Thank you for trying Sticky AMP!!

বাইডেনের মানবাধিকারের প্রতিশ্রুতির কী হবে

জো বাইডেন নির্বাচনের আগে বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলতেন

মার্কিন সিনেটে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ক্যারিয়ার দীর্ঘ। সিনেটর থাকাকালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে মানবাধিকারের বিষয় সংযুক্তির বিষয়ে বরাবরই উচ্চকিত থেকেছেন। এখন তিনি নিজে প্রেসিডেন্ট। এখন তিনি তাঁর পররাষ্ট্রনীতিতে মানবাধিকারকে কতখানি প্রাধান্য দেবেন, সবাই তা দেখার অপেক্ষায় আছে। প্রতিরক্ষা, অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং অন্যান্য মূল্যবোধসহ বিভিন্ন ইস্যু পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। কিন্তু পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে যখন মানবাধিকারের প্রশ্ন সামনে চলে আসে, তখন শঠতা ও ভণ্ডামি তার সঙ্গে যুক্ত হয়।

২০১৮ সালে ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যার ঘটনার দিকে চোখ ফেলা যাক। ওই হত্যাকাণ্ড যে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের নির্দেশে হয়েছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট তথ্যপ্রমাণ থাকার পরও মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে সম্পর্ক অটুট রাখার জন্য সে সময়কার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পুরো ঘটনা এড়িয়ে গেছেন। এ নিয়ে ট্রাম্পকে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। উদারপন্থীরা তো বটেই, এমনকি রক্ষণশীল মার্কিন নাগরিকেরাও ট্রাম্পের নির্লিপ্ত আচরণের কঠোর সমালোচনা করেছিলেন।

তেল–বাণিজ্য, সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে ট্রাম্প প্রাধান্য দিয়েছেন এবং এসব ইস্যুকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কারণে খাসোগি হত্যার বিচারের বিষয়টিকে এড়িয়ে গেছেন। তবে এই হত্যার সুবিচার নিশ্চিত করাকেও অনেকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে মনে করে থাকেন এবং তাঁরা মনে করেন, খাসোগি হত্যায় ব্যবস্থা নিলে মানবাধিকারের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান স্পষ্ট হতো। কিন্তু খাসোগি হত্যার ইস্যু আমলে না নেওয়ায় বিশ্বের দরবারে এই বার্তা গেছে যে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের স্বার্থের কারণে মানবাধিকার ইস্যুকে আমলে নেয়নি।

পররাষ্ট্রনীতিতে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের স্বার্থের বিষয়কে একসঙ্গে সামাল দিতে গেলে আপসকামী হতেই হয়। ২০২০ সালে জো বাইডেন তাঁর নির্বাচনী প্রচার চালানোর সময় খাসোগি ইস্যুতে ট্রাম্পের চোখ বুজে থাকার কড়া সমালোচনা করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর বাইডেন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালককে এমন একটি গোপন প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশ করার অনুমতি দিয়েছেন, যাতে মোহাম্মদ বিন সালমানকে খাসোগি হত্যার জন্য দায়ী করার পাশাপাশি ৭৬ জন সৌদি কর্মকর্তাকে যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করা এবং ইয়েমেনে সৌদি আরবের সামরিক অভিযানে মার্কিন সমরাস্ত্রের ব্যবহার কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে।

তবে উদারপন্থী বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে জো বাইডেনের আরও শক্ত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত এবং মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র কোনো ধরনের চুক্তি করবে না বলে ঘোষণা দেওয়া উচিত। একই সঙ্গে তাঁর বদলে অন্য কোনো যুবরাজকে ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য সৌদি বাদশাহ সালমানের ওপর চাপ প্রয়োগ করা উচিত বলেও তাঁরা মনে করেন। অবশ্য অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, সৌদি রাজপরিবারের নেতৃত্ব বদলের ক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের হাতে নেই। তবে ট্রাম্প যেটি করেননি, বাইডেন তা করেছেন এবং আমেরিকান মূল্যবোধ নিয়ে কথা বলেছেন। যদিও বাইডেন এখন পর্যন্ত মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেননি।

চীন ও সৌদি আরবের মানবাধিকার নিয়ে আমরা যতই সমালোচনা করি, এই দুই দেশের সঙ্গে পরিবেশ ইস্যুতে কাজ করতেই হবে। সে ক্ষেত্রে বাইডেনের পক্ষে পররাষ্ট্রনীতিতে মানবাধিকার ইস্যুকে একটি ভারসাম্যমূলক মাত্রায় রেখে এগোনো ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না

বাইডেনের চীন নীতিতেও একই ধরনের ইস্যু উঠে এসেছে। বাইডেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের ‘দেহে কোনো গণতান্ত্রিক হাড় নেই’ বলে কঠোর সমালোচনা করেছেন। এ ছাড়া মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান সম্প্রতি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং সে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে চীনের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছেন। বিশেষ করে জিনজিয়াং প্রদেশে মুসলমানদের ওপর সরকারি বাহিনীর নির্যাতন এবং হংকংয়ের বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন-পীড়নের সমালোচনা করেছেন তাঁরা। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে একটি বিবৃতিতে ‘খুনি’ বলে আখ্যা দেওয়ার বিষয়টিকে জো বাইডেন অনুমোদন দিয়েছেন।

তারপরও যুক্তরাষ্ট্রে জলবায়ু সম্মেলনে যখন বিদেশি নেতাদের দাওয়াত দেওয়ার সময় হলো, তখন বাইডেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনকে দাওয়াতের তালিকায় রেখেছেন। অবশ্য নিমন্ত্রিতদের তালিকায় সৌদি বাদশাহ সালমানকে রাখা হলেও তাঁর ছেলেকে রাখা হয়নি। এটিকে বাইডেনের শঠতা বলে অনেকে মনে করতে পারেন। তাঁরা প্রশ্ন করতে পারেন, এই দেশগুলো ছাড়া কি যুক্তরাষ্ট্রের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা একেবারে অসম্ভব? উত্তর হলো, হ্যাঁ, অসম্ভব।

চীন এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী দেশ এবং সৌদি আরব সবচেয়ে বেশি হাইড্রোকার্বনের উৎস। এই দুটি দেশ যদি সহযোগিতা না করে, পরিবেশ ইস্যুতে সহযোগিতা না করে, তাহলে সমস্যার সমাধান কঠিন হবে। তার মানে চীন ও সৌদি আরবের মানবাধিকার নিয়ে আমরা যতই সমালোচনা করি, এই দুই দেশের সঙ্গে পরিবেশ ইস্যুতে কাজ করতেই হবে। সে ক্ষেত্রে বাইডেনের পক্ষে পররাষ্ট্রনীতিতে মানবাধিকার ইস্যুকে একটি ভারসাম্যমূলক মাত্রায় রেখে এগোনো ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।

ইংরেজি থেকে অনূদিত, স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট

জোসেফ এস নাই হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক