Thank you for trying Sticky AMP!!

ভ্যাকসিন আবিষ্কারে সমন্বিত প্রচেষ্টা জরুরি

প্রতীকী ছবি। ছবি: রয়টার্স

১৯১৮-১৯ সালে কথিত স্প্যানিশ ফ্লুতে বিশ্বে পাঁচ কোটির বেশি লোক মরেছিল। সেই মহামারির পর কোভিড-১৯–এর মতো এত ভয়াবহতা নিয়ে আর কোনো মহামারি আসেনি। এই মহামারি মোকাবিলা করার জন্য বহু সরকার জনগণকে ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে, কোথাও কোথাও কঠোর লকডাউনের আদেশ দেওয়া হয়েছে। এতে বৈশ্বিক অর্থনীতি কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। কিন্তু নিজেদের ঘরের মধ্যে বন্দী করে রাখার মধ্যে সত্যিকারের সমাধান নেই। বিকল্প পন্থা, অর্থাৎ সৃজনশীলতার মধ্যেই আসল সমাধান।

এটি অবশ্যই ঠিক, ইতালি, স্পেন ও নিউইয়র্কের মতো পরিস্থিতি এড়াতে জনবিচ্ছিন্ন থাকা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা দরকার। মধ্যযুগে প্লেগের কবল থেকে এই জনবিচ্ছিন্নতা অগণিত মানুষের জীবন বাঁচিয়েছিল এবং স্প্যানিশ ফ্লু মহামারির সময়ও এই পদ্ধতি অবলম্বন করে অনেক মানুষ বেঁচে গিয়েছিল। আজও সেই পদ্ধতি সবচেয়ে কার্যকর।

চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুরে লকডাউনের মতো কঠোর পারস্পরিক জনবিচ্ছিন্নতা নিশ্চিত করে কোভিড-১৯–এর সংক্রমণকে রুখে দেওয়া গেছে। যেহেতু ভাইরাস সীমান্তরেখা চেনে না। সেহেতু বিশেষ করে যেসব দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা দুর্বল, সেসব দেশের ক্ষেত্রে লকডাউনের মতো পদক্ষেপ নেওয়াকে অগ্রাধিকার দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু লকডাউন চিরকাল চলতে পারে না এবং কোভিড-১৯ নিজ থেকে শিগগিরই বিদায় নেবে এমন কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না।

এ অবস্থায় এই বিশ্বের সামনে একটাই পথ খোলা আছে, সেটি হলো বিশ্বকে তার বৈজ্ঞানিক, সৃজনশীলতা এবং বাজার ব্যবস্থাপনা—এসবের সমন্বিত শক্তি প্রয়োগ করে স্থায়ী মুক্তি বা টিকা আবিষ্কার করতে হবে। নীতিনির্ধারকদের অবশ্যই মানতে হবে, বিজ্ঞান চিকিৎসাবিষয়ক উদ্ভাবন করে সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য, কেবল কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের মুনাফা নিশ্চিত করার জন্য নয়।

আমরা জানি কোভিড-১৯ নতুন কিন্তু করোনাভাইরাস নয়। কোভিড-১৯ ছাড়াও করোনাভাইরাস পরিবারে সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স) ও মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোমের (মার্স) মতো আরও ভাইরাস আছে। এগুলো অনেক আগে থেকেই আছে। এগুলোর ভ্যাকসিন তৈরির জন্য গবেষণাও চলেছে। এসব গবেষণা বারবার বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। যতগুলো কারণে বাধাগ্রস্ত হয়েছে, তার মধ্যে তহবিল সংকট একটি প্রধান কারণ।

২০১৬ সালে টেক্সাসের একদল বিজ্ঞানী সার্সের একটি সম্ভাব্য ভ্যাকসিন তৈরি করেছিলেন। কিন্তু সেই ভ্যাকসিন মানবদেহে পরীক্ষা করার জন্য অর্থাৎ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য যে তহবিল দরকার ছিল, তা তাঁরা জোগাড় করতে পারেননি। তাঁরা যদি সেই গবেষণা এত দিন চালিয়ে যেতে পারতেন, তাহলে কোভিড-১৯–এর ভ্যাকসিন গবেষণা অনেক সহজসাধ্য হতো।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সার্স বা মার্সের মতো ভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরির জন্য খুব কমই প্রণোদনা দেওয়া হয়। ভবিষ্যতের সম্ভাব্য হুমকি মোকাবিলায় এই তহবিল সংকট পরিষ্কারভাবেই বাজার ব্যর্থতাকে নির্দেশ করে। এমনকি কোভিড-১৯–এর ভ্যাকসিন গবেষণার ক্ষেত্রেও বাজার ব্যর্থতা দেখা যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে শুধু ওষুধ কোম্পানিগুলোকে গবেষণা করলে চলবে না। এর বাইরেও অন্যান্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে।

যেমন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে তাদের ক্লাউড কম্পিউটিং ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি এবং ডেটা সায়েন্টিস্টদের নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। ভাইরাল প্রোটিনের গঠনশৈলী সম্পর্কিত বিদ্যমান জ্ঞান ও তথ্য বিশ্লেষণ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একটি ভ্যাকসিনের সম্ভাব্য উপাদানের পরামর্শ দিতে পারে। প্রাসঙ্গিক রিসার্চ পেপার ও খসড়া উপাত্ত বিশ্লেষণ করে গবেষকদের সহায়তা করতে পারে। এটি ইতিমধ্যেই অনুসরণ করা হচ্ছে, তবে এর মাত্রা বাড়াতে হবে এবং সমন্বয়ের মধ্য দিয়ে এই প্রযুক্তি কাজে লাগাতে হবে।

ইন্ডাস্ট্রি, গবেষক ও সরকার—এই তিন পক্ষকে সমন্বিত পন্থায় কাজ করতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃত্বে একটি আন্তর্জাতিক টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে। সেই টাস্কফোর্স বিশ্বের সব গবেষকের গবেষণার হালনাগাদ সমন্বয় করবে।

ইংরেজি থেকে অনূদিত। স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট

ঝু মিন চীনের সিঙ্গুয়া ইউনিভার্সিটির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ফিন্যান্সিয়াল রিসার্চ বিভাগের চেয়ারম্যান এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাবেক উপব্যবস্থাপনা