Thank you for trying Sticky AMP!!

বাল্যবিবাহ রোধে সবচেয়ে কার্যকর উপায়

>

বিয়র্ন লোমবোর্গ

উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার কী হওয়া উচিত, তা চিহ্নিত করার লক্ষ্যে গবেষণা করছে কোপেনহেগেন কনসেনসাস সেন্টার। অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি সামাজিক, স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত উন্নয়নের ওপরও জোর দিচ্ছে সংস্থাটি। বাংলাদেশের জন্য ভিশন ২০২১ অর্জনে এই গবেষণাভিত্তিক কিছু নিবন্ধ প্রকাশ করছে প্রথমআলো। আজ প্রকাশ করা হলো ঊনবিংশতম নিবন্ধটি।

যদিও বাংলাদেশে বিয়ের আইনসম্মত বয়স ১৮ বছর, তারপরও দেশে বাল্যবিবাহের হার বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে দেখায় যে দেশে ২০-৪৯ বছর বয়সী প্রায় তিন-চতুর্থাংশ নারীর বয়স ১৮ বছর হওয়ার আগেই বিয়ে হয়। এদের মধ্যে অনেকের পরিবারই বরপক্ষকে যৌতুক দেওয়া এড়াতে তাদের তাড়াতাড়ি বিয়ে দেয়। অল্প বয়সী মেয়েদের ক্ষমতায়ন ও বাল্যবিবাহের ক্ষতিকর প্রভাব এড়াতে সর্বোত্তম কৌশলগুলো কী? ‘বাংলাদেশ প্রায়োরিটিজ’ প্রকল্প এই সমস্যাটির এবং আরও অনেক জাতীয় চ্যালেঞ্জের সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করছে। কোপেনহেগেন কনসেনসাস সেন্টার ও ব্র্যাকের মধ্যকার অংশীদারত্ব চুক্তির এই প্রকল্পটি বিস্তৃত পরিসরে এই অঞ্চলের উন্নয়ন সমস্যাগুলোর সর্বোত্তম সমাধান খুঁজে বের করতে দেশীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক বেশ কিছু শীর্ষ অর্থনীতিবিদকে নিযুক্ত করেছে।

ডিউক ইউনিভার্সিটি ও এমআইটির আবদুল লতিফ জামিল পভার্টি অ্যাকশন ল্যাবের অর্থনীতিবিদদের করা নতুন গবেষণায় বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ রোধ করার বিভিন্ন কৌশল অনুসন্ধান করে দেখা হয়েছে। এতে দেখা গেছে যে আর্থিক অনুদান প্রদান বিবাহ বিলম্বিতকরণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর। বাল্যবিবাহ দরিদ্র পরিবারগুলোতে বেশি প্রভাব ফেলে। বিশ্বব্যাপী ২০ শতাংশ অতিদরিদ্র মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়ার সম্ভাবনা ধনী ২০ শতাংশের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি বাল্যবিবাহের ঝুঁকিতে থাকা একটি দেশ। এ দেশের ১০-১৯ বছর বয়সী দেড় কোটিরও বেশি মেয়ে বাল্যবিবাহের ঝুঁকিতে রয়েছে।

বাংলাদেশের পরিবারগুলো প্রায়ই বাল্যবিবাহকে একটি জরুরি আর্থিক প্রয়োজন হিসেবে দেখে থাকে। এটা হয়তো বাল্যবিবাহ ও যৌতুক নিষিদ্ধ করা আইনগুলোর কোনো কার্যকারিতা বাংলাদেশে কেন নেই তা ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করবে। একইভাবে কমিউনিটি গ্রুপগুলো দ্বারা পরিচালিত কর্মসূচিগুলো বাংলাদেশে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। কমিউনিটি গ্রুপগুলো কিশোরীদের দৈনন্দিন জীবনের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদান করে যাচ্ছে। কাজেই বলা যায়, নারীর ক্ষমতায়নের ওপর গুরুত্ব দিয়ে গৃহীত কর্মসূচিগুলোতে ব্যয়িত প্রতি টাকা সম্ভবত এক টাকারও কম উপকার করবে।

ডিউক ইউনিভার্সিটি ও এমআইটির আবদুল লতিফ জামিল পভার্টি অ্যাকশন ল্যাবের অর্থনীতিবিদেরা বাংলাদেশের কাছ থেকে পাওয়া অন্য প্রস্তাবগুলো দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে ও আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলে পরীক্ষা করে দেখেছেন। সবচেয়ে আশাপ্রদ হলো বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে সেভ দ্য চিলড্রেন দ্বারা পরিচালিত একটি কর্মসূচি। ওই কর্মসূচিতে কিশোরী মেয়েদের বিয়ে বিলম্বিত করার জন্য মা-বাবাদের উৎসাহিত করতে একটি শর্তযুক্ত উপবৃত্তি চালু করে।

ওই কর্মসূচির আওতায় ২০০৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ১৫-১৭ বছর বয়সী অবিবাহিত মেয়েদের পিতা-মাতাকে রান্নার তেল দেওয়া হয়। প্রতি চার মাসে অংশগ্রহণকারীরা চার লিটার করে তেল পায়। শর্ত ছিল এই সময়ের মধ্যে তাঁরা তাঁদের কিশোরী মেয়েদের বিয়ে দেবেন না। এতে এক বছরের রান্নার তেল সরবরাহে প্রতিটি মেয়ের পেছনে খরচ হয় ১ হাজার ২৫০ টাকা। দেরি করে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার জন্য পরিবারগুলো যে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ত, এই তেল সরবরাহের মাধ্যমে তা কিছুটা পুষিয়ে দেওয়া হয়।

এভাবে আর্থিক প্রণোদনা বাল্যবিবাহ কমানোর ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। যেসব পরিবারে তেল সরবরাহ করা হয়েছিল, সেসব পরিবারের মেয়েদের ১৬ বছরের আগে বিয়ের সম্ভাবনা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গিয়েছিল এবং তাদের স্কুলে টিকে থাকার সম্ভাবনা ২২ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছিল। এ রকম শর্তাধীন হস্তান্তর কর্মসূচির পেছনে ব্যয়িত প্রতি টাকা প্রায় চার টাকার সামাজিক কল্যাণ সাধন করে। তবে বাল্যবিবাহই বাংলাদেশের একমাত্র সমস্যা নয়। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আহসান জামানের করা একটি নতুন গবেষণায় বাংলাদেশের আরও দুটি গভীর সমস্যার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে শিক্ষায় অভিগম্যতা ও পরিবার পরিকল্পনা।

মেয়েদের শিক্ষায় প্রবেশ করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বেশি শিক্ষা মানেই তাদের নিজস্ব কর্মজীবনে অধিক উৎপাদনশীলতা ও উপার্জন। এটি পরবর্তী সময়ে তাদের সন্তানদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। মানসম্মত শিক্ষা একজন মাকে স্বাস্থ্যসচেতন করে তোলে। গবেষণায় দেখা যায় যে এটি তার সন্তানদের উত্তম পুষ্টি পেতে সাহায্য করে। অপুষ্টির কারণে শিশুদের নানা রোগ হয় এবং মৃত্যুহার বাড়িয়ে দেয়। মেয়েদের আরও বেশি শিক্ষিত করতে ব্যয় করা প্রতি টাকায় তিন টাকার সামাজিক কল্যাণ সাধন করে।

দ্বিতীয় বিষয়টি হলো পরিবার পরিকল্পনা, যা দুই সন্তানের জন্মদানের মধ্যবর্তী সময়ের ব্যবধানকে বাড়ানোর মাধ্যমে মা ও শিশু উভয়ের জীবন রক্ষা করতে পারে। এটি মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া দীর্ঘ সময় স্কুলে থাকতে দেওয়ার মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। এক বছরের পরিবার পরিকল্পনা সেবায়, যা গর্ভধারণকে বিলম্বিত করে, মাত্র ৬৫৫ টাকা খরচ হয়। যা একটি মেয়ের জীবনে প্রায় অতিরিক্ত অর্ধেক বছরের শিক্ষাজীবন সংযোজন করতে পারে। যখন স্বাস্থ্য ও শিক্ষার সুবিধাগুলো একত্র করলে দেখা যায়, পরিবার পরিকল্পনায় করা ছোট ছোট বিনিয়োগ ব্যয় করা প্রতি টাকায় তিন টাকার সুবিধা প্রদান করে।

কিছু কৌশলী নীতি মেয়েদের বিয়ে বিলম্বিত ও জেন্ডার সমতার প্রচারে সাহায্য করতে পারে। বাংলাদেশের জন্য সর্বোচ্চ কল্যাণ সাধন করতে আপনি কোন খাতে সম্পদের ব্যবহার করতে চাইবেন? আমরা আপনার কাছ থেকে শুনতে চাই এখানে-<https://copenhagen. fbapp. io/genderequalitypriorities>। ব্যয় করা প্রতি টাকায় কীভাবে সর্বোচ্চ কল্যাণ সাধন করা যায়, তা নিয়ে আমরা আলোচনা চালিয়ে যেতে চাই।

. বিয়র্ন লোমবোর্গ: কোপেনহেগেন কনসেনসাস সেন্টারের প্রেসিডেন্ট টাইম ম্যাগাজিনের মূল্যায়নে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির একজন