিত্তিক টেকসই ব্যবস্থাপনায় এত পিছিয়ে যে আমাদের অক্ষম প্রতিষ্ঠানগুলো যেকোনো অর্থনৈতিক ব্যবস্থারই ন্যূনতম ইউটিলিটি সুফল নিতে মোটামুটি ব্যর্থ। ফলে ‘স্বাধীন সার্বভৌম ও সক্ষম প্রতিষ্ঠান’ গড়ে তোলাই প্রায় ৫০ বছর বয়সী বাংলাদেশের মূল মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু থাকা চাই।

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব টেকসই উন্নয়নবিষয়ক লেখক। গ্রন্থকার: চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও বাংলাদেশ।
faiz.taiyeb@gmail. com