ভারত প্রমাণ করেছে রাশিয়াকে একঘরে করা সহজ নয়
ক্রেমলিন ভারতের মতো বড় শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক উন্নীত করতে আগ্রহী। কারণ, পশ্চিমের সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। ইউক্রেনের বিষয়ে নিজেদের অবস্থানের পক্ষে ভারতের সমর্থন পাওয়ার জন্য মার্চের শেষের দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও রাশিয়া দিল্লিতে প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছিল। পশ্চিমা দেশগুলো এবং রাশিয়া দিল্লিকে নিজের দলে টানতে তোড়জোড় চালালেও ভারত তার জোটনিরপেক্ষ অবস্থানে এখন পর্যন্ত অবিচল আছে এবং রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা করতে জাতিসংঘে আয়োজিত ভোটাভুটিতে ভোটদান করা থেকে বিরত রয়েছে।
মার্কিন উপ-জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা দলিপ সিং ৩০ থেকে ৩১ মার্চ নয়াদিল্লি সফর করেন। ওই সময় তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, রাশিয়ার ওপর আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে অকার্যকর করতে যেসব দেশ তৎপর হবে, অর্থাৎ রাশিয়ার সঙ্গে লেনদেন আগের মতোই চালিয়ে যাবে, তাদের খারাপ পরিণতি বরণ করতে হবে। তিনি আরও বলে গেছেন, রাশিয়া থেকে ভারত এ মুহূর্তে জ্বালানিসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি করতে চাইলে সেটিকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করবে না।
এর এক সপ্তাহ পরে ৬ এপ্রিল হোয়াইট হাউসের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের পরিচালক ব্রায়ান ডিজ ঘোষণা করেন, মস্কোর সঙ্গে ভারতের আরও ‘স্পষ্ট কৌশলগত যূথবদ্ধতা’র পরিণতি হবে ‘উল্লেখযোগ্য ও দীর্ঘমেয়াদি’।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন নিঃসন্দেহে আশাবাদী ছিল, ভারত রাশিয়ার নিন্দা করে ভোট দেবে এবং রাশিয়ার ওপর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা মেনে চলবে।
ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র এবং এই শতাব্দীর শুরু থেকে দেশটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান ইতিবাচক সম্পর্ক উপভোগ করে আসছে।
বাইডেন তাঁর প্রশাসনের উচ্চপদস্থ সদস্যদের মধ্যে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তিদের রেখেছেন এবং আমেরিকায় ভারতীয় সম্প্রদায়ের অবদানকেও বেশ জোরালোভাবে প্রচার করেছেন।
এ ছাড়া চার দেশের জোট কোয়াডের সদস্য হিসেবে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আয়োজন করা বার্ষিক সামরিক মহড়ায় যোগ দিয়ে থাকে। এ জোটে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অস্ট্রেলিয়া ও জাপান রয়েছে। চার দেশের অংশীদারিসম্পন্ন কোয়াডের আবির্ভাব ঘটেছিল ২০০০ সালের দিকে। দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় চীনের ক্রমবর্ধমান দাপটকে নিয়ন্ত্রিত রাখার লক্ষ্যে এর সদস্যরা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একসঙ্গে সামরিক মহড়া বাড়িয়েছে।
তবে রাশিয়ার নিন্দা জানাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরত থাকার সিদ্ধান্ত ভারতের ‘কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন’ বজায় রাখার প্রতি ভারতের অঙ্গীকারকে প্রতিফলিত করছে। এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব এস জয়শঙ্কর ভারতকে ‘আমেরিকার সংস্পর্শে থাকতে, চীনকে সামাল দিতে, ইউরোপকে কাজে লাগাতে, রাশিয়াকে আশ্বস্ত করতে এবং জাপানকে খেলায় নামাতে’ আহ্বান জানিয়েছেন।
কয়েক শতাব্দী ধরে পশ্চিমাদের সঙ্গে ভারতের সমস্যাযুক্ত ইতিহাস রয়েছে। ১৪৯৮ সালে ভাস্কো–দা–গামার ভারতবর্ষ আবিষ্কারের পর ইউরোপীয় শক্তিগুলো (উল্লেখযোগ্যভাবে পর্তুগিজ, ডাচ, ফরাসি ও ব্রিটিশ) প্রাথমিকভাবে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য করতে চেয়েছিল। এটি পরে সরাসরি ঔপনিবেশিকতায় গড়ায়।
ভারত ১৯৪৭ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। স্নায়ুযুদ্ধের সময় দেশটির সঙ্গে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমের সম্পর্ক জটিল ছিল। ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানের যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সমর্থনে সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল। এটি ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক অত্যন্ত তিক্ত পর্যায়ে চলে গিয়েছিল।
স্নায়ুযুদ্ধের সময় গড়ে ওঠা ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে তুলনামূলকভাবে ইতিবাচক ঐতিহাসিক সম্পর্ক এ সময় আরও গভীর হয়। ভারত জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বে থাকার পরও মস্কো এবং নয়াদিল্লির মধ্যে সম্পর্ক বিকাশ লাভ করে। ইন্দো-সোভিয়েত শান্তি, বন্ধুত্ব এবং সহযোগিতা চুক্তি ১৯৭১ সালের আগস্টে তাদের অংশীদারত্বকে আনুষ্ঠানিক রূপ দেয়।
১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ (মূলত পূর্ব পাকিস্তান-পশ্চিম পাকিস্তান) শুরু হলে বঙ্গোপসাগরে সোভিয়েত রাশিয়ার নৌবহরের উপস্থিতি ঘটায় যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহরকে থমকে দিয়েছিল। এই সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতকে অস্ত্রের চালান দিয়েছিল। ভারতের মহাকাশ কর্মসূচিতে সোভিয়েত ইউনিয়ন উল্লেখযোগ্য সহায়তা দিয়েছিল। ১৯৮৭ সালে সমন্বিত দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতা (ইন্টিগ্রেটেড লং টার্ম প্রোগ্রাম অব কো-অপারেশন, সংক্ষেপে আইএলটিপি) চুক্তির মাধ্যমে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতাকে আরও আনুষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়।
সোভিয়েত পতনের পরও একটি গঠনমূলক ভারতীয়-রুশ সম্পর্ক অটুট ছিল। এ অংশীদারত্বকে লালন করার জন্য মস্কোতে নতুন করে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল।
বিশ্বের বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক হিসেবে ভারত অস্ত্র প্রস্তুতকারকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার। রাশিয়া ভারতের শীর্ষ সরবরাহকারী হিসেবে রয়ে গেছে। একুশ শতকে ভারতের অর্থনীতি বেড়েছে। ভারতের নেতৃত্ব পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে তার ঐতিহ্যগত বিরোধ নিয়ে উদ্বিগ্ন থেকে গেছে। এ কারণে রাশিয়ার প্রতিও তাঁর নির্ভরতা রয়ে গেছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কিছুটা এগিয়েছে। কিন্তু তাই বলে যুক্তরাষ্ট্রের কথায় ভারত রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে, ততটা খারাপ সম্পর্ক এখনো মস্কো-দিল্লির মধ্যে হয়নি।
এশিয়ান টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত
● জন পি রুহেল ওয়াশিংটন ডিসিতে বসবাসকারী অস্ট্রেলিয়ান-আমেরিকান সাংবাদিক
আরও পড়ুন
-
স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ক্লাস বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের
-
প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ, সব প্রাথমিক বিদ্যালয় ২ মে পর্যন্ত বন্ধ
-
আগামীকালও ঢাকাসহ ২৭ জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করল শিক্ষা মন্ত্রণালয়
-
সামান্য রদবদলে নতুন টেলিযোগাযোগ আইনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন
-
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দ্বিতীয় পালা বন্ধ হচ্ছে, শাখা ক্যাম্পাস হবে আলাদা প্রতিষ্ঠান