Thank you for trying Sticky AMP!!

ব্যবসা ও শিল্প বাঁচাতে প্রযুক্তিই সমাধান

কোভিড-১৯ প্যান্ডেমিক বা অতিমারির প্রাদুর্ভাব সারা বিশ্বে জনজীবন এবং শিল্পক্ষেত্রকে প্রায় গতিহীন করে দিয়েছে। বাংলাদেশেও দীর্ঘ সময় ধরে লকডাউনের নির্দেশ জারি করা হয়েছিল। তার ফলে অর্থনৈতিক কার্যকলাপ অনেকাংশে ব্যাহত হয়েছে।

এই অতিমারির প্রাদুর্ভাবে যখন সারা বিশ্ব স্তব্ধ হওয়ার উপক্রম, তখন দেশে–বিদেশে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবায় দিন–রাত পরিশ্রম করছেন। বিজ্ঞানী ও গবেষকেরাও এই রোগের টিকা এবং ওষুধ আবিষ্কারের জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।

কিন্তু টিকা ও ওষুধ আবিস্কার করলেই হবে না, মানবদেহে এটি প্রয়োগ করার আগে যথেষ্ট পরীক্ষা–নিরীক্ষা এবং ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রয়োজন রয়েছে। অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কার্যকলাপ তত দিন বন্ধ থাকলে জনজীবনে ও সামাজিক জীবনে গভীর সংকট নেমে আসতে পারে। সুতরাং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কর্তারা, সরকারি পদস্থ কর্তারা, অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক কর্তাদের সমবেতভাবে অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক কার্যকলাপে গতি আনার উপযোগী কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

তবে আশার কথা, দেশব্যাপী লকডাউনের মধ্যে প্রযুক্তিগত সহায়তা, বিশেষ করে যোগাযোগসংক্রান্ত প্রযুক্তির সহায়তা অনেক কাজকেই চালু রাখতে সাহায্য করেছে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা এবং যাঁরা ডেস্ক-জব করে থাকেন, তাঁদের অনেকেই বাড়ি থেকে তাঁদের দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন। যোগাযোগব্যবস্থার অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও কম্পিউটারের সাহায্যে তাঁরা এটা করতে পেরেছেন। বিভিন্ন সংস্থায় দলগত বৈঠক, আলোচনা ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে।

এই ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল পরিকাঠামো একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ শিল্পের নিয়ামক সংস্থা বিটিআরসির প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাসে দেশে ১০ কোটির বেশি ইন্টারনেট গ্রাহক ছিলেন। বিটিআরসির তথ্য থেকে আরও জানা যাচ্ছে যে গ্রাহকেরা অনেকেই উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু করেছেন। দেশব্যাপী ইন্টারনেট–সংযোগের এই প্রসারের ফলে সাধারণ কর্মীদের পক্ষে ডিজিটাল প্রযুক্তি গ্রহণ ও ব্যবহার করা অনেক সহজ হয়ে গেছে। আংশিকভাবে হলেও উৎপাদনশীলতা বজায় রাখা গেছে। টেলিযোগাযোগ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলোর ভূমিকা এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

তার পাশাপাশি অন্যান্য পরিকাঠামোগত প্রযুক্তি ও কর্মক্ষমতা উৎপাদনশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ক্লাউড প্রযুক্তির কথা বলা যেতে পারে। যেসব সংস্থা তাদের যোগাযোগব্যবস্থা ক্লাউডের মাধ্যমে করত, তারা লকডাউনের সময় ক্লাউডের সাহায্যে ভিডিও কল, ডকুমেন্ট শেয়ারিংয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলি চালিয়ে যেতে সমর্থ হয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠানে তাদের নিজস্ব ডেটা সেন্টারে এসব প্রযুক্তি বিদ্যমান ছিল, তারা ডেটা সেন্টার চালু রেখে ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে নিরবচ্ছিন্ন রাখতে পেরেছিল। আর যেসব প্রতিষ্ঠানে এসব প্রযুক্তি বিদ্যমান ছিল না, তারা ব্যবসায়িক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সাময়িক ব্যাঘাত বা অনিশ্চয়তায় পড়েছিল, তবে তারাও ক্লাউড প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে দ্রুত এই অনিশ্চয়তা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছিল।

একইভাবে যেসব সংস্থা তাদের ই–মেইল পরিকাঠামো ক্লাউডে গঠন করেছে, তারা লকডাউনের সময় কোনো রকম যোগাযোগজনিত অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হয়নি।

কোভিড-১৯ অতিমারিজনিত লকডাউনের ফলে ব্যবসায়িক কর্মধারারও অনেক পরিবর্তন হয়েছে। বাংলাদেশের ব্যবসায়িক কর্মধারায় চিঠি, নোটস বা মন্তব্য, ব্যবসায়িক চুক্তিনির্ভর লেনদেন, ইত্যাদি অনেক কিছুই কাগজনির্ভর। লকডাউনের ফলে কাগজনির্ভরতা কমে ইলেকট্রনিক মাধ্যম বা ই–মেইলের ব্যবহার অনেকটাই বেড়েছে। কর্মীরা ও সংস্থার কর্তারা এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে এসব কাজ করতে অনেকটাই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

অতিমারির প্রাদুর্ভাবের আগেই অনেক বাংলাদেশি সংস্থা তাদের কার্যক্ষেত্রে ডিজিটাল রূপান্তরের যাত্রা শুরু করেছিলেন। তাঁদের অনেকেই সাফল্যের সঙ্গে এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং (ইআরপি) এবং বিজনেস ইন্টেলিজেন্স (বিআই) সিস্টেমের ব্যবহার করা শুরু করেছেন। বিশেষভাবে যাঁদের সিস্টেমগুলো ক্লাউড পরিকাঠামোর ওপর নির্ভরশীল, তাঁরা লকডাউনের সময়ও সংস্থার বহুবিধ কার্যকলাপ সাফল্যের সঙ্গে চালিয়ে যেতে পেরেছেন।

এসব ঘটনাবলির মাধ্যমে ব্যবসা জগতে প্রযুক্তির প্রভাব ইতিমধ্যেই সার্বিকভাবে অনুধাবন করা গেছে। যেসব ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই প্রযুক্তির কল্যাণে লাভবান হয়েছে, তাদের এবার অতিমারি–পরবর্তী ডিজিটাল যাত্রার পরিকল্পনা করা উচিত। সদা পরিবর্তনশীল স্বাস্থ্যবিধি ও সুরক্ষাবিধি মেনে চলতে হলে অনেক ব্যবসায়িক সংস্থাকেই তাদের কর্মপদ্ধতির আমূল পুনর্বিন্যাস করতে হবে। কর্মীদের আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে আরও দক্ষ করে তুলে ডিজিটাল রূপান্তরের পরবর্তী ধাপে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

উদাহরণস্বরূপ, বিপণন এবং বিক্রয় কার্যের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের কথা বলা যেতে পারে। তাঁরা যেহেতু বেশির ভাগ সময় অফিসের বাইরে কাজ করেন, তাঁদের পক্ষে প্রতিদিন অফিসে এসে কাজের খতিয়ান পেশ করতে অনেক সময় ব্যয় হয়ে যায়। কম্পিউটারনির্ভর স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির মাধ্যমে সেই কাজে গতি আনা যেতে পারে। এমনকি স্মার্টফোনের মাধ্যমে এসব কার্যাবলি সম্পন্ন করার সুযোগ করে দিলে তাঁদের দৈনিক অফিসে আসার প্রয়োজনীয়তা অনেক কমে যাবে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা এই আধুনিক পদ্ধতির মাধ্যমে বিক্রয় ও বিপণন কর্মীদের কাজের পূর্ণাঙ্গ তথ্য আরও দ্রুত পেয়ে যাবেন। বাংলাদেশের বেশ কিছু অগ্রগামী প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই এ রকম পদ্ধতির সফল প্রয়োগে এগিয়ে গেছে।

কোভিড-১৯ অতিমারি বাংলাদেশে অনেক ব্যবসায়িক কার্যকলাপে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে। একই সঙ্গে অনেক নতুন সুযোগেরও সৃষ্টি করেছে। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো যদি প্রযুক্তির সহায়তায় এই নতুন সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারে, তাহলে ব্যবসাক্ষেত্রে নতুন গতি আসবে।

অরিজিৎ চক্রবর্ত্তী প্রাইসওয়াটারহাউস কুপার্সের একজন পার্টনার, মতামত তাঁর ব্যক্তিগত।