Thank you for trying Sticky AMP!!

বাজেট দিয়ে ভোট কিনতে চান মোদি

নরেন্দ্র মোদি

ভারতের লোকসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ততই ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) প্রচারের মাঠ নিজের দখলে নেওয়ার তৎপরতা জোরদার করছে; বিশেষ করে নির্বাচনের আগে সরকার যে বাজেট ঘোষণা করেছে, তাতে এ বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।  

ভারতে নির্বাচনের আগে সরকার যে বাজেট ঘোষণা করে থাকে, তাকে ‘অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট’ হিসেবে ডাকার একটা রেওয়াজ আছে। নির্বাচনে নিজের বাক্সে যাতে বেশি ভোট পড়ে, সেদিকে খেয়াল রেখে ক্ষমতাসীন দল বাজেট পেশ করে।

নির্বাচন শেষে নতুন সরকার ক্ষমতা হাতে না নেওয়া পর্যন্ত এই সময়টুকু ক্ষমতাসীন সরকার এই বাজেটকে তার একান্ত নিজের বাজেট বলে মনে করে। তবে ফেব্রুয়ারির গোড়াতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার যে সর্বশেষ বাজেট দিয়েছে, তা মোদির পূর্বসূরিদের সব নজির ছাড়িয়ে গেছে। মোদির এই সর্বশেষ বাজেটে নজিরবিহীন কর অব্যাহতি ও অন্যান্য ছাড়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

এই বাজেটে তিনটি বিষয় খোলাসা হয়েছে। এক. যেসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা যাবে না জেনেও সেসব প্রতিশ্রুতি দেওয়ার প্রবণতায় বিজেপি এখনো আচ্ছন্ন আছে। দুই. গত পাঁচ বছরে যেসব রাজ্যে বিজেপি তার প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়েছে, সেখানেও নির্বাচনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তারা ভোটারদের আস্থা ফেরানোর চেষ্টা করে যাবে। তিন. দেশ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে, তা মোদির দল এখনো আমলে নেয়নি। 

অন্তর্বর্তীকালীন অর্থমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের বাজেট বক্তৃতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো কৃষকদের জন্য একটি বেসিক ইনকাম সাপোর্ট স্কিম চালু করা। এ বিষয়টিই বিশ্লেষকদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই খাতে প্রত্যেক দুস্থ কৃষককে বছরে ৬ হাজার রুপি বরাদ্দ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। গত কয়েক বছরে ভারতে রেকর্ডসংখ্যক কৃষক অভাব আর অনাহারের মুখে আত্মহত্যা করেছেন। প্রতি মাসে একটি পাঁচ শ রুপির নোট দিয়ে কি সেই কৃষকদের দুঃসহ কষ্ট লাঘব করা যাবে? দিনে সাড়ে ১৬ রুপি দিয়ে একজন নিরন্ন কৃষকের মুখে হাসি ফোটানো যাবে?

এই সামান্য অর্থে দীনদরিদ্র কৃষকদের জীবনযাপনে কোনো পরিবর্তন আসবে না জেনেও মোদি সরকার তিন কিস্তিতে তাঁদের অর্থটা দেবে। মানে
করদাতাদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে দুস্থ কৃষকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আগামী লোকসভার আগেই ২০০০ রুপি করে দেওয়া হবে। এটিকে প্রধানমন্ত্রীর পুনর্নির্বাচনের ভর্তুকি বলা যেতে পারে।

এই বাজেটে আরেকটি বড় ছাড় দেওয়া হয়েছে নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্ষেত্রে। বলা হয়েছে, যাঁদের বার্ষিক আয় সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ রুপি, তাঁদের করছাড় দ্বিগুণ করা হবে। অর্থাৎ আগে তাঁকে এক রুপি করছাড় দেওয়া হলে এখন দেওয়া হবে দুই রুপি। সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো যেতেই পারে। কারণ, সরকার সবচেয়ে বেশি অর্থ শোষণ করছে এই শ্রেণির কাছ থেকেই। প্রতি লিটার জ্বালানিতে তাদের কাছ থেকে ২০ রুপি শুল্ক নেওয়া হচ্ছে, গুডস অ্যান্ড সার্ভিস ট্যাক্স (জিএসটি) হিসেবে একেবারে অযৌক্তিক শুল্ক নেওয়া হচ্ছে তাদের কাছ থেকে।

কিন্তু এসব নিয়ে গয়ালের বাগাড়ম্বর একেবারেই নিষ্প্রভ হয়ে যায়, যখন কর্মসংস্থানের প্রসঙ্গ সামনে চলে আসে। ভারতের বেকারত্ব সংকট হচ্ছে সেই হাতির মতো, যেটি ঘরে ঢুকে পড়ার পরও গেরস্ত তার চোখ বন্ধ করে হাতির উপস্থিতির কথা অস্বীকার করে চলে। এই বিজেপি সরকার ভারতকে বলা যায় ঠান্ডা মাথায় বেকারত্ব সংকটে ডুবিয়েছে। মোদির হঠকারী সিদ্ধান্তে রাতারাতি পাঁচ শ ও এক হাজার রুপির নোট তুলে নেওয়া, অযৌক্তিকভাবে জিএসটি আরোপ করা এবং ক্ষুদ্র অর্থনীতির আনাড়ি ব্যবস্থাপনা ভারতের লাখ লাখ লোককে বেকার করে দিয়েছে।

২০১৪ সালে মোদি নির্বাচনী প্রচারের সময় বছরে দুই কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু দেখা গেছে এখন ভারতে গত ৪৫ বছরের মধ্যে বেকারত্বের হার সর্বোচ্চ অবস্থানে। দেশটির ৬ দশমিক ১ শতাংশ লোক এখন বেকার। শহরাঞ্চলের ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী তরুণ ও যুবকদের ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ বেকার। আর এই অঞ্চলে নারীদের মধ্যে বেকার ২৭ দশমিক ২ শতাংশ। গত নির্বাচনে মোদি বেকারত্ব নিরসনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসে পরিস্থিতি আরও ভয়ানক অবস্থায় ঠেলে দিয়েছেন।

এই সব ব্যর্থতা ঢাকার জন্য মোদি এখন মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র শ্রেণিকে খুশি করতে চান। সে জন্য এই বাজেট। কিন্তু সামনের নির্বাচনে ভোটার এই বাজেটের মোহে থাকবেন কি না, তা দেখার বিষয়।

ইংরেজি থেকে অনূদিত। স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট

শশী থারুর ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী