Thank you for trying Sticky AMP!!

মেধাস্বত্ব সুরক্ষায় চাই সচেতনতা

বাংলাদেশ—বিশ্বে যার পরিচিতি অনেক সম্ভাবনার এক দেশ হিসেবে। ১৬ কোটি মানুষের এই দেশে মেধাবী এবং তারুণ্যে উদ্দীপ্ত মানুষের দেখা পাওয়া যায় প্রায়ই। এই দেশের অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এমন অনেক মেধাবী মানুষের দেখা পাওয়া যায়, যাঁরা অসাধারণ গুণ দিয়ে বিশ্বের দরবারে নিজেদের এবং বাংলাদেশকে তুলে ধরতে সক্ষম। কিন্তু এত মেধাবী এবং তারুণ্যনির্ভর জাতি হয়েও আমরা মেধাস্বত্বের সঠিক চর্চা করতে না পেরে পিছিয়ে আছি।

এ দেশে অনেকেই নিজেদের গুণ দিয়ে বিশ্বকে বিমোহিত করছেন কিন্তু নিজেদের অধিকার সম্পর্কে ধারণা একদমই সামান্য। তাঁদের মেধাস্বত্বের প্রাপ্য মর্যাদা না পাওয়ায় অকালেই অনেকে হারিয়ে যাচ্ছেন, অথবা অনেকেই উন্নত জীবনের তাগিদে নিজেদের মেধার পূর্ণ প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। তাঁদের মেধাকে কিছু স্বার্থান্বেষী মহল নিজেদের সুবিধামতো ব্যবহার করে তাঁদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। তাঁদের মেধাস্বত্বের পূর্ণ মূল্যায়ন সম্ভব ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটসের একটি অংশ কপিরাইট আইনের মাধ্যমে। এই কপিরাইট আইনের প্রয়োগের মাধ্যমেই প্রত্যেকের অধিকার সম্পূর্ণভাবে রক্ষা করা সম্ভব।

কপিরাইট দ্বারা মেধাসম্পদের ওপর প্রণেতার নৈতিক ও আর্থিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে ওই মেধাসম্পদ বিভিন্ন পন্থায় পুনরুৎপাদন, বিক্রয়, বাজারজাতকরণ, লাইসেন্স প্রদান এবং জনসমক্ষে প্রদর্শনীর ক্ষেত্রে প্রণেতা বা সৃজনশীল ব্যক্তি একচ্ছত্র অধিকার লাভ করেন। মেধাসম্পদের আইনগত স্বীকৃতি প্রদান, উত্তরাধিকারসূত্রে মালিকানা নিশ্চিতকরণ এবং এই আধুনিক যুগে পাইরেসি, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কপিরাইট সংরক্ষণ, রয়্যালটি আদায় এবং ব্রডকাস্টিং অর্গানাইজেশন থেকে ট্রান্সমিশন এবং রিট্রান্সমিশন সঠিকভাবে নিশ্চিতকরণে অতিগুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

মেধাস্বত্ব সুরক্ষায় সবার সচেতনতা দরকার। সৃজনশীল শিল্পসত্তার আজীবন মূল্যায়ন, রয়্যালটি সংগ্রহ ইত্যাদি করে থাকে কপিরাইট। বাংলাদেশে সঠিকভাবে কপিরাইটের সদ্ব্যবহার করতে পারলে তা দেশের বাণিজ্যিক বৃদ্ধি ও সরকারি রাজস্ব আহরণের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। রয়্যালটি আদায়ের ক্ষেত্রে সিএমও-ই প্রধান ভূমিকা পালন করে, যা সারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে একই ভাবে পরিচালিত হয়। সিএমওর প্রধান কাজ হচ্ছে কপিরাইট হোল্ডারদের লাইসেন্সিংয়ের মাধ্যমে রয়্যালটি আদায় করা এবং তাদের মধ্যে রয়্যালটি বিতরণ করা। দেশে সৃজনশীল কাজগুলোর কপিরাইট বা মেধাস্বত্ব সংরক্ষণে তরুণদের ভূমিকা বেড়েছে। সৃজনশীল কাজের উদ্ভাবক ও ব্যবহারকারীদের মধ্যে তরুণের সংখ্যাই এখন বেশি।

আজ ২৩ এপ্রিল ‘বিশ্ব কপিরাইট দিবস’। আর এই দিবস সামনে রেখে বাংলাদেশে কিছু কার্যক্রম থাকলেও এ ব্যাপারে সচেতনতা আরও ব্যাপকভাবে হওয়া উচিত। সৃজনশীলতা সব মানুষের মধ্যেই আছে। কেউ তা ব্যবহার করেন, কেউ করেন না। যাঁরা সৃজনশীলতাকে ভালো কাজে ব্যবহার করেন, তাঁরাই এগিয়ে যান। কপিরাইট আইন সম্পর্কে সচেতনতা নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি। যাঁরা সৃজনশীল কাজের সঙ্গে জড়িত, তাঁরা সবাই এ আইনের অংশীজন। আমাদের অর্জিত মেধাসম্পদ অন্য কেউ দাবি করলে আমরা সাধারণত আইনগত ব্যবস্থা নিতে চাই না। আমাদের এ মনোবৃত্তি পরিহার করতে হবে। মেধাসম্পদ সংরক্ষণ করার জন্য আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

সমগ্র বিশ্বে সমালোচনার বিষয় এখন ডিজিটাল মিডিয়া এবং ব্রডকাস্টিং অর্গানাইজেশন। কপিরাইট সুরক্ষিত কনটেন্ট ব্যবহার করার জন্য প্রতিটি কপিরাইট স্বত্বাধিকারীর (লেখক, নিউজ পাবলিশার্স, গীতিকার, সুরকার, প্রোডিউসার, আরও অনেকেই) অনুমতি এবং লাইসেন্সিংয়ের চর্চা সিএমওর মাধ্যমে কার্যকরকরণ কপিরাইট স্বত্বাধিকারীদের জন্য ব্যাপক সুবিধা করে তুলছে। কিন্তু প্রতিটি কপিরাইট কর্মক্ষেত্রে একটি করে সিএমও কাজ করে থাকেন, যার মনিটরিং করে থাকে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

কপিরাইট রেজিস্ট্রেশনের আওতার মধ্যে যে বিষয়গুলো রয়েছে, সেগুলো হচ্ছে; সাহিত্য, কম্পিউটার সফটওয়্যার, মোবাইল অ্যাপস, কম্পিউটার গেম, সংগীত, রেকর্ড (অডিও-ভিডিও), ই-মেইল, ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়া, বেতার ও টেলিভিশন সম্প্রচার, চলচ্চিত্র, নাটক, স্থাপত্য
নকশা, কার্টুন, চার্ট, ফটোগ্রাফ, বিজ্ঞাপন (ভিডিও, অডিও, পোস্টার, বিলবোর্ডসহ অন্যান্য), স্লোগান, থিম সং, ফেসবুক ফ্যানপেজ এবং বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্মসহ অন্যান্য।

ব্যারিস্টার ওলোরা আফরিন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের লাইসেন্সপ্রাপ্ত কালেকটিভ ম্যানেজমেন্ট অর্গানাইজেশনের (সিএমও) মেধাস্বত্ব আইন বিশেষজ্ঞ