Thank you for trying Sticky AMP!!

ভারতের আত্মা দখলের লড়াই

ভারতে ভোটযুদ্ধের ডামাডোল বেজে উঠেছে। এই ভোটযুদ্ধের দিকে যাঁরা নজর রাখছেন, তাঁরা এর ব্যাপ্তি দেখে খেই হারাবেন না। এই নির্বাচনকে বলা হচ্ছে ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবপরিচালিত অনুষ্ঠান’।

১১ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে ভোট শেষ হবে ২৩ মে। ৯০ কোটি ভোটার (এঁদের মধ্যে দেড় কোটি লোক প্রথমবারের মতো ভোটার হয়েছেন) লোকসভার ৫৪৫টি আসনে অংশ নেওয়া পাঁচ শতাধিক রাজনৈতিক দলের প্রায় ১০ হাজার প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ করবেন। মোট সাত ধাপে ভোট গ্রহণ হবে। মে মাসের ২৩ তারিখের মধ্যে সব ভোট গণনা শেষ হয়ে যাবে।

উত্তর প্রদেশের (এখান থেকে ৮০ জন এমপি নির্বাচিত হবেন) মতো বড় রাজ্যগুলোতে সাতটি ধাপেই ভোট গ্রহণ হবে। অন্য রাজ্যগুলোতে ভোট নিতে এক দিনের বেশি লাগবে না। আমার সংসদীয় এলাকা হলো কেরালার রাজধানী থিরুভানানথাপুরাম। এখান থেকে তৃতীয়বারের মতো আমি নির্বাচনে দাঁড়াচ্ছি। এই এলাকায় ভোট হবে ২৩ এপ্রিল। এটি সবচেয়ে বড় ধাপ। এই ধাপে ১৪টি রাজ্যের ১১৪টি আসনে ভোট গ্রহণ হবে।

ভারতের নির্বাচন কমিশন (ইসিআই) নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ১০ লাখ ভোটকেন্দ্র বানাচ্ছে। সেখানে বুথের সংখ্যা থাকছে ২৩ লাখ ৩০ হাজার। এগুলো পরিচালনা ও দেখভালে ১ কোটি ১০ লাখ কর্মী থাকবেন, যাঁদের অনেককেই বিভিন্ন সরকারি সংস্থা থেকে নেওয়া হবে। তাঁরা বাসে, ট্রেনে, হাতিতে কিংবা উটে চড়ে ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করতে যাবেন। ইসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কোনো ভোটারকে ভোট দেওয়ার জন্য যাতে দুই কিলোমিটারের বেশি পথ পাড়ি দিতে না হয়, সে ব্যবস্থা করা হবে। গত নির্বাচনে পশ্চিম ভারতে মাত্র একজন ভোটারের ভোট গ্রহণের জন্য জঙ্গলের মধ্যে একটি কেন্দ্র বসানো হয়েছিল। এ ছাড়া সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫ হাজার ফুট ওপরে হিমালয়েও ভোটকেন্দ্র খোলা হয়েছিল। সেটিই ছিল পৃথিবীর উচ্চতম স্থানে বসানো ভোটকেন্দ্র।

এত ঢাকঢোল পিটিয়ে বিপুল পয়সা খরচ করে মহাসাড়ম্বরে ভোটের আয়োজন করা হচ্ছে, তা সত্ত্বেও ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি থাকবে কি না, তা নিয়ে উদ্বেগ রয়ে গেছে।

২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৯৫২ সাল থেকে ওই পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ভোট পড়ার রেকর্ড তৈরি হয়। তারপরও সে বছর ভোট পড়েছিল মাত্র ৬৬ দশমিক ৪ শতাংশ। আমি টুইটারে একটি অনানুষ্ঠানিক জরিপ চালিয়েছি। তাতে দেখছি, ১৫ হাজার উত্তরদাতার ৬৬ শতাংশ বলেছেন, তাঁরা রেজিস্টার্ড ভোটার এবং আসন্ন নির্বাচনে তাঁরা ভোট দিতে চান। তার মানে, এক-তৃতীয়াংশ ভোটার ভোটদান থেকে বিরত থাকবেন, দেশের ভাগ্য নির্ধারণে ভূমিকা রাখা থেকে নিজেদের তাঁরা সরিয়ে রাখবেন। এটি অবশ্যই উদ্বেগের বিষয়।

গত পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে ভারত সরকার একের পর এক ভুল নীতি গ্রহণ করে যাচ্ছে। পুরো সময়জুড়ে ফাঁকা বুলিসর্বস্ব কাজকর্মে সরকারকে ব্যস্ত থাকতে দেখা যাচ্ছে। ‘আচ্ছে দিন’ স্লোগান নিয়ে ক্ষমতাসীন বিজেপি বড় বড় কথা আউড়ে গেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, নরেন্দ্র মোদির সরকার সাধারণ মানুষের ন্যূনতম চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে জনগণ বাইরে যাওয়ার দরজা দেখিয়ে দিয়েছে।

দেশের বর্তমান অবস্থায় এই সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ বাড়ার যৌক্তিক কারণ রয়েছে। দেশজুড়ে কৃষকদের দুর্দশা বেড়েছে। কৃষকসহ শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে দারিদ্র্যজনিত কারণে আত্মহত্যার প্রবণতা অনেক গুণ বেড়ে গেছে। কৃষকদের মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় তাঁরা বিভিন্ন রাজ্যে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। বেকারত্ব ৪৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছেছে বলে যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল, তা সরকার ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে তোপের মুখে পড়েছে।

২০১৬ সালে মোদি সরকার ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল করায় বহু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গুডস অ্যান্ড সার্ভিস ট্যাক্স বাড়ানোর পর দরিদ্ররা ক্ষতির মুখে পড়েছে বেশি। এসব কারণে মোদি সরকার আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে এবং কৃষকদের ক্ষোভ প্রশমনে তাঁদের সহায়তা দেওয়া এবং কম উপার্জনকারীদের কর কমানোর কার্যক্রম রেখে তাদের সর্বশেষ বাজেট করেছে। কিন্তু সেই সহায়তা এত কম এবং এত দেরিতে দেওয়া হলো যে তাতে ক্ষোভ প্রশমিত হবে না।

বিষয়টি বুঝে বিজেপি এখন পুলওয়ামার সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানে বিমান হামলা চালানোকে পুঁজি করতে চাইছে। পাকিস্তানে হামলা চালিয়ে বিজেপি জনগণকে বোঝাতে চাইছে, জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে বিজেপি কাউকে ছাড় দেয় না। এ অবস্থায় ভোটারদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তাঁরা কি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিপূর্ণ একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ভারত চান, নাকি আতঙ্ক উদ্রেককারী একটি বিভক্ত ভারত চান?

ইংরেজি থেকে অনূদিত। স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
শশী থারুর: ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী