Thank you for trying Sticky AMP!!

বোস্টনের বাঙালি গবেষকদের সান্নিধ্যে

নিউইয়র্কে ২৭ বছর ধরে প্রতিবছর বাংলা বইয়ের মেলা হয়। ২৮তম বইমেলা হবে চার দিনব্যাপী—১৪ থেকে ১৭ জুন জ্যাকসন হাইটস এলাকায়। ঢাকা থেকে কবি-লেখক-শিল্পীরা আসবেন, যোগ দেবেন মুক্তধারার এই বইমেলায়, কলকাতা থেকেও আসবেন। সেলিনা হোসেন, ফরিদুর রেজা সাগর থেকে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা—ঢাকার প্রিয় মানুষদের সঙ্গে নিউইয়র্কে দেখা হলে আলাদা একটা ভালো লাগা কাজ করে। যেমন উত্তর আমেরিকা, এমনকি ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে লেখক-শিল্পীরা আসেন, বেশ একটা লেখক-শিল্পী পুনর্মিলনী হয় এখানে। বইমেলায় যোগ দেব বলে চলে এসেছি আমেরিকায়। এই উইকেন্ডে নিউইয়র্কে। পরের শনি-রোববার যাব ওয়াশিংটন ডিসিতে, ওখানেও বসবে বাংলা বইয়ের মেলা। এই লেখা লিখছি বোস্টনে বসে।

বোস্টন তো আমেরিকার বিখ্যাত শিক্ষানগরী। হার্ভার্ড, এমআইটিসহ কত নামীদামি বিশ্ববিদ্যালয় এখানে। এই সব ভুবনবিখ্যাত প্রতিষ্ঠানে যে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা পড়েন, গবেষণা করেন, তাঁদের কজনের সঙ্গে দেখা হয়েছিল দিন দুই আগে বোস্টনের দারুল কাবার রেস্তোরাঁয়। ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক ও গবেষক ড. রুহুল আবিদ আর বোস্টনের বাঙালি কবি বদিউজ্জামান নাসিম তো ছিলেনই।

ধীমান রঞ্জন মণ্ডল এমআইটিতে পোস্টডক করছেন। তাঁর গবেষণার ক্ষেত্র ভূবিজ্ঞান। তাঁরা বাংলাদেশের ভূমিকম্প-শঙ্কা নিয়ে গবেষণা করেছেন। বাংলাদেশে একটি ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হলে কী মহাপ্রলয় ঘটে যাবে, এই নিয়ে কাজ করছেন তাঁরা। একটা বড়সড় ভূমিকম্প যেকোনো মুহূর্তে বাংলাদেশকে কাঁপিয়ে দিতে পারে, এই রকম শঙ্কা তাঁরা করছেন এবং তাঁদের দুর্ভাবনার আরেকটা বিষয়: ভূমিকম্প-পরবর্তী অগ্নিকাণ্ড। তিনি জানালেন, একবার তাঁদের গবেষণার ফল জানাতে তাঁরা বাংলাদেশের তৎকালীন দুর্যোগমন্ত্রীর সঙ্গে দেখাও করেছিলেন। বেশি পাত্তা পাননি। মন্ত্রী নাকি বলেছেন, মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত করে কী লাভ?

ধীমান রঞ্জন মণ্ডল এখন যার ওপরে জোর দিচ্ছেন তা আতঙ্ক নয়, সাবধানতা। তিনি বলছেন, আচ্ছা, সরকার একটা সামান্য উদ্যোগ কেন নেয় না? কেন সব ভবনে অগ্নিকাণ্ডের মহড়া করার নির্দেশ দেয় না? এটার জন্য তো কোনো বাজেট লাগবে না।

কথাটা কিন্তু সরকার কানে তুলতে পারে এবং একটা ছোট্ট পদক্ষেপ নিতে পারে। সরকারের জন্য এটা হবে ছোট্ট পদক্ষেপ, কিন্তু নাগরিকদের জন্য হবে একটা প্রাণরক্ষাকারী বড় উদ্যোগ। সরকার বলবে, সব ভবনে অগ্নিনির্বাপণ মহড়া করা বাধ্যতামূলক। এটা করতে হবে। করুন। সরকার নিজেদের ভবনগুলোয় মহড়া করবে। আমরা আমাদের ভবনগুলোয় করব। প্রথম আলো তার ভবনে অগ্নিনির্বাপণ মহড়া করেছে, জানতে পারলাম। এটা একবার করে ছেড়ে দিলে হয় না। নিয়মিত করতে হয়। আন্তর্জাতিক, বহুজাতিক এবং বিদেশি সংস্থাগুলো কিন্তু আমাদের দেশেও তাদের অফিসে-আদালতে মহড়া নিয়মিতই করে থাকে।

এরপরের প্রসঙ্গ আমিই তুললাম। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাস্ট্রোফিজিকসের গবেষক তানভীর করিমকে যেহেতু কাছে পেয়ে গেলাম। প্রথম প্রশ্ন, ব্ল্যাকহোলে তো আলোও শোষিত হয়। তাহলে তার ছবি উঠল কী করে? নিজেই জবাব দিলাম, তার চারপাশের আলোর মধ্যে ভেতরের অন্ধকারের ছবি আসলে ছিল ওটা। কত বছর আগে ঘটেছিল ঘটনাটা? তানভীর বললেন, ৫৫ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে। মানে সাড়ে পাঁচ কোটি বছর আগে ঘটেছে এই ঘটনা! এই সব কল্পনা করাও আমার পক্ষে দুঃসাধ্য। সেটা বাদ দিয়ে বরং বাস্তবের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন করা যায়। আচ্ছা আচ্ছা, চাঁদ দেখা কমিটি যে যন্ত্র কিনছে, সেই ব্যাপারটা কী?

হ্যাঁ। প্রথম আলোতেই খবরটা দেখেছি। এবার ঈদের আগের রাতে চাঁদ দেখা নিয়ে বেশ বিড়ম্বনা হয়েছে। চাঁদ দেখা কমিটি ঘোষণা দিল, দেশের কোথাও চাঁদ দেখা যায়নি। কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীর আমার বন্ধুরা ইনবক্সে লিখতে শুরু করলেন, ‘আমরা তো চাঁদ দেখেছি।’ তখনই আমি বুঝতে পারছিলাম, ফেসবুকের যুগে এই চাঁদ দেখার খবর ঠিকই পৌঁছে যাবে চাঁদ দেখা কমিটির কাছেও। কাজেই বেশি রাতে সিদ্ধান্ত বদলের খবর আসবে। এর আগেও একবার এই রকম হয়েছিল।

প্রথম আলো লিখেছে: চাঁদ দেখতে উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্র কিনবে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এবার ঈদুল ফিতরের আগে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় মন্ত্রণালয় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত ধর্ম মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।

জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি গত ২৯ রমজান প্রথমে ঘোষণা দেয়, ওই দিন দেশের কোথাও পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। ঈদ হবে ৬ জুন। কিন্তু তারাবিহর নামাজের পর রাত ১১টার দিকে আবার কমিটি ঘোষণা দেয়, চাঁদ দেখা গেছে, ঈদ হবে ৫ জুন। শেষ পর্যন্ত ৫ জুন বুধবার দেশে ঈদুল ফিতর উদ্‌যাপিত হয়।

বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে কমিটির একাধিক সদস্য এবারের ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা নিয়ে কেন এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সে প্রশ্ন তোলেন। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহর অনুপস্থিতিতে মন্ত্রণালয়ের সচিব আনিছুর রহমান বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন। তিনি কমিটিকে বলেন, ৪০-৪৫ জন আলেমের পরামর্শক্রমে সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রথমবার দেওয়া ঘোষণার আগে দেশের কোথাও চাঁদ দেখা যায়নি। তখন আলেম-ওলামারা মত দেন, সৌদি আরবে চাঁদ দেখা যাওয়ার সঙ্গে এ দেশের ঈদের সম্পর্ক নেই। দেশে চাঁদ দেখা যেতে হবে। এ কারণে প্রথম ঘোষণা আসে। পরবর্তী সময়ে ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তি চাঁদ দেখতে পেয়েছেন। এ কারণে চাঁদ দেখা যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।

বৈঠক সূত্র জানায়, চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে কেন আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার করা হবে না—সে প্রশ্নও বৈঠকে আসে। তখন ধর্মসচিব বৈঠকে জানান, চাঁদ দেখার জন্য থিওডোলাইট-জাতীয় যন্ত্র কেনা হবে। প্রতিটির দাম পড়বে ৫০ লাখ টাকার মতো।

থিওডোলাইট চাঁদ দেখার যন্ত্র নয়, এটা সার্ভে করার যন্ত্র। কৌণিক দূরত্ব মাপার যন্ত্র। এর দামও ৫০ লাখ টাকা নয়, ২০ হাজার টাকা থেকে ৪ লাখ টাকা। আর ঈদের চাঁদ খালি চোখেই দেখতে হয়। তা না হলে চাঁদ যে আকাশে ছিল, সেটা কিন্তু বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন আগেই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে রেখেছিল। আকাশে মেঘ থাকায় চাঁদ দেশের অনেক অঞ্চল থেকে দেখা সম্ভব হয়নি। এই সমস্যার সমাধান হতে পারে, চাঁদ দেখা কমিটির নম্বর প্রচার করে বলা, যিনি আগে চাঁদ দেখবেন, আমাদের জানাবেন। সত্য হলে প্রথম দশজনকে পুরস্কার দেওয়া হবে।

যা-ই হোক, ৫০ হাজার টাকার যন্ত্র কেন ৫০ লাখে কেনা হবে এবং যে যন্ত্র আদৌ কাজে লাগবে না, সেটা কেন কিনতে হবে—এই সব কথা উঠল আমাদের সেই আসরে এবং এসে গেল রূপপুরের বালিশ প্রসঙ্গ। উঠল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা বিষয়ে উদ্বেগ।

আমরা দারুল কাবাবের ফুচকা, মোগলাই পরোটা আর মসলা চা খেয়ে সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় নিলাম। এই আসরে অনেক নারী এসেছিলেন, যাঁরা গবেষণা করছেন, উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন হার্ভার্ডে এমআইটিতে। দেখে ভালো লাগল।

দীনা আল মাহবুবা আর মুরশিদ আলম গবেষক দম্পতি বললেন, আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি মিস করি বইমেলা। নিউইয়র্কের বইমেলায় চলে যাব গাড়ি চালিয়ে।

দেখা হবে তাহলে? বলে আমরা বিদায় নিলাম।

আনিসুল হক: প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক ও সাহিত্যিক