Thank you for trying Sticky AMP!!

মুক্ত মানুষের মুক্ত সমাজের লড়াই

অক্টোবর বিপ্লব মানুষকে অনেক বড় স্বপ্ন দেখার ক্ষমতা ও সুযোগ দিয়েছিল। পৃথিবীর সব প্রান্তে সব রকম বৈষম্য ও নিপীড়নবিরোধী লড়াইয়ে এই বিপ্লব দিয়েছিল নতুন মানবিক সমাজের দিশা। এই বিপ্লবের শতবর্ষ পরে, সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের ২৬ বছর পরের বর্তমান বিশ্ব জাতিগত, ধর্মীয় ও আঞ্চলিক সংঘাত, ঘৃণা ও বিদ্বেষে জর্জরিত। মানুষ যেন অনেক ক্ষুদ্র, নিজের গণ্ডিতে বন্দী। জগৎ দেখছে যুদ্ধ, সন্ত্রাস আর মানুষবিদ্বেষী চরমপন্থার অবিরাম বিস্তার। দখল, লুণ্ঠনে, আগ্রাসনে আধিপত্যে, কিছুজনের অতিভোগে আর বহুজনের দুর্দশায় বিশ্ব এখন অস্তিত্বের সংকটে।

১৯১৭ সালের ২৫ অক্টোবর (নতুন হিসাবে ৭ নভেম্বর) রুশ দেশের বিপ্লবী পরিবর্তন ছিল প্যারি কমিউনের (১৮৭১) পর বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় মানুষের সচেতন সংগঠিত প্রচেষ্টা। ১৭৮৯ সালের ফরাসি বিপ্লবের পর এটাই বিশ্বকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছে, এখনো করছে। রাশিয়ায় প্রথমে রাজতন্ত্র উচ্ছেদ এবং পরে বিপ্লবমুখী ক্ষমতা পরিবর্তনের পর ক্রমে অনেকগুলো জাতি-রাজ্য, বিচ্ছিন্নতার অধিকারসহ, একত্র হয়ে সৃষ্টি হয়েছিল ‘ইউনিয়ন অব সোভিয়েত সোশ্যালিস্ট রিপাবলিক’ বা সোভিয়েত ইউনিয়ন। এই নতুন ইউনিয়ন গঠনের পর শুধু যে তা ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর সমাজ-অর্থনীতির মৌলিক পরিবর্তন নিশ্চিত করেছিল তা নয়, বহু দেশে মুক্তির লড়াই তাতে গতি ও দিশা পেয়েছিল।

মার্ক্স বিশ্লেষণ করেছিলেন পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় পুঁজি কীভাবে মানুষের জীবন, তার জগৎ, প্রাণ-প্রকৃতি, তার মেধা, মনন, শরীর এমনকি স্বপ্ন দখল করে, নিজের মতো করে মুচড়িয়ে নেয় বাজার ও মুনাফার উপযোগী করতে। দাসত্ব শৃঙ্খলকে মোহময় চাদর দিয়ে ঢেকে রাখে, মুনাফার দামামায় মানুষ হয়ে পড়ে তুচ্ছ। মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে মানুষ থেকে। মানবিকতা, সামষ্টিক বোধ ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে। মার্ক্স এই ব্যবস্থা অতিক্রম করে ব্যক্তি ও সমষ্টি মানুষের মুক্তির পথ ও লক্ষ্য হাজির করেছিলেন। বলেছিলেন মুক্ত মানুষের মুক্ত সমাজের কথা। সে অনুযায়ী অক্টোবর বিপ্লবের প্রতিশ্রুতি ছিল তা মানুষকে মানুষের কাছে ফিরিয়ে আনবে।

প্রথম পর্যায়েই সোভিয়েত ইউনিয়ন ও অন্যান্য সমাজতন্ত্রমুখী দেশে নীতিগত অবস্থানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ যেসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয় তার মধ্যে ছিল: সব নাগরিকের পূর্ণ কর্মসংস্থান, কাজ ও জীবনের নিরাপত্তা, সর্বজনীন চিকিৎসা সুবিধা, সবার জন্য নিশ্চিত আবাসন, নারীর ভোটাধিকার, গার্হস্থ্য শৃঙ্খল থেকে নারীর মুক্তির আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা, উচ্চশিক্ষাসহ শিক্ষার সকল পর্যায়ে নাগরিকদের প্রবেশাধিকারে রাষ্ট্রের দায়িত্ব গ্রহণ, বছরে সবেতন বিনোদন ছুটি, দীর্ঘ সবেতন মাতৃত্বকালীন ছুটি, রাষ্ট্রীয় খরচে শিশু যতন কেন্দ্র ইত্যাদি। এসব কর্মসূচির সাফল্যের কারণে পুঁজিবাদী কেন্দ্র দেশগুলোতেও এর পক্ষে প্রবল জনমত তৈরি হয়। বিশেষত ৩০-এর মহামন্দায় যখন ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বিপর্যস্ত, তখন সোভিয়েত ইউনিয়নে নিশ্চিত নিরাপদ স্বচ্ছন্দ জীবনের খবর পশ্চিমের মানুষের কাছ থেকে আড়াল করা সব সময় সম্ভব হয়নি। তাই ৩০ থেকে ৭০-এর দশক পর্যন্ত পশ্চিমা বিভিন্ন দেশে শ্রমিক আন্দোলন শক্তিশালী ছিল, কল্যাণমূলক বিবিধ কর্মসূচি গ্রহণ করতে রাষ্ট্র বাধ্য হয়েছিল।

সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠাকালে এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার বেশির ভাগ অঞ্চল ছিল উপনিবেশ বা প্রায় উপনিবেশ। রুশ বিপ্লব থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্ম এবং ক্রমে একটি সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের উদ্ভব এই পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থার পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে আবির্ভূত হয়। বিভিন্ন উপনিবেশ, আধা উপনিবেশসহ নিপীড়িত জাতিসমূহের মুক্তির সংগ্রামে তা হয়ে ওঠে বড় অনুপ্রেরণা ও ভরসাস্থল। এই শক্তি নিয়ে পৃথিবীর মানুষ বৈষম্য ও নিপীড়নের বহু জিঞ্জির ভেঙেছে।

আমরা নিয়ন্ত্রণমূলক, কর্তৃত্বপরায়ণ কোনো ব্যবস্থাকে সমাজতন্ত্র বলতে পারি না, সমাজতন্ত্রের ধারণার সঙ্গে এগুলো অসংগতিপূর্ণ। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন ক্রমে সেই পথেই গেছে, আমলাতান্ত্রিকতায় আড়ষ্ট হয়েছে, কর্তৃত্বমুখী ব্যবস্থার কারণে ব্যক্তিমালিকানার নতুন ধরন তৈরি হয়েছে, সমাজতান্ত্রিক কাঠামোর ভেতরেই নতুন মালিক ও শাসকশ্রেণির উদ্ভব হয়েছে। তা হয়েছে কমিউনিস্ট পার্টির কাঠামোর মধ্যে, পার্টির নেতৃত্বের শীর্ষ পর্যায়েই। বিপ্লব-উত্তর সমাজে যদি নতুনভাবে শ্রেণিস্বার্থের উদ্ভব ঘটে, যদি বৈষম্য সৃষ্টির ব্যবস্থা বাড়তে থাকে, যদি ব্যক্তিমালিকানার প্রতি ঝোঁক বাড়তে থাকে, যদি জনগণের ওপর রাষ্ট্রীয় বিধিব্যবস্থা উত্তরোত্তর শৃঙ্খল হিসেবে রূপ নিতে থাকে, তাহলে সমাজতন্ত্রের মূল চেতনাই ছিন্নভিন্ন হয়।
দুর্নীতি, বৈষম্য ও নিপীড়ন, যুদ্ধ-সমরাস্ত্রসহ ধ্বংস খাতের বিকাশ পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য, এগুলো ছাড়া পুঁজিবাদ টিকে থাকতে পারে না। কিন্তু এসব উপাদানের
সঙ্গে সমাজতন্ত্রের সন্ধি চলে না। সে কারণে সমাজতান্ত্রিক নির্মাণ হলেও যদি সেই সমাজে কোনো না কোনো কারণে বৈষম্য, নিপীড়ন বা দুর্নীতির প্রভাব বা উপস্থিতি বাড়তে বাড়তে
তা মূলধারাকে গ্রাস করে, তাহলে সেখানে পুঁজিবাদের অনুকূল ব্যবস্থার বিকাশ ঘটতে বাধ্য। সোভিয়েত ইউনিয়নে সেটাই হয়েছে।

কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটল? তবে কি পুঁজিবাদই মানব ইতিহাসের শেষ পর্যায়? তবে কি বৈষম্য, নিপীড়ন আর বর্বরতাই মানুষের জন্য স্বাভাবিক নিয়ম বা প্রাকৃতিক বিধি? আরও প্রশ্ন উঠতে পারে যে বৈষয়িক উন্নতির জন্য যদি সমাজতন্ত্রও পরিবেশবিনাশী প্রবৃদ্ধির পথ গ্রহণ করে, তাহলে তার পার্থক্য কী থাকে? প্রশ্ন ওঠে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন কি পুঁজিবাদকে অপ্রতিরোধ্য অনিবার্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেনি?

এখানে সংক্ষেপে শুধু এটুকু বলা যায় যে প্রথমত, পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ দ্বারা ঘেরাও হয়ে থেকে একটি দেশে পাল্টা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে নেওয়া কঠিন। তাতে তার অন্তর্গত ক্ষমতার যথাযথ বিকাশও প্রয়োগ সম্ভব হয় না। সাম্রাজ্যবাদীদের প্রত্যক্ষ আক্রমণ এবং পরে অবিরাম অন্তর্ঘাত, হিটলার জার্মানির সর্বাত্মক আক্রমণ ও ধ্বংসযজ্ঞ, পরে মার্কিন পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি, সমুদ্র ও মহাকাশ নিয়ন্ত্রণে রাখায় সাম্রাজ্যবাদীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা, বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন মোকাবিলা ইত্যাদির মধ্য দিয়ে গেছে সোভিয়েত ইউনিয়ন। এই মোকাবিলা করতে গিয়ে অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রেও অনেক রকম পরিবর্তন আনা হয়েছে, আনার বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়েছে। এর সবগুলো সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ ছিল না। অব্যাহত সামরিকীকরণ, সামরিক খাতে ব্যয় বৃদ্ধি, গোয়েন্দা সংস্থার সম্প্রসারণ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। তা ছাড়া, সাম্রাজ্যবাদী অর্থনীতির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে যেকোনো মূল্যে উৎপাদন বৃদ্ধির নীতি গ্রহণ করা হয়েছে, কিন্তু এসব উদ্যোগ ক্ষুদ্র কর্তৃত্ববাদী গোষ্ঠী তৈরি করেছে, বৈষম্য বেড়েছে, প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ আক্রান্ত হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, সমাজতন্ত্র কখনো জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছাড়া বিকশিত হতে পারে না। মানুষ যদি রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, রাষ্ট্র যদি কর্তৃত্বমুখী হয়, সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র দিয়ে যদি পার্টি ও রাষ্ট্র পরিচালিত হয়, তাহলে সেখানে সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধ শক্তির বিকাশ ঘটতে বাধ্য। পার্টি ও সমাজে যথাযথ মতাদর্শিক ও সাংস্কৃতিক লড়াই দুর্বল হয়ে যাওয়ায় সোভিয়েত ইউনিয়নে তা-ই হয়েছে।

তৃতীয়ত, বৈষম্য, নিপীড়ন ও শ্রেণিস্বার্থভিত্তিক ব্যবস্থা থেকে মুক্তির লড়াই মানুষের দীর্ঘকালের। বিভিন্ন পর্বে এর সুদূরপ্রসারী সাফল্যও আছে। আবার আছে পশ্চাদপসরণও। এই যাত্রা সরলরৈখিক নয়, এর অনেক আঁকাবাঁকা পথ আছে। মানুষের ইতিহাসে কোনো নতুন ব্যবস্থা এমনকি সামন্তবাদ থেকে পুঁজিবাদে উত্তরণেও বারবার পশ্চাদপসরণ দেখা গেছে। ফরাসি বিপ্লবের পরও বিপ্লবীরা টিকতে পারেননি, আবারও রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কয়েক শ বছরের ওঠানামার পরই কেবল প্রাক্–‌পুঁজিবাদী নানা ব্যবস্থার ওপর পুঁজিবাদ নিজের বিজয় নিশ্চিত করতে পেরেছে। সেই তুলনায় সমাজতন্ত্র নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা অল্প দিনের। প্রথম চেষ্টায় প্যারি কমিউন টিকে ছিল ৭২ দিন, পরেরটি সোভিয়েত ইউনিয়ন টিকেছে ৭২ বছর।
পুঁজিবাদ অন্তর্গতভাবে দখলদারি ব্যবস্থা। শুধু মানুষ নয়, প্রাণ-প্রকৃতির সবকিছুই তার মালিকানা ও মুনাফার লক্ষ্য। এই লক্ষ্য পূরণ করতে গিয়ে পুঁজিবাদ যত বিকশিত হয়েছে, বিশ্বের অস্তিত্ব তত বিপন্ন হয়েছে। কিন্তু সমাজতন্ত্র সর্বজনের মালিকানা ও কর্তৃত্বের ধারণার ওপর দাঁড়ায়। সর্বজনের নদী, বাতাস, বন, পাহাড়, প্রাণ-পরিবেশ দখল বা বিনাশ তাই তার প্রকৃতিবিরুদ্ধ। যদি সমাজতন্ত্র নামাবলি গায়ে দিয়ে কোনো ব্যবস্থা পুঁজিবাদের মতো মানুষ ও প্রকৃতি দখল করার দিকে যায়, তাহলে তাকে পুঁজির কাছেই আত্মসমর্পণ করতে হয়। সমাজতন্ত্রের বিকাশে মানুষের অংশগ্রহণ ও কর্তৃত্ব দুর্বল হয়ে গেলেই এই অবস্থা হতে পারে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনে তা-ই হয়েছে।

বিশ্বজুড়ে মানুষের মুক্তির লড়াইয়ে অক্টোবর বিপ্লব শুরুও নয়, শেষও নয়। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনে, চীনের পরিবর্তনে পন্থীবাজি রাজনীতির অবসান হয়েছে। মানুষের লক্ষ্য ও ভবিষ্যৎ হিসেবে কিংবা সমাজতন্ত্রের মডেল হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়ন বা চীনের নাম বলে আর কথা শেষ করা যাবে না। কারণ, সেই সোভিয়েত ইউনিয়ন তো নেই-ই, খোলস থাকলেও সেই চীনও আর টিকে নেই।

চীন বর্তমানে যে পথ ধরেছে, তা সংকটজীর্ণ দিশাহারা পুঁজিবাদী বিশ্বের নতুন ভরসা। ২০০৭-০৮ সালের বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকটের সময় ইকোনমিস্ট ঠিকই বলেছিল, ‘আগে আমরা বলতাম কেবল পুঁজিবাদই চীনকে বাঁচাতে পারে, এখন আমাদের বলতে হবে যে কেবল চীনই পুঁজিবাদকে বাঁচাতে পারে।’ সোভিয়েত-উত্তর রাশিয়া, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারতের শাসকগোষ্ঠী এখন দেশে দেশে ঐক্য ও সংঘাতের মধ্যে দিয়ে আধিপত্য বিস্তারে হিংস্র ভূমিকায় লিপ্ত। তাদের আগ্রাসী বাণিজ্যিক ভূমিকা আর দেশি মদদ বাংলাদেশকেও বিশ্ব আবর্জনার স্তূপে পরিণত করছে। রোহিঙ্গা গণহত্যা ও বিতাড়নের পেছনেও এদের নানা মাত্রায় ভূমিকা আছে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে পুরোনো কাঠামোবদ্ধ ও নিশ্চিত উত্তরমালা নিয়ে তাই আর অগ্রসর হওয়া যাবে না। নিজেদের বিশ্লেষণের সক্ষমতা দরকার হবে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের সাফল্য ও ব্যর্থতা, অগ্রসরতা ও পশ্চাদপসরণ, জনগণের জীবনমান ও নিরাপত্তা, পার্টির বিপ্লবী ভূমিকা ও অধঃপতন, শক্তি ও দুর্বলতা—সবকিছুই এখন মানুষের অভিজ্ঞতার অংশ। সমাজতন্ত্র নামের মানবিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার একটি পর্ব শেষ হয়েছে, কিন্তু মানুষের অনুসন্ধান, চেষ্টা ও লড়াই শেষ হয়নি। সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ-দানবের বিরুদ্ধে লড়াই, প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষার লড়াই, শ্রেণি-লিঙ্গ-জাতি-ধর্মীয় বৈষম্য ও নিপীড়নবিরোধী লড়াই বাংলাদেশে, দুনিয়াজুড়ে চলছে অবিরাম। প্রতিমুহূর্তে মানুষের চিন্তা ও সক্রিয়তায়, লড়াইয়ে নতুন শক্তি যোগ হচ্ছে। এর মধ্য দিয়েই ভবিষ্যৎ মুক্ত মানুষের মুক্ত সমাজের জমিন তৈরি হচ্ছে, এই পথে যাত্রার পদরেখা অঙ্কিত হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতি আপাতদৃষ্টিতে খুব জটিল, আবার একই সঙ্গে বিপুল সম্ভাবনায় পূর্ণ। বস্তুত খুবই সৃজনশীল সময় এখন।

 আনু মুহাম্মদ: অর্থনীতিবিদ ও অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
anu@juniv.edu