Thank you for trying Sticky AMP!!

ভুল নীতি নিয়ে এগোচ্ছেন ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বছরের মে মাসে ‘ইরান চুক্তি’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া জয়েন্ট কম্প্রিহেন্সিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পরমাণু চুক্তির প্রধান ইরানি স্থপতি জাভেদ জারিফ তাঁর দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তি ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিটি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার এক বছর পর ইউনিভার্সিটি অব ম্যারিল্যান্ডের চালানো একটি জরিপে দেখা গেছে, ট্রাম্পের আদেশে সদ্য নিহত হওয়া রেভল্যুশনারি গার্ডের কমান্ডার জেনারেল কাশেম সোলাইমানির জনপ্রিয়তা জাভেদ জারিফকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

ট্রাম্প বলেছেন, ‘একটি যুদ্ধ বন্ধ করতেই’ তিনি সোলাইমানিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সোলাইমানি হত্যার আদেশ দিয়ে তিনি একটি যুদ্ধ বন্ধ নয় বরং নতুন একটি যুদ্ধের সূচনা করলেন। কোনো নেতাই তাঁর বিদেশনীতি শতভাগ কার্যকর হবে, তা প্রত্যাশা করতে পারেন না। কিন্তু তাঁরা যখন পররাষ্ট্রনীতির বিষয়ে কোনো কিছু প্রত্যাশা করবেন, তখন সেই প্রত্যাশাকে বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হতে হয়। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক বাস্তবতা মাথায় রেখেই তাঁরা পররাষ্ট্রনীতি ঠিক করেন। সেই মতো কাজ করে ফলের প্রত্যাশা করেন। কিন্তু প্রত্যাশাই যদি বাস্তবসম্মত না হয় তাহলে তার ফল বিপর্যয়কর হতে বাধ্য।

২০০৩ সালে জর্জ ডব্লিউ বুশের ইরাক আক্রমণের বেলায় এমনটি ঘটেছিল। এর পরিণতিতে লাখ লাখ ইরাকি মানুষ নিহত হয়েছিল। ট্রাম্প যেসব বিদেশনীতি অনুসরণ করছেন, বিশেষ করে ইরানের সঙ্গে যে আচরণ করছেন, তা মোটেও স্বাভাবিক বিদেশনীতির পর্যায়ে পড়ছে না।

ট্রাম্পের প্রথম ভুল ছিল ইরান চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করা। ইরান ওই চুক্তি লঙ্ঘন করেনি এবং চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী অন্য দেশগুলোও তাদের প্রতিশ্রুতি রেখেছে। কিন্তু ট্রাম্প তাঁর নিজের দেশের প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করে ইরানের কাছে আরও ছাড় চাইলেন, চুক্তি থেকে একতরফাভাবে বেরিয়ে এলেন এবং নিজের মিত্রদেরও চুক্তি থেকে বের হওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকলেন। ট্রাম্পের সােবক নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন এর আগে বলেছিলেন, ইরানের ওপর ‘সর্বোচ্চ চাপ’ দেওয়া হবে। এতে হয় ইরান যুক্তরাষ্ট্রের কথামতো সব শর্ত মেনে নেবে, নয়তো তাকে কঠিন অর্থনৈতিক সংকটে ফেলে দেওয়া হবে। দারিদ্র্যপীড়িত হয়ে ইরানের জনগণ সোলাইমানির মতো কট্টর জাতীয়তাবাদী নেতাদের উৎখাত করবে। জন বোল্টন ২০১৮ সালে ইরান থেকে পালিয়ে আসা কয়েকজন ভিন্নমতাবলম্বীকে বলেছিলেন, ২০১৯ সালের আগেই ইরানের সরকার পরিবর্তনকে তাঁরা ‘উদ্‌যাপন’ করতে পারবেন। অর্থাৎ তাঁরা ইরানের সরকার ফেলে দেওয়ার বিষয়ে আগে থেকেই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন।

কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন তখন আন্দাজ করতে পারেনি, নতুন অবরোধ আরোপ করার পর ইরান এত দ্রুত তার অর্থনৈতিক মন্দা অবস্থা কাটিয়ে ওঠার লক্ষণ প্রকাশ করতে পারবে। ২০১৯ সালের শেষ দুই–তৃতীয়াংশে দেশটিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ ৩.৩ শতাংশ বেড়েছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, ইরান সম্পর্কে ট্রাম্প যে ধারণা করেছিলেন, তা মোটেও খাটছে না।

নিউইয়র্ক টাইমস–এর গত বছরের একটি প্রতিবেদনে ইরানের ‘অফিশিয়াল সোর্স’ এর বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ইরানে ২০১৫ সালে ৪০ শতাংশ লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছিল। কিন্তু যে সূত্রের কথা তারা বলেছে এবং অনলাইন প্রতিবেদনটির যে হাইপার লিংক দেওয়া হয়েছে, তার কোথাও এটিকে ‘অফিশিয়াল রিপোর্ট’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি। উপরন্তু বিশ্বব্যাংকের উপাত্ত বলছে, ২০১৫ সালে এই হার ছিল ১১ শতাংশ, যা প্রতিবেশী দেশ তুরস্কের সমান।

খেয়াল করার বিষয় হলো, নিউইয়র্ক টাইমস–এ এই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছিল তখন, যখন ইরানে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বিক্ষোভ হচ্ছিল।

২০১৩ ও ২০১৭ সালে ইরানিরা উদারপন্থী জারিফ ও হাসান রুহানিকে ভোট দিয়েছিলেন, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরান একটা সমঝোতায় চলতে পারে। তারা চেয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতার মধ্য দিয়ে গেলে তাঁরা আর্থিকভাবে সচ্ছল হবেন। কিন্তু ট্রাম্প একতরফাভাবে চুক্তি থেকে বেরিয়ে এবং সর্বশেষ সোলাইমানিকে হত্যা করে সেই উদারপন্থীদেরও মার্কিনবিরোধী করে তুলেছেন। ইরানিদের কাছে তিনি এক নম্বর অঙ্গীকার ভঙ্গকারী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। এখন যদি ইরান পাল্টা ব্যবস্থা নেয় এবং এ অঞ্চলে সত্যিই নতুন কোনো যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়, তাহলে ট্রাম্প আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নৈতিক সমর্থন কতটুকু পাবেন, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে। 

ইংরেজি থেকে অনূদিত। স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট 

জাভেদ সালেহী ইস্পাহানি: ভার্জিনিয়া টেক-এর অর্থনীতির অধ্যাপক